জীবন বাঁচাতে অনতিবিলম্বে জরুরী উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দাও

গণতন্ত্রের মা, নিরপরাধ, বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক তিনবারের নির্বাচিত সফল প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অন্যায় কারাবন্দিত্বের দুই বছর ইতোমধ্যে অতিক্রান্ত হয়েছে। দুই বছর আগে সুস্থ সচল অবস্থায় বেগম খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করা হয়, নির্যাতনে অবহেলায় অপচিকিৎসায় তিনি আজ পঙ্গু। ভয়াবহ অসুস্থতায় ব্যথায় বিমূঢ় মৌন। 

 

বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৮, থেকে বর্তমান ‘অত্যাচারী—ভোটডাকাত—দুর্নীতিবাজ’ শাসকগোষ্ঠী চক্রান্তমূলক মিথ্যামামলায় অন্যায় সাজার মাধ্যমে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের গভীর শ্রদ্ধা ও অশেষ ভালোবাসার প্রতীক এই প্রবীণ দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদকে ঢাকার নাজিমুদ্দিনরোডের শতবর্ষ পুরান পরিত্যক্ত কারাগারে একাকী বন্দি করে রেখেছে। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে দূরে রেখে বিনাবাধায় অনির্দিষ্টকাল ক্ষমতায় থাকার জন্যই তাঁকে কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে, কেননা, তিনি অবৈধ সরকারকে মেনে নেননি। জনগণের ভোটাধিকার উদ্ধারে তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ আপসহীন। তিনি বিশ্বাস করেন, জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস।   

 

এ ধরনের রায়ের পর বাংলাদেশের যে কোন নাগরিক জামিন পেয়ে থাকে। আওয়ামী লীগ নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক দুর্নীতির দায়ে ১৩ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পরও জামিন পেয়েছে। সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পর জামিনে আছে। স্বৈরাচার এরশাদ জীবিত থাকাকালে আমৃত্যু জামিন ভোগ করেছে। এমন অনেক উদাহরণ আছে। আবার বন্দি থেকেও জামিনে চিকিৎসা নিতে বিদেশে গেছেন, এমন উদাহরনের ও কমতি নেই। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমলে মুক্তি নিয়ে জাসদ নেতা আসম আবদুর রব তৎকালীন পশ্চিম জার্মানি গিয়েছিলেন চিকিৎসার জন্য। তিনি তখন দণ্ডিত আসামি ছিলেন। এক এগারোর অবৈধ সরকারের সময়ে ২০০৮ সালে শেখ হাসিনা নির্বাহী আদেশে আট সপ্তাহের জন্যে বিদেশে গিয়েছিল। একই সময়ে আওয়ামী লীগের তৎকালীন মহাসচিব আবদুল জলিল প্যারোলে মুক্তি নিয়ে চিকিৎসার জন্যে সিঙ্গাপুর গিয়েছিল। 

 

অথচ বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ও বিশ্বে নারী নেতৃত্বের অগ্রপথিক এবং অত্যন্ত অসুস্থ একজন সিনিয়র সিটিজেনকে এই  ন্যুনতম অধিকারটুকুও দেয়নি জানুয়ারি ৫, ২০১৪ এর ভোটারবিহীন এবং ডিসেম্বর ৩০, ২০১৮, জাতীয় নির্বাচনে ভোটডাকাতির মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারীরা। বরং  খালেদা জিয়ার প্রতি তাদের হিংস্রতার মাত্রা ক্রমাগত বাড়ছে। বার বার বেগম খালেদা জিয়াকে জামিন পাওয়ার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করার মাধ্যমে প্রমাণিত হচ্ছে বাংলাদেশে বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন নয়।  

 

সুস্থ সচল অবস্থায় খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করা হয়, নির্যাতনে, অবহেলায়, অপচিকিৎসায় তিনি আজ পঙ্গু। বর্তমানে তাঁকে অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় বিএসএমএমইউ হাসপাতালে ছোট অন্ধকার প্রকোষ্ঠে রাখা হয়েছে, যেখানে নেই কোন আধুনিক চিকিৎসা উপকরণ ও ব্যবস্থা। 

 

ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২০, দৈনিক মানবজমিনে প্রকাশিত সাংবাদিক মরিয়ম চম্পার রিপোর্টে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার শোচনীয় বিপর্যয়ের কথা তুলে ধরা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয় — 

“পিঠে ঘা হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার। হাত-পা ও পিঠের ব্যথায় কাতর তিনি। অন্যের সহযোগিতা ছাড়া বিছানা থেকে উঠে বসতে বা কিছু খেতে পারেন না। সন্ধ্যা থেকে রাতের বেশির ভাগ সময় শ্বাসকষ্টে ভোগেন।”  

