করোনা নিয়ে প্রাইভেট টিভি’র ইসলাম বিদ্বেষ এবং বাস্তবতা
শাকিলা ফারজানা: ১/ সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের দেশ বাংলাদেশে কিছু কিছু প্রাইভেট স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলের ইসলাম এবং মুসলমানদের প্রতি বিদ্বেষ রীতিমত ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৭১ টিভি, ডিবিসি, এটিএন, সময় টিভি এ চ্যানেল গুলির অন্যতম। আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় বিভিন্ন ইস্যুতে ইসলাম ধর্মই হয়ে যায় তাদের প্রতিপক্ষ। এই টিভি চ্যানেল গুলিতে দেশের ইসলাম বিদ্বেষী আলোচকদের তারা আমন্ত্রণ করেন এবং প্রাধান্য দেন। আর ইসলাম ধর্মের পক্ষে কেউ বলতে চাইলেও তাকে প্রাধান্য দেয়া হয় না। এ ব্যাপারে খুব সক্রিয় ভূমিকায় থাকেন ঐ সমস্ত চ্যানেলের কিছু মুসলমান নামধারী উপস্থাপক, বিশেষ করে উপস্থাপিকারাই। বর্তমানে করোনাভাইরাস মহামারীর সময়েও এর পুনরাবৃত্তি দৃষ্টিগোচর হচ্ছে অব্যাহতভাবে।
২/ সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ‘রিস্কস পোজড বাই ডেড বডিস আফটার ডিজঅ্যাস্টার’ শিরোনামে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে করোনাভাইরাসে মৃত ব্যক্তির দেহ থেকে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। তবে এর কোন প্রমাণ মেলেনি। কারণ, মহামারীতে মানুষের শরীরে এই এজেন্টের বেশীরভাগই দীর্ঘ সময় জীবিত থাকে না। বিশ্বব্যাপী গণহারে মানুষ মারা গেলে লাশ পুড়িয়ে ফেলার চেয়ে কবর দেয়া উত্তম। প্রাকৃতিক কোনো বিপর্যয়ে কোনো লাশের শরীর মহামারী রোগ সৃষ্টি করে এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
৩/ মৃতদেহকে কবরে শায়িত করাকে বলা হয় ‘দাফন করা’। মুসলমান, খ্রীষ্টান, ইহুদীদের দেহ মাটিতে দাফন করা হয়। অন্যদিকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে হিন্দু ও বৌদ্ধদের মৃতদেহ আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়।
৪/ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এবং ব্যাপক বিস্তার শুরু হয় চীনের উহান শহরে। চীনে রাষ্ট্রীয়ভাবে ধর্মবিশ্বাসকে নিরুৎসাহিত এবং নিগৃহীত করা হয়। করোনায় মৃতদের লাশ ওখানে পুড়িয়ে ফেলা হয়। এ প্রসঙ্গ এনে আমাদের ৭১ টিভির ফারজানা রুপা নামে এক উপস্থাপিকা এক ডাক্তার আলোচককে প্রশ্ন করলেন, করোনায় মৃত কোন মুসলমানের আত্মীয়রা যদি তার দেহকে পুড়ানোর অনুমতি দেন, তা বৈধ হবে কি না? ঐ আলোচক ইসলামিক সেন্টিমেন্ট এবং দাফন করলে জীবাণু সংক্রমণের ভয় নেই- বলে তার উত্তর দিলেন। এরপরও ঐ উপস্থাপিকা ইনিয়েবিনিয়ে লাশ পুড়ানোর পক্ষে তার কথা বলে গেলেন। অথচ এ সম্পর্কে তার জ্ঞান খুব সীমিত, যা আলোচকের উত্তরেই প্রমাণ হয়ে গিয়েছিল। এতে প্রমাণ হয়, কোন সমস্যা নিয়ে সমাধানের আলোচনায় ঐ সমস্ত চ্যানেল এবং উপস্থাপিকার বিষয় হয় না; বিষয় হয় ইসলামের প্রতি বিদ্বেষপ্রসুতা। অথচ ওরাও মুসলমান, অবশ্য শুধু নামেই।
৪/ ৩১’ডিসেম্বর ২০১৯ করোনাভাইরাস চীনে এবং ৭’মার্চ ২০২০ বাংলাদেশে দৃশ্যমান ভাবে সনাক্ত হওয়ার পর থেকে পুরো বিশ্ব এবং আমাদের দেশে জনসম্পৃক্ততা কমানোর জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম চলে আসছিল। এ লক্ষ্যে সংক্রমিত এবং সম্ভাব্য সংক্রমণের এলাকাজুড়ে লকডাউন, কোয়ারেন্টাইন প্রভৃতি পদ্ধতি চালু হয়ে আসছিল। এমনকি অনেক জায়গায়, দেশে জামাতে নামায পড়াসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। আমাদের মসজিদগুলোতেও সেই লক্ষ্যে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, যা এখনো চলছে। এর মধ্যে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে জামাতে নামায, কার্পেট তুলে ফেলা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্মতার ব্যাপারে আরো সজাগ হওয়া, হাত ধোঁয়ার ব্যবস্থা অন্যতম। ধর্মীয় আলেমরা সাবধানতা অবলম্বন করে জামাত, জুমা চালিয়ে যেতে মত দেন। এভাবে এখনো চলছে। গত ৩ মাসে মসজিদ থেকে করোনা ছড়িয়েছে এ কথা কেউ শুনেনি। কিন্তু আমাদের তথাকথিত কিছু টিভি চ্যানেল গত কয়েকমাস ধরেই মসজিদে নামাজ বন্ধ করার জন্য বিষোদগার করেই যাচ্ছে। অথচ এর পাশাপাশি অন্যান্য অনেক রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় জনসমাগমের ব্যাপারে তাদের বিরোধীতা পরিলক্ষিত হয়নি। মুজিব শতক পালনে, ইসির অনাবশ্যক নির্বাচন কার্যক্রমে, রাষ্ট্রীয় বন্ধ এবং বাড়ী গমনে, রাষ্ট্রীয় বন্ধেও গার্মেন্টস খুলে দেওয়াতে শ্রমিকদের আগমনে- এ কার্যক্রম গুলির ব্যাপারে দেশের এসব টিভি চ্যানেলের বিরোধীতা তেমন পরিলক্ষিত হয়নি। এগুলি ইসলামের প্রতি চরম স্ববিরোধীতা এবং বিদ্বেষপ্রসূত নয় কি?
৫/ অধিকাংশ মুসলমানের দেশে মিডিয়া থেকে সরাসরি ইসলামের নামে এই ধরনের বিষোদগার নিঃসন্দেহে অমার্জনীয় অপরাধ। এর বিরুদ্ধে দেশের আলেমসমাজসহ সকল মুসলমানদের সজাগ এবং প্রতিবাদী হওয়া অত্যাবশ্যক। তা নাহলে অনেক ইসলামিক দেশের মতো আমরাও আল্লাহর গজব হতে বাঁচতে পারবো না।
শাকিলা ফারজানা, লেখক ও রাজনৈতিক।