টিপকাণ্ডে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের গর্ভবতী স্ত্রীর বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হলো কেন ?

টিপকাণ্ডে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য নাজমুল তারেকের গর্ভবর্তী স্ত্রী বাইকের পেছনে বসে ছিলেন, সিসিটিভির ফুটেজে যা স্পষ্ট। কিন্তু সেই গর্ভবতী নারীর বিষয়টি কেন এড়িয়ে যাওয়া হলো ? অভিযোগকারী লতা সমাদ্দার থানায় যে অভিযোগ করেছেন, সেখানে কোথাও উল্লেখ করেননি, পুলিশ সদস্যের গর্ভবতী স্ত্রীর কথা। অথচ পুলিশ সদস্য ও লতা সমাদ্দারের বাকবিতণ্ডার সূচনাই হয় পুলিশ সদস্যের গর্ভবর্তী স্ত্রীর পায়ের সাথে ধাক্কা লাগাকে কেন্দ্র করে।

২.
লতা সমাদ্দার তার অভিযোগে মটর সাইকেলের নম্বর উল্লেখ করলেন , পুলিশ সদস্যের মুখে দাড়ির কথা উল্লেখ করলেন, বয়সের বিষয়টি উল্লেখ করলেন, চিকন না মোটা সেটাও উল্লেখ করলেন, কিন্তু পেছনে বসা গর্ভবতী নারীর কথা কেন উল্লেখ করলেন না ? এটা অবশ্যই একটা যৌক্তিক প্রশ্ন।

৩.
আমার ধারণা লতা সমাদ্দার ভেবেছিলেন, যদি পেছনে বসা গর্ভবর্তী নারীর কথা উল্লেখ করা হয়, তবে ইস্যুটা সেভাবে জমানো যাবে না, বরং গর্ভবর্তী নারীর দিকে সবার সেন্টিমেন্ট ঝুঁকে পড়বে।
তাই তিনি সেটা না করে মোড় ঘুড়িয়ে দিলেন টিপ বনাম দাড়ির দিকে।
অর্থাৎ একদিকে হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক ইস্যু, যেখানে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘ্রাণ আছে।
আরেকটা দিক হলো- নারীর পোষাকের প্রতি মৌলবাদীদের (দাড়িওয়ালাদের) সহিংসতা।

৪.
লতা সমাদ্দার যেহেতু মিডিয়া ও থিয়েটার স্টাডি বিভাগের শিক্ষিকা, সেহেতু তার সাথে অবশ্যই অনেক মঞ্চ বা পর্দা অভিনেতাদের সাথে যোগাযোগ আছে। তিনি সেই অভিনেতা-অভিনেত্রীর সিন্ডিকেট ব্যবহার তার ইস্যুটা ভাইরাল করেছেন। প্রথমে এক অভিনেত্রীকে দিয়ে সংসদে আলোচনা করিয়েছেন, অতঃপর অভিনেতা-অভিনেত্রী সবাইকে টিপ পরিয়ে নিজের পক্ষে আন্দোলনে নামিয়েছেন।
কথা হচ্ছে, তিনি সিন্ডিকেট শক্তি ব্যবহার করে এতগুলো মানুষকে আন্দোলনে নামালেন, কিন্তু নিজের মূল অভিযোগের ক্ষেত্রে পিউরিটি রক্ষা করলেন না, এটা কেমন অবস্থান হলো ?

৫.
আমি লক্ষ্য করেছি, বাংলাদেশের সংখ্যাগুরু মুসলিমদের মনের ভেতর যতটুকু না সাম্প্রদায়িকতা আছে, তার থেকে ঢের লুকিয়ে আছে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ভেতরে। হিন্দুরা তাদের সংখ্যালঘু ট্রাম্পকার্ড ব্যবহার করে কিভাবে মুসলমানদের সুযোগ বুঝে ল্যাং মারবে শুধু সেই তালে থাকে।
গ্রাম অঞ্চলে অনেক হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে দেখেছি পুলিশের কাছে অভিযোগ দিয়েছে, প্রতিবেশী মুসলমানরা নাকি তাদের মন্দির ভেঙ্গেছে। এই কথা শুনে পুলিশ ঐ মুসলমানকে গ্রেফতার করে জেলে ভরেছে। কিন্তু পরে ঘটনা তদন্ত দেখা যায় ভিন্ন, দ্বন্দ্বটা আসলে জমি-জমা কেন্দ্রীক। হিন্দু নিজেই নিজের মন্দির ভেঙ্গে মুসলমানকে ফাঁসিয়ে জেলে ভরেছে জমির উপর কর্তৃত্ব নিতে। সাম্প্রদায়িক ইস্যু সাজিয়েছে শুধু মুসলমানকে ফাঁসাতে, অন্য কারণ নয়। ঠিক একইভাবে, লতা সমাদ্দার শহুরে শিক্ষিত শ্রেণী হতে পারেন, একজন কলেজ শিক্ষিকা হতে পারেন, কিন্তু মনের ভেতর লুকিয়ে থাকা সেই সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প তার যায়নি। এ ঘটনাই তার প্রমাণ।

আরো পড়ুন