Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/ibraesig/sangramtv.com/wp-content/themes/publisher/includes/libs/bs-theme-core/theme-helpers/template-content.php on line 1164

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/ibraesig/sangramtv.com/wp-content/themes/publisher/includes/libs/bs-theme-core/theme-helpers/template-content.php on line 1165

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/ibraesig/sangramtv.com/wp-content/themes/publisher/includes/libs/bs-theme-core/theme-helpers/template-content.php on line 1166

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/ibraesig/sangramtv.com/wp-content/themes/publisher/includes/libs/bs-theme-core/theme-helpers/template-content.php on line 1177

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/ibraesig/sangramtv.com/wp-content/themes/publisher/includes/libs/bs-theme-core/theme-helpers/template-content.php on line 1164

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/ibraesig/sangramtv.com/wp-content/themes/publisher/includes/libs/bs-theme-core/theme-helpers/template-content.php on line 1165

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/ibraesig/sangramtv.com/wp-content/themes/publisher/includes/libs/bs-theme-core/theme-helpers/template-content.php on line 1166

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/ibraesig/sangramtv.com/wp-content/themes/publisher/includes/libs/bs-theme-core/theme-helpers/template-content.php on line 1177

শেখ মুজিব নয়,জিয়াই স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াই প্রথম রাষ্ট্রপ্রতি

সায়েক এম রহমান:

একাত্তরের ২৫ মার্চের কালরাতের পরবর্তী উত্তাল দিনগুলিতে স্বাধীনতার জন্য,শহীদ জিয়ার উদাত্ত আহবান জাতীকে উদ্বেলিত করেছে। ’’ আমি মেজর জিয়া বলছি’’ সেই দৃঢ় ইস্পাত কঠিন উচ্চারন জাতিকে দিয়েছে সাহস, নিশ্চয়তা ও গন্তব্য স্থান। নিঃসন্দেহে শহীদ জিয়াই স্বাধীনতার পথ দেখানোর অগ্রনায়ক। তাহার সেই সাহসী তুর্য বাণী ’’আমি মেজর জিয়া বলছি’’ আবারো ধ্বনিত হল পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর। একাত্তরে যেমনি স্বাধীনতা কামী মানুষ ঝঁপিয়ে পড়েছিল পাক হানাদারদের উপর,তেমনি পচাত্তরে বাংলার মানুষ, বাংলার আকাশ বাতাস মুখরিত করে শ্লোগান আর মিছিলের স্রোত দিয়ে রাজনৈতিক পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়েছে। সিপাহী সংহতি সংহত করেছে।

যারা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের রাজ সাক্ষী এমন কিছু গুনীজনের কিছু কথা না লিখলে না হয় । তাঁদের অন্যতম একজন হলেন, মুক্তিযুদ্ধের উপ-প্রধান সেনাপতি এয়ার ভাইস মার্শাল (অবঃ) এ কে খন্দকার ’’মুক্তি যুদ্ধের পুর্বাপর’’ বইতে লিখেছেন, মেজর জিয়া কালুর ঘাট বেতার কেন্দ্রে এসে প্রথম যে ঘোষনাটি দিলেন, সে ঘোষনায় তিনি নিজেকেই বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষনা করেছিলেন। তিনি আরও বলেন, জিয়ার ২৭ মার্চের ঘোষনা শোনার সঙ্গে সঙ্গে যারা দেশে এবং বাংলাদেশের বাইরে যারা ছিলেন,তাদের মধ্যে যে একটা প্রচন্ড উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। যে সম্পর্কে কারও সন্দেহ থাকার কথা নয়।

 

