সংগ্রাম ডেস্ক: দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া একসময় নির্বাচনী প্রচারণায় নামতেন ‘দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও’ শ্লোগান দিয়ে। হাজার হাজার মাইল পথ ভ্রমণ করে তিনি জনগণকে বোঝাতে চাইতেন, আওয়ামী লীগকে ভোট দিলে দেশ বিক্রি হয়ে যাবে। বাংলাদেশের মানুষ তাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হারাবে। অনেকেই তখন অবাক হয়ে ভাবতো, দেশ আবার বিক্রি হয় কীভাবে? নির্বাচনের পরে ক্ষমতায় এলে আওয়ামী লীগের পান্ডারা মুখ ভেংচাতো, ‘কই দেশতো বিক্রি হতে দেখছি না। মসজিদেওতো উলুধ্বনি শুনছি না।’ আওয়ামীপন্থী দুর্গন্ধময় বুদ্ধিজীবী, সংস্কৃতিকর্মী, শিক্ষাবিদ ও শোবিজ তারকারা বিজ্ঞের হাসি হাসতে হাসতে মত দেয়, খালেদা জিয়ার এসব স্ট্যান্টবাজি ভোটাররা আর খায় না।
মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা গত প্রায় ১১ বছর ধরে একটানা দেশ শাসন করছেন। মসজিদের মাইকে এসময়ে উলুধ্বনি শোনা গেছে কিনা জানি না, তবে কাঁসার ঝনঝনানিতে নামাজের ব্যাঘাত ঘটার বিস্তর অভিযোগ আছে। চট্টগ্রামে এ নিয়ে মন্দিরের ভক্তদের সাথে মুসল্লিদের সংঘর্ষও হয়েছে এবং যথারীতি পুলিশ মুসলিমদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে গেছে। মসজিদে উলুধ্বনি হয়তো শুরু হয়নি, কিন্তু শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার ছবিসম্বলিত ব্যানার পেছনে রেখে দেশে মিলাদ পড়ার রেওয়াজ চালু হয়েছে।
হাসিনা তার এ মেয়াদে প্রথমবারের মতো ভারত সফর করছেন। প্রতিবেশী দেশটির সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে ভালো রয়েছে বলে তিনি দাবী করেছেন। তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিছুদিন আগে আওয়াজ দিয়েছিলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রী’র মতো। দাবীটা সত্য বলে আমি মনে করি। তবে বেআক্কেল একে আবদুল মোমেন বলেনি, দুয়ের মধ্যে কে স্বামী আর কে স্ত্রী। আমরা ধরে নিতে পারি, মোদির ভারত স্বামী আর হাসিনার বাংলাদেশ স্ত্রী। কাকতালীয়ভাবে, দুদেশের সরকার প্রধানের লিঙ্গ বিবেচনাতেও বিষয়টি এমনই দাঁড়ায়।
বাড়তি আরেকটু কথা না বললে স্বামী-স্ত্রী’র সম্পর্কটি অপূর্ণ থেকে যাবে। আমার মতে, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ ভারতের বিয়ে করা স্ত্রী নয়, হাঙ্গা করা বউ। হাঙ্গা বসা বউদের কোন জাত থাকে না। তাদেরকে যেভাবে খুশি সেভাবে ব্যবহার করা যায়, যখন খুশি তখন কাপড় খোলা যায়। হাঙ্গার বাইরেও স্ত্রীজাতীয় কিছু চরিত্র আছে, যেমন রক্ষিতা। রাজারাজড়াদের আমলে হেরেমখানায় এরকম অসংখ্য হাঙ্গাওয়ালী ও রক্ষিতা থাকতো। রাজামশাই যখন খুশি তখন এদের এক একজনকে ভোগ করতেন। কিন্তু রাণী বা সম্রাজ্ঞীর মর্যাদা পেতেন একজনই যার সাথে চুক্তিমাফিক মোহরানার বিনিময়ে বিয়ে হতো। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, নূরজাহানের মতো সম্রাজ্ঞীরা শাসনকার্যেও অংশ নিতেন। রাজরাণীদের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া সন্তানরা রাজপুত্র, রাজকন্যার টাইটেল লাভ করতো। তাদের জীবন হতো আয়েশী, বিলাসবহুল। অন্যদিকে, রক্ষিতাদের পেট থেকে যারা বের হতো তাদের কোন জন্ম পরিচয় থাকতো না। কিংবদন্তী কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের অয়োময় নাটকের পাখাল চরিত্রের কথা অনেক পাঠকেরই মনে থাকবে। পাখাল জমিদারেরই সন্তান ছিলো, কিন্তু এমনটি দাবী করার কারণে তাকে নির্মম নির্যাতনের শিকার হতে হয়। কারণ, সে ছিলো দাসীর গর্ভের সন্তান।
