ধুর ভাল্লাগেনা। সারাদিন এতো ধাপ্পাবাজি, জালিয়াতি, জোচ্চুরি। কয়টার জবাব দেবেন? কয়টার ব্যাখ্যা দিবেন? একদল পাক্কা জালিয়াত ও জোচ্চর আমাদের অতীত ইতিহাসের তো পাইন মেরেছেই, এখন চোখের সামনের ঘটনা নিয়েও ভয়ংকর জালিয়াতি করে চলেছে।
মিথ্যাচার, ভণ্ডামি ও প্রতারণা করে এরা দেশটার বারোটা বাজিয়ে ছেড়েছে। তবুও ওদের বিরাম নেই। থামছে না ওদের মিথ্যার বেসাতি।
চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রদীপ নামে পুলিসের ট্রিগার হ্যাপি এক খুনী ওসি ক্রসফায়ার করে এন্তার মানুষ মেরে যাচ্ছিল। জুলুম-অত্যাচার করে মিথ্যা মামলা সাজিয়ে মানুষের কাছ থেকে বিপুল অংকের টাকা ঘুষ নিচ্ছিল। কেউ প্রতিবাদ করার ছিল না। কেননা এসব খুনখারাবি ও জুলুমবাজির পুরষ্কার হিসেবে রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায় থেকে তাকে বারবার পদকে ভূষিত করা হচ্ছিল। কেননা এদের দিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করে জনগণকে দমিয়ে রেখে অনৈতিক শাসনকে প্রলম্বিত করাই এখনকার রাষ্ট্রীয় নীতি।![]()
![](https://sangramtv.com/wp-content/uploads/2020/08/117346026_10208075777288404_2147624350568204854_n-300x224.jpg)
কিন্ত প্রদীপের পাপের পেয়ালা বুঝি কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। তাই হঠাৎ করে বাতাসেই নড়ে উঠলো ধর্মের কল। চক্রান্ত করে আর্মির এক রিটায়ার্ড মেজরকে এই প্রদীপ ও আরো কয়েকজনে মিলে ট্রাপে ফেলে খুন করে। এই ব্যাপারটা আর ধামাচাপা দেয়া যায়নি। এ নিয়ে শোরগোল ও হট্টগোল শুরু হয়ে যায় সবখানে। তোলপাড় হয়ে যায় ফেসবুক কম্যুনিটিতে। মুখে কুলুপ এঁটে থাকা মিডিয়াও উচ্চকিত হয়। তার পাপের কাণ্ড চারদিকে চাউর হতে থাকে।
এতে প্রদীপের আশ্রয় প্রশ্রয়দাতা সরকার বিপাকে পড়ে। তুমুল সমালোচনা ও নিন্দার ঝড় ওঠে। তাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদক পরাচ্ছেন এমন ছবি ভাইরাল হয়। ক্ষমতাসীনদের ধ্বসে পড়া ইমেজ রক্ষায় এই পর্যায়ে ফরমায়েশি প্রচারদল মাঠে নামে।
এদের একটা বস্তাপচা কুৎসিত অপকৌশল আছে। সেই অপকৌশলটা অচল হলেও তারা এটি প্রয়োগ করে খুব মজা পায়। কৌশলটি হলো ক্ষমতাসীনদের মদদপুষ্ট ভয়ংকর কোনো পাপী অপরাধী ধরা খেয়ে গেলে তাকে আওয়ামীলীগে অনুপ্রবেশকারী বলে প্রচার শুরু করা। বলে দেয়া হয়, অতীতে সে বিএনপি ছিল। নিদেন পক্ষে হাওয়া ভবনের সাথে তার হাওয়াই কানেকশনের কথা বলে দিতে তো আর কোনো তথ্যপ্রমাণ লাগে না।
প্রদীপের ক্ষেত্রেও তাই শুরু হলো। বলা হলো ১৯৯৫ সালে প্রদীপ পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টরের চাকরি পায়। সেটা ছিল বিএনপি আমল। কাজেই খুব সহজেই বলে দেয়া গেলো প্রদীপ ছাত্রদলের ক্যাডার ছিল। কোন এক ছাতামাথার কাগজ তো লিখেই দিলো কক্সবাজারের বিএনপি নেতা সালাউদ্দিনের ক্যাডার ছিল প্রদীপ। অথচ ১৯৯৫ সালে সালাউদ্দীন কক্সবাজারে বিএনপি নেতা ছিলেন না। তিনি নিজেই তখন সরকারি চাকরি করতেন। কাগজে আরো লিখে দিল এবং প্রচারও হয়ে গেলো তদানীন্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খান তাকে পুলিশের চাকরি দেন। বিএনপিত্যাগী মোরশেদ খান ফেরেশতা নন। কিন্ত বেয়াকুফ সাংবাদিক সা’ব গল্প লেখার সময় তলিয়ে দেখলেন না ১৯৯৫ সালে উনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন কি-না!