এ কে খন্দকার আরও বলেন, আমার স্ম^রণ শক্তিতে যতটুকু মনে আছে, সে টুকুই বলব। এই ঘোষনা সংক্রান্ত ব্যাপারে একটু আগে যা বললাম, তার বাইরে কোন কিছু কিন্তুু মুক্তি যুদ্ধ চলাকালে আর শোনা যায়নি। কেউ চট্রগ্রামে এ সংক্রান্ত সংবাদ পাঠিয়েছে বা জহুর আহমেদ চৌধুরীর কাছে পাঠিয়ে ছিল। এমন কোন সংবাদ আমরা শুনিনি। এ সম্পর্কে কথা বলা হয় স্বাধীনতার পর। আমি নিজে জানি,যুদ্ধের সময় জানি,যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে জানি যে, মেজর জিয়াই এই ঘোষনাটি পড়ার ফলে সারা দেশের ভিতরে এবং সীমান্তে যত যোদ্ধা ছিলেন,তাদের মধ্যে এবং সাধারন মানুষের মনে সাংগাতিক একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করল যে,হাঁ,এবার বাংলাদেশ একটা যুদ্ধে নামল।

 

এদিকে স্বাধীন বাংলা বেতারের একজন শব্দ সৈনিক বেলাল মোহাম্মদ। সেই সন্ধার ঘটনা সম্পর্কে তিনি লিখেছেন,জিয়াউর রহমান যে খসড়াটি তৈরী করেছিলেন তাতে তিনি নিজেকে প্রভিশনাল হেড অব বাংলাদেশ বলে উল্লেখ করেছিলেন। খসড়াটি নিয়ে তাঁর সঙ্গী ক্যাপ্টেনদের সঙ্গে আলোচনার সময় আমিও উপস্থিত ছিলাম। মেজর জিয়াউর রহামান আমার মতামতও চেয়েছিলেন। আমি বলেছিলাম, ক্যান্টনমেন্টের বাইরে আপনার মত আর কেউ আছে কিনা মানে সিনিয়র তা জানার উপায় নাই। বিদেশের কাছে গুরুত্ব পাওয়ার জন্য আপনি নিজেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে সামরিক বাহিনীর প্রধান অবশ্যই বলতে পারেন। বেলাল আহমদ আরও লিখেছেন একটি এক্সারসাইজ খাতার পাতায় জিয়াউর রহমান নিজেই এই ভাষনটি লিখেছিলেন। (সুত্রঃ স্বাধীন বাংলা বেতারের একজন শব্দ সৈনিক বেলাল মোহাম্মদ)

 

এছাড়া বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ অলি আহাদ তার ’’জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৭-১৯৭৫’’ বইতে স্বাধীনতা ঘোষনা সম্পর্কে লিখেন, আমি জনাব আব্দুল গাফফার চৌধুরীর সহিত নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করিতাম এবং মাঝে মাঝে অভয়দাস লেনের বাসায় রাত্রি যাপন করিতাম। তাহার বাসায় রাত্রি যাপন করিতে গিয়া তাহারই রেডিও সেটে ২৭শে মার্চ চট্রগ্রাাম বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীন বাংলার রেডিওর এই ঘোষনা শুনতে পাই। এই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র হইতে মেজর জিয়াউর রহমানের কণ্ঠস্বরে স্বাধীন বাংলার ডাক ধ্বনিত হয়েছিল। এই ডাকের মধ্যে সেই দিশেহারা, হতভম্ব,সম্ভিত হারা ও মুক্তিপ্রাণ বাঙ্গালী জনতা শুনিতে পায় এক অভয় বাণী,আত্নমর্যাদা রক্ষার সংগ্রামে ঝাপাইয়া পড়িবার আহবান,স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের লড়াইয়ের সংবাদ,ফলে সর্বত উচ্চারিত হয় মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীরের পতনের সংকল্প, আওয়াজ উঠে জালিমের নিকট আত্নসমর্পন নয়, আহবান ধ্বনিত হইতে থাকে আত্নপ্রতিষ্ঠার,প্রতিরোধ শক্তিকে সুসংহত করনের। এইভাবেই সেই দিন জাতি আত্নসম্বিত ফিরিয়া পায় এবং মরনপন সংগ্রামে ঝাপাইয়া পড়ে। (সুত্রঃ অলি আহাদ , জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৭-১৯৭৫)।