বলছিলাম, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ ভারতের বিয়ে করা স্ত্রী নয়, হাঙ্গা করা বউ অথবা রক্ষিতা। হাসিনা নিজের মুখে দাবী করেছেন, ভারতকে এ পর্যন্ত তিনি যা দিয়েছেন, ভারত কোনদিনই ভুলতে পারবে না। ট্রানজিট দেওয়ার পর খাজনার দাবী উঠলে হাঙ্গা বসা বউয়ের পাখাল মশিউর রহমান বলেছিলো, ভারতের কাছে শুল্ক চাইতে তার শরম লাগে। মনে পড়ে, ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাকের চলাচলের জন্যে বহমান তিতাস নদীতে বাঁধ দিয়েছিলো হাঙ্গা বসা বউ? বাংলাদেশের গণতন্ত্র, অর্থনীতি,আইন-আদালতকে নিয়ে যেভাবে খেলছেন স্বামীজী, তাতে দেশ বিক্রি হয়েছে কিনা পাঠকরাই বিবেচনা করুন। বাকি ছিলো মৃত্যুর পর শেষকৃত্যের, এবার তাও সম্পন্ন হয়েছে।
ভাতারকে খুশি করতে রক্ষিতা গেছেন বড় বাড়িতে। যাওয়ার পর যেভাবে সব ঢেলে দিয়েছেন, চিন্তা করলেও গা শিউরে উঠে। মূলত আমাদের ভূখন্ডে প্রবাহিত একটি নদীর নাম ফেনী নদী। সেটি থেকে ভারত পানি তুলতে পারবে মর্মে চুক্তি হয়েছে; ফেনী নদীর পানি যাবে ত্রিপুরার সাব্রুম শহরে। অথচ তিস্তা নিয়ে টু শব্দটি পর্যন্ত হলো না। গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা নিয়ে কোন কথা নেই। ৫০০ টন ইলিশ বরাদ্দ হয়েছে ভাতারের পূজার জন্যে, বিনিময়ে ফারাক্কার সবকটি গেট খুলে দিয়ে বাংলাদেশকে ডুবিয়ে দিয়েছে ভারত। হাঙ্গা বসা বউয়ের পানিসম্পদমন্ত্রী বলেছে এটাই নাকি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া! গর্দভটা কিন্তু একবারও বলেনি, ফারাক্কা বাঁধ নির্মিতই হয়েছে আন্তর্জাতিক আইন লংঘন করে। একাধিক দেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত নদীর পানি উজানের দেশ একতরফাভাবে প্রত্যাহার করতে পারে না। ভারত সেটাই করেছে।
বিবিসি বাংলার সংবাদ অনুযায়ী, শেখ হাসিনা মোদীকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, “তিস্তার পানিবন্টন নিয়ে ২০১১ সালে দুই দেশের সরকার যে অন্তর্বর্তী চুক্তির কাঠামোয় একমত হয়েছিল, কবে তার বাস্তবায়ন হবে বাংলাদেশের জনগণ কিন্তু অধীর আগ্রহে সেই অপেক্ষায় আছে।” আহারে, কী আব্দার! এটা যেনো অবৈধ যৌনমিলনে পেট বেজে যাওয়া সঙ্গিনীর আহাজারি, বিয়ে করে কবে তাকে স্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হবে। চট্টগ্রাম-মংলা বন্দর ব্যবহারের রূপরেখা তৈরির সমঝোতা হলেও ওপারের কোন বন্দর আমরা ব্যবহার করতে পারবো কিনা সে বিষয়ে হাঙ্গাওয়ালী নীরব! অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ না করা গেলেও বাংলাদেশকে ভারতে গ্যাস রপ্তানী করতে হবে মর্মে চুক্তি হয়েছে। রোহিঙ্গা, তিস্তা ইস্যুতে প্রত্যাশা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ কোন আশ্বাস পায়নি। এমনকি ভারতের বিতর্কিত এনআরসি বা জাতীয় নাগরিকপঞ্জীর নিয়েও কোন আলোচনা হয়নি।
ভারতকে ট্রানজিট দেওয়ার পর বলেছিলাম, দেশ বিক্রি হয়ে গেছে- সে নিয়ে আর আফসোস নেই। দু:খটা হলো, একেবারে বিনামূল্যে! এবার হাঙ্গা বসা বউ ভাতারকে যেভাবে একতরফা সব দিয়ে দিলো, তাতে আর না বলে পারছিনা, গণধর্ষণে দেশটা এবার মরেই গেলো। বদমাশ বুদ্ধিজীবীগুলো এখন কী বলবে? আওয়ামী লীগের পান্ডারা কি এখনও বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে উপহাস করবে? বেশ্যাও ন্যুনতম পারিশ্রমিক পায় তার খদ্দেরের কাছ থেকে। রক্ষিতাকে কিছুই দিলো না তার ভাতার। সে কারণেই হয়তো হিন্দী ভাষায় পেঁয়াজ নিয়ে ছেনালি করে মনের জ্বালা মিটিয়েছেন অবৈধ প্রধানমন্ত্রী।ওদিকে শান্তিপূর্ণভাবে সবকিছু বিলিয়ে দেওয়ায় ভাতাররা হাঙ্গারাণীকে দিয়েছে ‘ঠাকুর শান্তি পুরস্কার’।
কষ্ট হয়, আমরা চিনিনি। বেগম খালেদা জিয়া কিন্তু লেন্দুপ দর্জিদেরকে ঠিকই চিনতে পেরেছিলেন। তার দূরদর্শিতা ও বিচক্ষণতা আমাকে মুগ্ধ করে। তার প্রতি শ্রদ্ধায় আমার মস্তক নুয়ে আসে। তিনি ঠিকই ধরেছিলেন, তার প্রিয় দেশ একদিন বিক্রি হয়ে যাবে। জনগণ তাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হারাবে। তাদের বাঁচাতে মহিয়ষী এই নেত্রী সেদিন সাহসিকতার সাথে উচ্চারণ করেছিলেন, ‘দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও।’
‘দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও’ হোক আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর মন্ত্র।