১৯৯৫ সালে আব্দুল মতিন চৌধুরী হোম মিনিস্টার ছিলেন। তখনো পুলিস সহ বিভিন্ন সরকারি নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয়করণের এমন কলঙ্কছাপ পড়েনি। পুলিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারেরাই তখন এসব পদে রিক্রুট করতেন।![]()
![](https://sangramtv.com/wp-content/uploads/2020/08/117663661_10208075777688414_7293801393989557288_n-300x225.jpg)
জনতার মঞ্চ নামে আমলা বিদ্রোহ ও জেনারেল নাসিমের অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার পটভূমিতে ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এসে দলীয়ভিত্তিতে সরকারি নিয়োগের যে কুপ্রথা চালু করে ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় এসে তা অনুসরণ করে। এখন সেই কণ্টকবৃক্ষ মহিরুহে পরিণত হয়েছে। আগাছার ব্যাপক বাড়-বাড়ন্তে শষ্যক্ষেত ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।
প্রদীপ যদি পুলিসের সাব-ইন্সপেক্টর পদে ১৯৯৫ সালে চাকরি পেয়েই থাকে তার পেছনে কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বা বিবেচনা কাজ করেনি। তাছাড়া প্রদীপ নামে কোনো পুলিস সাব-ইন্সপেক্টরের নামও তখন শোনা যায়নি। প্রদীপের মতন পুলিশের একটা মাঠ পর্যায়ের অফিসার অল্প সময়ের মধ্যে দেড়-দুশো লোককে গুলী করে মারার এবং কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাবার ঘটনাও তখন ঘটেনি। সরকারের তরফে এমন বেপরোয়া খুন-সন্ত্রাসকে মদত দেয়ার ব্যাপারও তখন ছিল না। এসব কথা সবাই জানে বলে এই প্রচারণায় হালে পানি পায়নি।
তখন জালিয়াত চক্র নতুন এক জালিয়াতি নিয়ে নামে। ওরা একটা ছবি বাজারে ছাড়ে, যে ছবিতে দেখা যাচ্ছে যে, খালেদা জিয়াও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রদীপকে পদক পরিয়ে দিচ্ছেন। কোনো যাচাই বাছাই ছাড়াই এই ছবি কোনো কোনো পত্রিকা নামের ব্যাঙের ছাতায় ছাপা হয়। জালিয়াতরা ফেসবুকেও ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে দেয় এই ছবি।
প্রদীপ কোন্ সালে পুলিসের চাকরি পেয়েছে, কখন সে প্রমোশন পেয়েছে, কোন্ সালে কী পদক পেয়েছে সেগুলো কোনো গুপ্ত বিষয় নয়। প্রদীপের ফাইলে ও পুলিস দপ্তরে এবং মন্ত্রনালয়ে এসবের রেকর্ড আছে। সেখান থেকে সব কিছু খুব সহজেই যাচাই করে নেয়া সম্ভব। কিন্তু তা না করে মিথ্যা প্রোপাগান্ডার আশ্রয় নেয় জালিয়াতচক্র।
প্রদীপ কখনো কোনো অবস্থানেই ছাত্রদল করেনি। বিএনপির কোনো মন্ত্রীর সুপারিশেও তার চাকরি হয়নি। সে ১৯৯৫ নাকি ১৯৯৬ সালে পুলিসে ঢুকেছে সেটা তার ফাইল থেকে সাংবাদিকরা যাচাই করে নিতে পারেন সহজেই। তবে তাকে প্রমোশন দিয়ে ইন্সপেকটর বানানো হয় ২০০৯ সালে। বিভিন্ন থানার ওসি সহ তাকে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ পোস্টিং দেয়া হয় তার বিরুদ্ধে ক্রমাগত গুরুতর সব অভিযোগ উঠা সত্বেও। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই তাকে প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডাল (পিপিএম পদক) দেয়া হয়। ২০১৯ সালে পুলিশের সর্বোচ্চ বিপিএম পদকে ভূষিত করা হয় ওসি প্রদীপ কুমার দাসকে।