 

ঐদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্ণেল নুরুজ্জামান তাহার লিখিত ’’একজন সেক্টর কমান্ডারের স্মৃতি কথা’’ নামক বইতে লিখেছেন মেজর জিয়াই নিজেকে দেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসাবে স্বাধীনতা ঘোষনা করেছিলেন। এইভাবে অগনিত গুনিজন ও অসংখ্য বই ও অসংখ্য রেকর্ড এবং অসংখ্য আন্তর্জাতিক মানের পত্রিকা দ্বারা প্রমানিত জিয়াই স্বাধীনতার ঘোষক এবং জিয়াই বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি।

অপর দিকে আওমালীগের অনেক নেতা-নেত্রীরা দাবী করে থাকেন, শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চই ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়েছেন। আসলে কথাটা মোটেই ঠিক নয়। সম্পুর্ণই অসত্য। তারই প্রমান ১.শেখ মুজিব যদি ৭মার্চ স্বাধীনতার ঘোষনা দিতেন তাহলে তিনি নিজেই কেন ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস পালন করলেন।

২. শেখ মুজিবুর রহামানের কেবিনেট সেক্রেটারী এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ২০১৪ সালের ২২ ফেব্রয়ারী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ঐতিহাসিক মুজিব নগর দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে স্বীকার করে বললেন, ঐতিহাসিক ৭ই মার্চে রক্তপাতের আশঙ্কায় শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষনা থেকে বিরত থাকেন। তিনি আরও ব্যাখ্যা দিয়ে বললেন যখন ভাষন চলছিল তখন পাক আর্মির হেলিকপ্টার সমাবেশের উপর দিয়ে টহল দিচ্ছিল এবং চারদিকে ছিল পাক আর্মিরা বেষ্টিত। তাই এত লোকের সমাবেশে রক্তপাতের আশংকাায় শেখ মুজিব ৭ মার্চে ভাষনে স্বাধীনতার ঘোষনা দেননি।

 

৩.এছাড়া বঙ্গবন্ধু নিজেও ৭মার্চ স্বাধীনতার ঘোষনার দাবী করেননি বরং অস্বীকার করেছেন। তার প্রমান ৭২ সালের ১৮ই জানুয়ারী বৃটিশ সাংবাদিক ’’ডেবিড ফ্রন্ট’’ শেখ মুজিবকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ৭ই মাচ যদি আপািন ঘোষনা দিতেন, এখন কি হত বা কি ঘটত ? বঙ্গবন্ধু প্রতি উত্তরে বলেছিলেন বিশেষ করে এই দিনটিতে আমি তা চাইনি যে, তারা (পাকিস্থান) বলুক শেখ মুজিব স্বাধীনতা ঘোষনা করেছে এবং আঘাত হানা ছাড়া কোন বিকল্প নাই। (সুত্রঃ বাঙ্গালী হত্যাকান্ড ও পাকিস্তানের ভাঙ্গন,মাসুদুল হক)।

ঐদিকে ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাক বাহিনীর হস্তে, শেখ মুজিব স্বেচ্ছায় পাকিস্তানীদের কাছে আত্ন সমর্পন করেন। তাজ উদ্দিন আহমেদের ভাষায় শেখ মুজিব অস্বীকৃতি জানিয়েছেন স্বাধীনতা ঘোষনাপত্রে স্বাক্ষর দিতে এবং যুদ্ধের নেতৃত্ব গ্রহনে। বরং সেই দিন তাজউদ্দিন আহমেদকে শেখ মুজিব বলেছিলেন বাড়ী গিয়ে নাকে তেল দিয়ে ঘুমাও, পরশু অর্থাৎ ২৭মার্চ হরতাল ডেকেছি। এই ছিল ২৫ মার্চের কাল রাতের শেখ মুজিব ও তাজ উদ্দিন আহমেদেরে কথোপকথন।

