“পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে আমি বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মুসলমানদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ। ঈদ মোবারক।
ত্যাগের মহিমায় মহিমান্বিত প্রতি বছর ঈদুল আযহা আমাদের মাঝে ফিরে আসে। স্বার্থপরতা পরিহার করে মানবতার কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করা কোরবানীর মহান শিক্ষা। মানবিক মূল্যবোধে উদ্ভাসিত ঈদুল আযহা হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-ক্রোধকে পরিহার করে সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় আত্মনিবেদিত হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। কোরবানীর যে মূল শিক্ষা তা ব্যক্তি জীবনে প্রতিফলিত করে মানব কল্যানে ব্রতী হওয়ার মাধ্যমে মহান আল্লাহ রাব্বুল আল আমিনের সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভ সম্ভব। বিশ্বাসী হিসেবে সে চেষ্টায় নিমগ্ন থাকা প্রতিটি মুসলমানের কর্তব্য। কোরবানী ঈদ বিশ্ববাসী মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দুটো ধর্মীয় উৎসবের দ্বিতীয়টি। উৎসব সকল ভেদরেখা অতিক্রম করে মানুষকে পারস্পরিক শুভেচ্ছাবোধে উদ্বুদ্ধ করে। মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয় ভ্রাতৃত্বের নিবিড় বন্ধন। সকল দ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা, প্রতিহিংসার বিষকে দুরীভুত করে সম্প্রীতির এক স্বর্গীয় অনুভুতি মানুষের মধ্যে জেগে ওঠে।
বিশ্বব্যাপী ভয়ংকর কোভিড-১৯ এর আঘাতে বিশ্বমানবগোষ্ঠীর জীবন, সমাজ, সংস্কৃতি যেন বদলে গিয়ে এক অচেনা রুপ ধারণ করছে। মানুষের দিন অতিবাহিত হচ্ছে আতঙ্ক ও ভয়ের মধ্যে। বাংলাদেশও সেই বৈশি^ক মহামারীতে আক্রান্ত। মানুষের জান, সহায়-সম্পদের কোনো নিরাপত্তা নেই। ঈদের প্রাক্কালে করোনা ভাইরাসের ছোবলে অসংখ্য প্রাণহানিসহ হাজার হাজার মানুষের অসুস্থতার ঘটনায় আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ভয়াল দুর্দিনে উৎসবের আনন্দকে ম্লান করে দেয়। দেশের বর্তমান অবস্থায় সকলের পক্ষে ঈদের আনন্দ যথাযথভাবে উপভোগ করা কঠিন হবে। একদিকে গণতন্ত্রহীনতায় এক শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় দিনযাপন করছে দেশবাসী, মত প্রকাশের স্বাধীনতার টুঁটি চেপে ধরে বিরোধী শক্তির ওপর চলছে হামলা-মামলা-গুম-গ্রেফতারের মতো নির্দয় নিপীড়ণ। এদিকে চাল, ডাল, লবন, পিঁয়াজ, মরিচসহ দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতি দরিদ্র ও কম আয়ের মানুষকে চরম দূর্ভোগের মুখে ঠেলে দিয়েছে। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের মানুষ আরো বিপন্ন হয়ে পড়েছে। পানি, জ্বালানী তেল, গ্যাস, বিদ্যূতের তীব্র সংকট, বর্ষার পানিতে সড়ক ও মহাসড়কের বেহাল অবস্থা জনজীবনে দূর্বিসহ অবস্থার সৃষ্টি করেছে। উত্তরাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় এবারে ভয়াবহ বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঘরবাড়ী, জোত-জমিসহ সহায় সম্পদ বানের পানিতে ভেসে গেছে। এখনও ভেসে যাওয়া বসতবাড়ীর শুণ্য ভিটায় ঠাঁই করতে পারেনি হাজারো মানুষ।
তাই আমি বিএনপি নেতাকর্মীসহ দেশবাসীকে করোনা ভাইরাসে আক্রমনের কারণে অসুস্থ রোগী ও নিন্ম আয়ের মানুষদের সহায়তা এবং বানভাসী অসহায় মানুষের প্রতি সাহায্য ও সহমর্মিতার হাত প্রসারিত করার জন্য আহবান জানাচ্ছি। ঈদের আনন্দের দিনে কেউ যাতে অভুক্ত না থাকে-সেদিকে আমাদের সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। ঈদের আনন্দকে ভাগ করে নিতে হবে সবাইকে এক কাতারে মিলে।
ঈদুল আযহা সবার জীবনে বয়ে আনুক সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি, সমাজে সৃষ্টি হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যরে মেলবন্ধন, মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে এই প্রার্থনা জানাই।
আল্লাহ হাফেজ, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।”