বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আজকে শুধু ভিন্নমতের জন্যই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক একেএম ওয়াহিদুজ্জামানকে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে। কিন্তু কেনো? তারা কি কোনো অন্যায় করেছে? দুর্নীতি করেছে? তাদেরকে চাকুরিচ্যুত করার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইন রয়েছে সেই আইনের মধ্যে কী তারা পড়েছে? মোরাল টার্পিটিউড বা নৈতিক স্খলন হলে চাকুরিচ্যুত করা যায়।
শনিবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ড. মোর্শেদেক চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে কেনো আপনারা জানেন। তিনি জিয়াউর রহমানের বিষয়ে একটি প্রবন্ধ লিখেছেন সেজন্য। এটাই হচ্ছে অপরাধ।
অধ্যাপক ওয়াহিদুজ্জামান রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে ফেসবুকে লিখতেন। এজন্য তার বিরুদ্ধে মামলা করা হলো। আর চাকুরিচ্যুত করা হলো ড. মোর্শেদকে। ওয়াহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলা নিষ্পত্তি হয়নি। তার আগেই তাকে চাকুরিচ্যুত করা হলো। অর্থাৎ সরকার বিরোধী দল ও মতকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য এতদিন যে কর্মসূচী গ্রহণ করেছে সেটা হলো গুম, অদৃশ্য ও বিচারবহির্ভূত হত্যা। এতেও তারা শান্তি পাচ্ছে না।
তিনি বলেন, এখন তারা ওদেরকে শেষ করে দিতে চাচ্ছে। ওরা যেন না খেয়ে থাকে। ক্ষুধার্ত আর অনাহারে থাকে। তাই ভিন্নমতের লোকদেরকে তাদের কর্মকাণ্ড থেকে সরিয়ে দিতে হবে। শিক্ষকদের কর্মকাণ্ড কী? ছাত্রদের পড়ানো। শিক্ষকতা করা। ড. মোর্শেদ তাই করতেন। তিনি মেট্টিক থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি পর্যন্ত সবগুলোই ফার্স্টক্লাস পাওয়া। মেট্টিক ও ইন্টারমিডিয়েটে স্ট্যান্ড করেছে। তাকে বহিষ্কার করা হলো। ওয়াহিদুজ্জামানও সবগুলোতে প্রথম শ্রেণী প্রাপ্ত শিক্ষক। না হলে তো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া যায় না। ড. মোর্শেদের অতুলনীয় মেধা। সেজন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দেশের বৃহত্তম প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনি শিক্ষক। তাকে ভিন্নমতের কারণেই চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে।
রিজভী সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনি যদি বলে দেন যে, যারা ভিন্ন মতের ও দলে বিশ্বাসী তোমরা না খেয়ে থাকবে। তৃষ্ণায় তোমাদের পানি খাওয়ার অধিকার নাই। তোমরা ক্ষুধায় তৃষ্ণায় মরে যাও। এখন এই ধরনের কর্মসূচি দেন। আপনি তো গুম করেছেন। বিচারবহির্ভূত হত্যা করেছেন। আপনি জনপ্রতিনিধিদের অদৃশ্য করেছেন। ইলিয়াস আলী নেই, চৌধুরী আলম নেই, সাইফুল ইসলাম হীরু নেই। এখন সরকার চাচ্ছে যে তোমরা নিজেরা নিজেরাই মরে যাও। তোমাদের চাকরিও থাকবে না। যে ছেলেটি চারটি ফার্স্টক্লাস পাওয়া, বোর্ড স্ট্যান্ড করা। সে কী করবে এখন?
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্বশাসিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তার একটি আলাদা স্বাধীনতা আছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এতই মোসাহেব হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ ভিসি সাহেব এতই পা-চাটা হয়েছে যে, তিনি ড. মোর্শেদকে চাকুরিচ্যুত করার ব্যাপারে আইন-কানুনের তোয়াক্কা করেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো আইনে ড. মোর্শেদ ও ওয়াহিদুজ্জামানকে চাকুরিচ্যুত করা যায় না। চাকুরিচ্যুত করা যায় একমাত্র শেখ হাসিনার চোখ রাঙানিতে, শেখ হাসিনার ধমকানিতে, তার হুমকিতে। এজন্যই ড. মোর্শেদ ও ওয়াহিদুজ্জামানকে চাকুরিচ্যুত করেছে ঢাবি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি।
রিজভী বলেন, এখানে আইনের দরকার পড়েনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিধি-নিষেধের দরকার পড়েনি। কোনো ন্যায় ন্যায্যতার দরকার হয়নি। দরকার পড়েছে একজন ব্যক্তির নির্দেশ। সেই হুকুম তামিল করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি। আগে দেখতাম শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির অনুমতি ছাড়া ঢুকতে পারতো না। এখন অবলীলায় ঢুকে যায়। এখন ভিসি কোনো আইনের তোয়াক্কা না করেই চাকুরিচ্যুত করছে যারা ভিন্ন মতাবলম্বী, বিএনপি করে বা অন্য কোনো মতে বিশ্বাসী। এই হচ্ছে আজকের অবস্থা। অর্থাৎ বিএনপির লোক খেতে পারবে না, আহার করতে পারবে না, তোমাদের খাওয়ার অধিকার নেই, চলাচলের অধিকার নেই, মতপ্রকাশের অধিকার নেই, বাঁচার অধিকার নেই।
তিনি আরো বলেন, আমার যদি চাকুরি না থাকে খাবো কী করে? সন্তানদের পড়ালেখা করাবো কী করে? সরকারকে বলবো- এই অমানবিকতার অবসান ঘটান। ভাবছেন আপনার অনেক ক্ষমতা, ধরে নিয়ে গুম করবেন, জেলে ভরে দেবেন। কিন্তু কখন যে আপনার সিংহাসন চোরাবালির মধ্যে ডুবে যাবে আপনি সেটা টেরই পাবেন না। অবিলম্বে ড. মোর্শেদ ও ওয়াহিদুজ্জামাকে চাকুরিতে পুনর্বহালের দাবি জানাচ্ছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক একেএম ওয়াহিদুজ্জামানকে চাকুরিচ্যুতির প্রতিবাদে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে ফিউচার অব বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠন। সংগঠনের সভাপতি শওকত আজিজের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট ফয়সাল প্রধানের পরিচালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন আরো বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আবদুর রহিম, জামাল হোসেন, কেজি সেলিম, সোহেল খান, রেজাউল হোসেন অনিক, পাভেল মোল্লা, আলআমিন হোসেন প্রমুখ।