 

এই প্রসঙ্গে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গবেষক,অধ্যাপক এমাজউদ্দিন স্যার লিখছিলেন, বাংলাদেশের রাজনীতির গতি প্রকৃতির দিকে লক্ষ্য করলে,দেখবেন যে যে ক্ষেত্রে শেখ মুজিবুর রহমান ব্যর্থ হয়েছেন,সেই সব ক্ষেত্রেই জিয়াউর রহমানের সাফল্য আকাশচুম্বী। এই ঐতিহাসিক সত্যই আামার দেশের রাজনীতিকে করে তুলেছে সংঘাত ময়।

পাঠক, ৭২ সালের মার্চ মাসে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নিজের লিখা ’’একটি জাতির জন্ম’’ থেকে কিছুটা অংশ হবুহু তুলে ধরার চেষ্টা করছি। কারণ এখানে ২৫ ও ২৬ মার্চের কিছু গুরুত্বপুনর্ণ ঘটনাবলী না তুলে ধরলে অপূর্ণ থেকে যাবে।

তারপর এল সেই কাল রাত । ২৫শে ও ২৬শে মার্চের মধ্যবর্তী কালো রাত । রাত ১টায় আমার কমান্ডিং অফিসার আমাকে নির্দেশ দিল নৌ-বাহিনীর ট্রাকে করে চট্রগ্রাম বন্দরে যেয়ে জেনারেল আনসারির কাছে রিপোর্ট করতে। আমার সাথে নৌ-বাহিনীর (পাািকস্তানি) প্রহরী থাকবে তাও জানানো হল। আমি ইচ্ছা করলে আমার সাথে তিন জন লোক নিয়ে যেতে পারি। তবে আমার সাথে আমারই ব্যাটালিয়ানের একজন পাকিস্তানী অফিসার থাকবে। অবস্য কমান্ডিং অফিসারের মতে সে যাবে আমাকে গার্ড দিতে। এ আদেশ পালন করা আমার পক্ষে ছিল অসম্ভব। আমি বন্দরে যাচ্ছি কি না তা দেখার জন্য একজন লোক ছিল। আর বন্দরে সয়ং প্রতীক্ষায় ছিল জেনারেল আনসারী। হয়তো বা আমাকে চিরকালের জন্য স্বাগত জানাতে।

 

আমরা বন্দরের পথে বেরুলাাম । আগ্রাবাদে আমাদের থামতে হল। পথে ছিল ব্যারিক্যাড এই সময়ে সেখানে এল মেজর খালেকুজ্জামান চৌধুরী। ক্যাপ্টেন অলি আহমদের কাছ থেকে বার্তা এসেছে আমি রাস্তায় হাটছিলাম। খালেক আমাকে একটু দুরে নিয়ে গেল। কানে কানে বলল, তারা ক্যান্টনমেন্ট ও শহরে সামরিক তৎপরতা শুরু করেছে। বহু বাঙ্গালীকে ওরা হত্যা করেছে।

এটা ছিল একটা সিদ্ধান্ত গ্রহনের চুড়ান্ত সময়। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আমি বললাম, আমরা বিদ্রোহ করলাম। তুমি ষোলশহর বাজারে যাও । পাকিস্তানী অফিসারদের গ্রেফতার কর। অলি আহমেদকে বল ব্যাটালিয়ান তৈরী রাখতে,আমি আসছি। আমি নৌ-বাহিনীর ট্রাকের কাছে ফিরে গেলাম। পাকিস্তানী অফিসার, নৌ-বাহিনীর চীফ পেটি অফিসার ও ড্রাইভার কে জানালাম যে, আমাদের আর বন্দরে যাওয়ার দরকার নেই। এতে তাদের মনে কোন প্রতিক্রিয়া হলনা দেখে আমি পাঞ্জাবী ড্রাইভারকে ট্রাক ঘোরাতে বললাম। ভাগ্য ভাল, সে আমার আদেশ মানলে। আমরা আবার ফিরে চললাম।ষোল শহর বাজারে পৌঁছিই আমি গাড়ী থেকে লাফিয়ে নেমে একটা রাইফেল তুলে নিলাম। পাকিস্তানী অফিসারটির দিকে তাক করে বললাম, হাত তোল। আমি তোমাকে গ্রেফতার করলাম। নৌ-বাহিনীর লোকেরা এতে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ল। এক মুহুর্তের মধ্যেই আমি নৌ-বাহিনীর অফিসারের দিকে রাইফেল তাক করলাম। তারা ছিল আটজন। সবাই আমার নির্দেশ মানলো এবং অস্ত্র ফেলে দিল।

