বিএনপির দেড় লাখ নেতাকর্মী এখন ঢাকা পল্টনে।
ভেন্যু এখনো নির্ধারিত না হলেও আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সর্বকালের সর্ববৃহৎ সমাবেশ করতে চায় বিএনপি। এ লক্ষ্যে বেশ কিছুদিন ধরেই কাজ করছে দলটি। সম্ভাব্য পরিবহন ধর্মঘটের আশঙ্কায় ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকে দুদিন ধরে নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে এক থেকে দেড় লাখ নেতাকর্মী ঢাকায় প্রবেশ করেছেন
বলে নেতারা জানিয়েছেন। তবে অনেক নেতার বাড়ি ও হোটেলে পুলিশের তল্লাশির কারণে তারা নয়াপল্টন এলাকা থেকে দূরে আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের বাড়িতে নিরাপদে অবস্থান করছেন। এদিকে নির্দেশনা অনুযায়ী, বিএনপির কেন্দ্রীয় এবং অঙ্গ ও
সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ এবং মধ্যম সারির নেতারা দলীয় কার্যালয় ঘিরে অবস্থান করছেন। এখনো সমাবেশের অনুমতি না পেলেও নয়াপল্টন কিংবা ফকিরাপুল ঘিরে পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোচ্ছে দলটি।
ঢাকার গণসমাবেশে লোকসমাগম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কালবেলাকে বলেন, আমরা কোনো ফিগার দিয়ে বলতে চাই না। বিভাগীয় গণসমাবেশগুলোতে লাখ লাখ লোক হয়েছে। যেহেতু ঢাকা মহানগরীতেই কোটি কোটি লোক আছে, বিভাগের অধীনে জেলাও অনেকগুলো। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের প্রত্যাশা, স্মরণকালের সর্বশ্রেষ্ঠ জনসভা হবে।
গণসমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির দলনেতা ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান গতকাল রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বলেন, দেশের গ্রামীণ মানুষ আজ অতিষ্ঠ। বিএনপির সমাবেশ ঘিরে একটি গোষ্ঠী হামলা-মামলা চালাচ্ছে। ইনশাআল্লাহ আমাদের ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ মহাসমাবেশে রূপ নেবে। ইতোমধ্যে অনেক লোক ঢাকা আসা শুরু করেছে। পল্টন এলাকায় গেলেই দেখা যাবে লোকে লোকারণ্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গণসমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির দুই নেতা বলেন, ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ ঘিরে ইতোমধ্যে এক থেকে দেড় লাখ নেতাকর্মী ঢাকায় এসে পৌঁছেছে। তারা বিভিন্ন জায়গায় নিরাপদে অবস্থান করছেন। কৌশলের অংশ হিসেবে তারা বাইরে খুব একটা বের হবেন না।
বিএনপির নেতারা বলছেন, পরিবহন ধর্মঘট, পুলিশ ও ক্ষমতাসীনদের হামলাসহ নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও তারা শান্তিপূর্ণভাবে ৯টি বিভাগীয় সমাবেশ করেছেন। কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে করতে গিয়ে দলের একজন সাবেক সংসদ সদস্যসহ একাধিক নেতা নিহত হয়েছেন, আহত করা হয়েছে অসংখ্য নেতাকর্মীকে। এরপরও তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতেই আছেন। ঢাকার সমাবেশও শান্তিপূর্ণ হবে।
সমাবেশের জন্য বিএনপি লিখিতভাবে নয়াপল্টন চাইলেও সরকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বরাদ্দ দিয়েছে। তবে অনিরাপদ ও ফাঁদ মনে করায় সোহরাওয়ার্দীতে না যাওয়ার দলীয় অবস্থান জানিয়ে নয়াপল্টনের বিকল্প হিসেবে মৌখিকভাবে আরামবাগ চেয়েছে বিএনপি। এদিকে ভেন্যু এখনো নির্ধারিত না হলেও নয়াপল্টন ও আরামবাগকে ঘিরেই সমাবেশ সফলে প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। গত ২৫ অক্টোবর ঢাকা বিভাগের ১১টি সাংগঠনিক জেলা এবং কেন্দ্রীয় অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে প্রথম যৌথসভা করে দলটির। এরপর আরও একাধিক সভা হয়েছে। ওইসব সভা থেকে সমাবেশে সর্বোচ্চ জনসমাগম ঘটাতে বিভাগের অধীন ১১টি সাংগঠনিক জেলা এবং কেন্দ্রীয় অঙ্গসংগঠনগুলোকে টার্গেট নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। ঢাকার আশপাশের প্রতিটি জেলা ও মহানগরকে ১ লাখ করে নেতাকর্মী সমাগমের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ কালবেলাকে বলেন, বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে ছাত্রদলের ৫০ হাজার নেতাকর্মী প্রস্তুত হয়ে আছে। শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ সফল করার জন্য আমরা জীবন বাজি রাখতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, বিএনপি যে কর্মসূচি দিয়েছে, সেটা এখন শুধু বিএনপির কর্মসূচি নয়, এটা এখন সারা বাংলাদেশের গণমানুষের কর্মসূচিতে পরিণত হয়েছে। আমরা দেশবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই—আপনারা নির্ভয়ে গণসমাবেশে যোগ দিন, সমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ। ছাত্রদল গণমানুষের নিরাপদে গণসমাবেশে আগমন এবং সমাবেশ সফল হওয়ার পর নিরাপদে ফিরে যাওয়া পর্যন্ত সার্বক্ষণিক শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত।
বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, ঢাকা বিভাগের অধীন ১১টি সাংগঠনিক জেলা থেকে নেতাকর্মীরা সমাবেশে আসবেন। তবে ঢাকার বাইরে থেকেও নেতাকর্মীরা সমাবেশে যোগ দেবেন বলে জানা গেছে। এদিকে, অন্য বিভাগীয় গণসমাবেশগুলোর মতো ঢাকার সমাবেশের আগেও পরিবহন ধর্মঘট দেওয়া হতে পারে—এমনটা ধরে নিয়েই কৌশলের অংশ হিসেবে নেতাকর্মীদের আগেই ঢাকায় আসার নির্দেশনা দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী গত দুদিনে এক থেকে দেড় লাখ নেতাকর্মী ঢাকায় প্রবেশ করেছেন বলে দায়িত্বশীল কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন। এর মধ্যে গত সোমবার রাতে বেশিরভাগ নেতাকর্মী এসেছেন।
এদিকে নয়াপল্টন ও এর আশপাশের এলাকায় সমাবেশের পরিকল্পনা থাকায় নির্দেশনা অনুযায়ী বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতারা দলীয় কার্যালয় ঘিরে অবস্থান করছেন। আশপাশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি থাকলেও যুবদল, ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে মুহুর্মুহু স্লোগান দিচ্ছেন।
জানতে চাইলে টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সভাপতি হাসানুজ্জামান শাহীন কালবেলা বলেন, ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশে ধর্মঘট বাধা হতে পারে—এমন আশঙ্কায় নেতাকর্মীরা ইতোমধ্যে ঢাকায় যেতে শুরু করেছেন। অনেক নেতাকর্মী পৌঁছে গেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঢাকার সমাবেশ ঘিরে ইতোমধ্যে টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলায় নাশকতার ১২টি মামলা করা হয়েছে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত ৬৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে মামলা-গ্রেপ্তার করে সমাবেশ বাধাগ্রস্ত করা যাবে না।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি কালবেলাকে বলেন, এই জেলা থেকে ১ লাখ নেতাকর্মী ঢাকার সমাবেশে অংশগ্রহণ করবেন। এর মধ্যে ১৫ হাজার নেতাকর্মী ইতোমধ্যে ঢাকায় পৌঁছে গেছেন। তিনি বলেন, ঢাকার সমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতে সরকার যদি একাধিক প্ল্যান করে, সমাবেশ সফল করতে আমাদেরও এ, বি, সি প্ল্যান আছে। সে অনুযায়ী আমরা কাজ করব।
মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এস এ জিন্নাহ কবির কালবেলাকে বলেন, ঢাকার সমাবেশে মানিকগঞ্জ থেকে যত লোক যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে, আমরা তার কাছাকাছি পৌঁছাব। ইতোমধ্যে অনেকে ঢাকায় পৌঁছে গেছেন, বাকিরাও যাবেন। তিনি বলেন, সমাবেশ ঘিরে মানিকগঞ্জের ৭ উপজেলায় ৮ মামলায় ইতোমধ্যে ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এদিকে, সমাবেশ ঘিরে ঢাকাসহ আশপাশের জেলায় মামলা ও ব্যাপক ধরপাকড়ের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নতুন নতুন বার্তা দেওয়া হচ্ছে। কোনো ইউনিটের শীর্ষ সারির একাধিক নেতা আটক হলেও যাতে নেতৃত্বে কিংবা কর্মী সংগঠিত করতে সমস্যা না হয়, সে অনুযায়ী পরিকল্পনা করছে বিএনপি।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম বলেন, সারা দেশের সমাবেশ ঘিরে পরিবহন ধর্মঘট দেওয়া হয়েছে, পথে পথে হামলা হয়েছে। এবার মন্ত্রীরা বলছেন কোনো ধর্মঘট হবে না। বিএনপি কোনো ফাঁদে পা দেবে না। সেটার ব্যবস্থাও ভাবা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি অনুযায়ী কৌশল পরিবর্তন করা হচ্ছে। গ্রেপ্তার এড়িয়ে চলার চেষ্টা চলছে। তবে গ্রেপ্তার হলেও সমস্যা নেই। কেউ আটক হলে নেতৃত্বে যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সেজন্য তিন স্তরের বিকল্প নেতৃত্ব ঠিক করা আছে।