 

ডিসেম্বর ১১, ২০১৯, সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে বিএসএমএমইউয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের স্বাক্ষরিত একটি চিঠির সাথে মেডিকেল বোর্ডের পাঠানো রিপোর্ট  যা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তাতে বলা হয়েছে    

 

“বেগম জিয়ার ক্ষেত্রে, প্রথম দফায় প্রচলিত থেরাপির মাধ্যমে উপশম আসেনি। […] এখন পর্যন্ত রিউমাটোয়েড আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসা আগের মতোই নিম্নমানের।”  

 

একই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে — 

“বেগম জিয়ার রিউমাটোয়েড আর্থ্রাইটিস খুবই সক্রিয় অবস্থায় আছে। এটি তাঁর একাধিক সন্ধিতে ক্ষয়সাধন করেছে, ফলে তিনি বর্তমানে পঙ্গু অবস্থায় আছেন এবং দৈনন্দিন কাজের ক্ষেত্রে তিনি অন্য কারও সহায়তার ওপর প্রায় সম্পূর্ণই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন।”

 

মেডিকেল রিপোর্ট প্রমাণ দিচ্ছে হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা কাজ করছে না। 

 

মঙ্গলবার, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২০, বিএনপি চেয়ারপার্সনকে দেখে এসে সাংবাদিকদের বেগম খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম আবেগ বিহ্বলতায় জানান —

 

“খালেদা জিয়ার শরীর খুবই খারাপ। তিনি শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। একদম কথাই বলতে পারছেন না। খেতে পারছেন না, বমি হয়ে যাচ্ছে। হাত পা বেঁকে গেছে। ডাক্তাররা যে চিকিৎসা দিচ্ছেন তাতে কোনো উন্নতি হচ্ছে না। সে জন্য তাঁর বিশেষায়িত হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন।  তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।” 

 

দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক ও দেশের শীর্ষ আইন বিশ্লেষক  মিজানুর রহমান খান প্রথম আলোতে ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২০, এ লিখেছেন —  

 

“সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ‘অ্যাডভান্সড ট্রিটমেন্ট’ তাঁর মৌলিক অধিকার। এটা রাষ্ট্রের অনুকম্পার বিষয় নয়। … ‘বিদ্যমান আইন বলছে, নারী, বিশেষ করে তিনি যদি প্রবীণ নাগরিক হন এবং তার স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে, তাহলে তিনি জামিন পেতে বিশেষ বিবেচনার হকদার।” 

 

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ডিসেম্বর ১৯, ২০১৯,  বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে —   

“কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জাতিসংঘ নির্ধারিত মান (নেলসন ম্যান্ডেলা আইন) অনুযায়ী সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করে সুবিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা হউক।” 

 

বাংলাদেশের অবিচল গণতন্ত্র-সংগ্রামী আপসহীন এই নেত্রীকে কারাবন্দি রেখে জনগণের ভূমি, সম্পদ ও অর্থ লুট করছে অবৈধ সরকার। নাগরিকের শান্তিপূর্ণ ও যৌক্তিক প্রতিবাদকে তারা দমন করছে ‘বিচারবহির্ভূতহত্যা—গুম—গ্রেপ্তার—জেল—মামলা—হামলা’ এর মাধ্যমে।   জনগনের ইচ্ছা তাদের কাছে তুচ্ছ, ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে মানুষের মৌলিক অধিকারকে পদদলিত করছে।  

 

বেগম জিয়াই আওয়ামী অন্ধকারযুগে চোখ ধাঁধানো আলোরঝড়, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের অভেদ্য গ্রেটওয়াল। যুবক—যুবতী, শিক্ষক—শিক্ষার্থী কৃষক, শ্রমিক, ব্যবসায়ী,  গৃহিনী, পেশাজীবী, রাজনৈতিকর্মীসহ  — বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণ একইসাথে ‘গণতন্ত্রের মা’ বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তাঁদের ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার দুই লক্ষ্যে ইস্পাত কঠিন গণঐক্য (Coalition of people) তৈরি করে চলেছে দেশজুড়ে ও দেশে দেশে। স্বৈরশাসনের জগদ্দল মসনদ উপড়ে ফেলে বেগম জিয়া্কে মুক্ত করতে সংহত সংকল্পবদ্ধ এই দেশের পরিশ্রমী গণতন্ত্র প্রিয় মানুষ । টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, সুন্দরবন থেকে সিলেট এক লক্ষ সাড়ে  ৪৭  হাজার বর্গ কিলোমিটার জুড়ে কোটিকোটি মানুষের মিলিত কণ্ঠস্বর প্রতিনিয়ত ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হচ্ছে —

 

মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই

খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই

আরো পড়ুন