আমি কমান্ডিং অফিসারের জীপ নিয়ে তার বাসার দিকে রওয়ানা দিলাম। তার বাসায় পৌঁছে হাত রাখলাম কলিংবেলে। কমান্ডিং অফিসার পায়জামা পড়েরই বেরিয়ে এলো । খুলে দিল দরজা। কি প্রগতিতে আমি ঘরে ঢুকে পড়লাম এবং গলাশুদ্ধ তার কলার টেনে ধরলাম। দ্রুত গতিতে আবার দরজা খুলে কর্ণেলকে আমি বাইরে টেনে আনলাম। বললাম, বন্দরে পাঠিয়ে আমাকে মারতে চেয়েছিলে ? এই আমি তোমাকে গ্রেফতার করলাম। এখন লক্ষী সোনার মত আমার সঙ্গে এসো । সে আমার কথা মানল। আমি তাকে ব্যাটালিয়ানে নিয়ে এলাম। অফিসারদের মেসে যাওয়ার পথে আমি কর্ণেল শওকতকে (তখন মেজর) ডাকলাম। তাকে জানালাম আমরা বিদ্রোহ করেছি। শওকত আমার হাতে হাত মিলালো । ব্যাটালিয়ানে ফিরে দেখলাম, সমস্ত পাকিস্তানী অফিসারকে বন্দী করে একটা ঘরে রাখা হয়েছে। আমি অফিসে গেলাম। চেষ্টা করলাম লেঃ কর্ণেল এম আর চৌধুরীর সাথে আর মেজর রফিকের সাথে যোগাযোগ করতে কিন্তুু পারলাম না। সব চেষ্টা ব্যর্থ হল । তারপর রিং করলাম বেসামরিক বিভাগের অপারেটরকে। তাকে অনুরোধ জানালাম, ডিপুটি কমিশনার , পুলিশ সুপারেনডেন্ট, কমিশনার, ডিআইজি ও আওয়ামীলীগ নেতাদেও জানাতে যে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অষ্টম ব্যাটিলিয়ান বিদ্রোহ করেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করবে তারা। এদের সবার সাথে আমি টেলিফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। কিন্তুু কাউকেই পাইনি। তাই টেলিফোন অপারেটরের মাধ্যমেই আমি তাদের খবর দিতে চেয়েছিলাম। অপারেটার সানন্দে আমার অনুরোধ রক্ষা করতে রাজি হল।

সময় ছিল অতি মুল্যবান। আমি ব্যাটালিয়েনের অফিসার, জেসিও, আর জওয়ানদের ডাকলাম। তাদের উদ্দেশ্যে ভাষন দিলাম। তারা সবই জানত। আমি সংক্ষেপে সবই বললাম এবং তাদের নির্দেশ দিলাম সশস্ত্র সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে। তারা সর্ব সম্মতিক্রমে এ আদেশ মেনে নিল। আমি তাদের একটা সামরিক পরিকল্পনা দিলাম।

 

তখন রাত ২টা বেজে ১৫ মিনিট । ২৬শে মার্চ। ১৯৭১ সাল। রক্তের আঁখরে বাঙ্গালীর হদয়ে লেখা একটা দিন। বাংলাদেশের জনগন চিরদিন স্বরণ রাখবে এই দিনটিকে । স্মরণ রাখবে ভালবাসবে। এই দিনটিকে তারা কোনদিন ভুলবে না। কো-নো-দি-ন না ।