আমি এই পোস্টে তিনটি ছবি দিয়েছি। প্রথম ছবিতে প্রদীপকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিপিএম পদক পরিয়ে দিচ্ছেন। দ্বিতীয় ছবিতেও শেখ হাসিনা পিপিএম পদক পরিয়ে দিচ্ছেন প্রদীপকে। এই দ্বিতীয় ছবিটি ভালো করে দেখুন। হুবহু একই ফর্মেটের ওই ছবিটি এডিট করে তৃতীয় ভুয়া ছবিটি বানিয়েছে জালিয়াতরা।
এই ভুয়া ছবিটিতে বেগম জিয়ার হোম মিনিস্টার এয়ার ভাইস মার্শাল (অবঃ) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও আইজিপি মুদাব্বির হোসাইন চৌধুরী আছেন। মুদাব্বির চৌধুরী ২০০১ সালের নবেম্বরে আইজি হন এবং ২০০৩ সালের ২২ এপ্রিল পর্যন্ত এ পদে ছিলেন। তিনি কেবলমাত্র ২০০২ সালের পুলিসের পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে আইজি হিসেবে উপিস্থিত ছিলেন। ২০০২ সালে সাব-ইন্সপেক্টর প্রদীপ কোনো পদক পায়নি। তাহলে এই ফটো এলো কোত্থেকে? জালিয়াতরা এডিট করে বানিয়েছে।
২০০২ সালের পুলিস সপ্তাহে পদক বিতরণ অনুষ্ঠানের ছবি থেকে খালেদা জিয়া ও অন্যদের কেটে তুলে এনে প্রদীপকে শেখ হাসিনার পদক পরিয়ে দেয়ার ছবির ফর্মেটে বসিয়ে দেয়া হয়েছে এডিট করে। ব্যস হয়ে গেলো প্রোপাগান্ডা ম্যাটেরিয়াল। জালিয়াতরা বলা শুরু করলো: এই নেন প্রমান। প্রদীপ বিএনপির লোক। সে আওয়ামী লীগ সেজেছে পরে।
খুশিতে ডগমগ হয়ে তারা ভাবলো, ছাত্রদল ক্যাডার, মন্ত্রীর সুপারিশে চাকরি, হাওয়া ভবন কানেকশন এবং আরো যত খুশি বানানো গল্প সব সত্য হয়ে যাবে এই এক ফোটোতেই। এই যে সাহেব দ্যাখেন, কেবল শেখ হাসিনা না, খালেদা জিয়াও তারে পদক দিছে!
সরকারের মদত, খুনী প্রদীপের অপরাধ সব ছাপিয়ে বাংগালের গসিপ শুরু হবে – কেউই ভালো না-রে ভাই, কেউই তুলশি পাতা না। এইযে দ্যাখেন ফটো।
তবে চোর আর জালিয়াত যতো চতুরই হোক কোথাও না কোথাও পায়ের ছাপ রেখে যায়। সেই ছাপ থেকেই ধরা খায় তাদের জোচ্চরি।
এডিট করে বানানো তিন নম্বর ছবিটা খুব ভালো করে দেখুন। অন্য ছবি থেকে খালেদা জিয়াদের কেটে এনে প্রদীপকে হাসিনার পদক প্রদানের ছবির ফর্মেটে বসানো হলেও একটা আলামত এডিট করতে ভুল করে ফেলেছে জোচ্চরেরা।
ভাইয়েরা আমার! ছবিতে খালেদা জিয়ার ঠিক পেছনে কালো বাক্সের মতো যে বস্তুটা আছে সেটা ভালো কৈরা খিয়াল করেন। দেখেন কালা বাক্সোটার গায়ে ছাপ মারা আছে মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের ফটো। খালেদা জিয়ার আমলে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে শেখ সাহেবের ফটো লাগাবের কোনো চল নিশ্চয়ই ছিলনা। আসলে এডিট করার সময় শেখ হাসিনার অনুষ্ঠানের ছবির ফরমেট থেকে উনার ফটোটা মুছে দিতে ভুলে গিয়েছিল এই বিখ্যাত নকলবাজেরা।
কী আর কইতাম রে ভাই? ভাল্লাগেনা আর এইসব!![?](https://static.xx.fbcdn.net/images/emoji.php/v9/t72/1/16/1f538.png)
![?](https://static.xx.fbcdn.net/images/emoji.php/v9/t72/1/16/1f538.png)
Copy
Maruf Kamal Khan
fb ওয়াল থেকে।