পাঠক এখানে সমষ্টিতে প্রমানিত, ৭১ এ মুক্তিযুদ্ধে মহা সংকট সন্ধিক্ষণে রাজনৈতিক নেতৃত্বে যখন হাবুডুবু খাচ্ছিল। পরবর্তী করনীয় বা সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে কোন প্রকার দিক নির্দেশনা দিতে যখন বাংলাদেশ ব্যার্থ হতে চলেছিল, ঠিক তখনই মেজর জিয়াউর রহমান কালুর ঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে গর্জে উঠে বলেছিলেন, ’’আমি মেজর জিয়া বলছি’’ সেই দৃঢ় ইস্পাত কঠিন উচ্চারন জাতিকে দিয়েছিল সাহস,নিশ্চয়তা এবং গন্তব্য স্থান। তার এই উদাত্ত আহবানই জাতিকে উদ্বেলিত করেছিল। ’’আমি জিয়া বলছি’’ তাহার এই সাহসী তুর্য বাণী সেই দিন যথার্থভাবে জাতিকে সঠিক নির্দেশনা দিয়েছিল।

অপর দিকে পাকিস্তানীদের শাসন ,শোষন, লাঞ্চনা ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে বাংলার মানুষকে সুসংগঠিত করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। তাতে সন্দেহের কোন অবকাশ নাই । তাহার নেতৃত্বেই সাড়ে সাত কোটি মানুষ স্বাধীনতার জন্য মুক্তি যুদ্ধ করতে সম্পর্ণ রুপে প্রস্তুুত ছিল।

তাই ঐতিহাসিক ৭ মার্চে বাংলার প্রতিটি মানুষ অধীর আগ্রহে ছিল। শেখ মুজিবুর রহমানের মুখ থেকে স্বাধীনতার ঘোষনা শুনতে কিন্তুু ইতিহাস বলে সেই দিন স্বাধীনতা ঘোষনার সব কিছু প্রস্তুুত থাকার পরও স্বাধীনতা ঘোষনা থেকে বিরত থাকেন শেখ মুজিবুর রহমান। ইতিহাস আরও বলে, তাজ উদ্দিন আহমদের ভাষায় শেখমুজিব অস্বীকৃতি জানিয়েছেন স্বাধীনতার ঘোষনায় স্বাক্ষর দিতে এবং যুদ্ধের নেতৃত্ব গ্রহনে। পাঠক এখানে অসংখ্য বই পত্র পত্রিকার মাধ্যমে প্রমাণিত হল, ৭মার্চ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত এই ১৯ দিন বাংলার মানুষ ছিল রাখাল বিহীন ও দিশেহারা। ২৬ মার্চের শহীদ জিয়ার স্বাধীনতা ঘোষনার মাধ্যমে সমগ্র জাতি বাংলার রাখালকে খোঁজে পায় ও দিশেহারা জাতি দিশা পায়। এবং মুক্তি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ২৬ মার্চের স্বাধীনতা ঘোষনার দিন হতে ১৭ ই এপ্রিল তারিখে অস্থায়ী সরকার গঠিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এই ২২ দিন জাতি নেতৃত্ব শূন্য বা রাখার বিহীন ছিল না। এখানে পরিস্কার, এ সময়কালে বাংলাদেশের রাষ্ট্র প্রধান বা প্রভিশনাল সরকারের প্রধান ছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান এবং ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষক ও ছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান।

আজ এটাই ইতিহাস, এটাই সত্য, এটাই বাস্তবতা। তাই বলছি শেখ মুজিব নয়, জিয়াই স্বাধীনতার ঘোষক, জিয়াই প্রথম রাষ্ট্রপতি ।

লেখক

লেখক ও কলামিষ্ট

সায়েক এম রহমান

You might also like