প্রস্তাবিত আইনটিতে পরিলক্ষিত হয় যে, ইতোপূর্বে ব্যবহৃত অধিকাংশ ইংরেজি ও বিদেশি শব্দের পরিবর্তে ‘বাংলা শব্দ’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া, রাজনৈতিক দলসমূহে ২০২০ সালের মধ্যে ৩৩% নারী সদস্য অন্তর্ভুক্তির যে বিধান গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ১৯৭২-এ সন্নিবেশিত রয়েছে, সে বিধানটি কার্যকর করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলসমূহের জন্য একটি বাস্তবসম্মত সময়সীমা নির্ধারণের জন্যই এই সংশোধনী প্রস্তাব আনা হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এই বিধান সর্বতোভাবে কার্যকর করার জন্য প্রস্তুত। মির্জা ফখরুল ইসলামের ‘সারাবিশ্ব এখন করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত। মানবিক দুর্যোগ চলছে। মানুষ বাসা থেকে বের হতে পারছে না। এ অবস্থায় ইসি উপ-নির্বাচন করতে চাইছে। এ মন্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, এটি নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব এখতিয়ার। এতে আমাদের কিছু বলার বা করণীয় নেই। তবে রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের ঝঃধশবযড়ষফবৎ হিসেবে আমরা জানতে পেরেছি, মূলত সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণেই নির্বাচন কমিশন এই উপ-নির্বাচনে যেতে বাধ্য হচ্ছে। উপ-নির্বাচন করার ক্ষেত্রে সাংবিধানিকভাবে আরোপিত যে বাধ্যতামূলক সময়সীমা রয়েছে, তা প্রতিপালনের জন্যই নির্বাচন কমিশন এই করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও উপ-নির্বাচন করতে বাধ্য হচ্ছে বলে আমরা আইন বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি। এসব নির্বাচনী আসনগুলোতে আমাদের এমপি ছিল,আমরাই সেখানে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছিলাম। নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণেই নির্বাচন করছে, এটি তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। এখানে আমাদের কীইবা করণীয় আছে! তিনি বলেন, সকল রাজনৈতিক দলকে বুঝতে হবে যে, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও পৃথিবীর অনেক দেশে সাংবিধানিক বাধ্যবাধতার কারণে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এরমধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুরে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ক্রোয়েশিয়ায় নির্বাচন হয়েছে। ফ্রান্সে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ‘ইসি বিগত নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগকে সহযোগিতা করেছে। সেনাবাহিনীকে অকার্যকর করেছে’ এমন মন্তব্যের প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, এই কথাগুলো বলে তিনি কী বোঝাতে চাইছেন, তা আমাদের বোধগম্য নয়। “সেনাবাহিনীকে অকার্যকর করেছে” এই কথার অর্থ কী? কীভাবে অকার্যকর করা হলো? সেনাবাহিনীর মতো রাজনীতির উর্ধ্বে থাকা একটি জাতীয় বাহিনীকে নিয়ে এই ধরনের আপত্তিকর ও দূরভিসন্ধিমূলক বক্তব্য মোটেও সমীচীন নয়। এই ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য থেকে সকলে বিরত থাকা উচিত। এই ধরনের বক্তব্য প্রদান করে আমাদের গর্বিত সেনাবাহিনীর মর্যাদা ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। তিনি বলেন, জনাব মির্জা ফখরুলের কথায় মনে হচ্ছে, এদেশে ততদিন পর্যন্ত কোন নির্বাচনই বিএনপি’র দৃষ্টিতে নিরপেক্ষ বিবেচিত হবে না, যতদিন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন বিএনপিকে নির্বাচনে জেতার কোন গ্যারান্টি না দেবে। মনে হচ্ছে, নির্বাচন কমিশনের কাছে বিএনপি সে ধরনের একটি ‘গ্যারান্টি ক্লজ’ চাচ্ছে। ‘দেশে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে খালেদা জিয়াকে জেল খাটতে হয়েছে, তারেক রহমানকে বিদেশে নির্বাসিত জীবন যাপন করতে হচ্ছে’ বিএনপি মহাসচিবের এমন বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়া ফৌজদারি আইনের অধীন দেশের প্রচলিত আদালতের বিচারে প্রথমে অভিযুক্ত ও পরে দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে ছিলেন। এর সাথে রাজনীতির কোন সম্পর্ক নেই। আমাদের আইনি ব্যবস্থায় কেউই আইনের উর্ধ্বে নয়। বরং আওয়ামী লীগ সরকার সম্পূর্ণ মানবিক কারণে সরকারের সর্বোচ্চ আইনি ক্ষমতা প্রয়োগ করে তাঁকে মুক্তি দিয়েছে। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি তাদের আজীবন কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। তিনি বলেন, তারেক রহমানকে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাসনে পাঠায়নি। এদেশে ‘দুর্নীতির প্রতিভূ’-খ্যাত ফ্রাঙ্কেস্টাইন তারেক জিয়া ওয়ান-ইলেভেন সরকারের কাছে “আর কখনও রাজনীতি করবো না”- এ মর্মে মুচলেকা দিয়ে ও তাদের কাছে মাফ চেয়ে জেল থেকে মুক্তি পেয়ে দেশ ত্যাগ করেছিল। তার এই তথাকথিত নির্বাসনে আওয়ামী লীগ সরকারের কোন ভূমিকা নেই। তবে তারেক জিয়া একজন দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি, যার কয়েদী হিসেবে জেলে থাকার কথা, তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে দণ্ড কার্যকর করার জন্য সরকার আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
নির্বাচন কমিশন ও আওয়ামী লীগ নিয়ে বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। শুক্রবার রাতে দেয়া বিবৃতিতে তিনি বলেন, এক অনলাইন আলোচনায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রদত্ত ‘নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইনের সংশোধনের যে উদ্যোগ নিয়েছে, তার উদ্দেশ্য হলো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে বারবার ক্ষমতায় আনা। ওয়ান-ইলেভেন থেকে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’ তার বক্তব্য সম্পূর্ণ অসত্য, বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ষড়যন্ত্রমূলক। রাজনৈতিক শিষ্ঠাচার বহির্ভূত এ ধরনের মন্তব্য দেশবাসীকে গভীরভাবে হতাশ করেছে। বিবৃতিতে তিনি বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলামের এ ধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ষড়যন্ত্রমূলক বক্তব্য দেশবাসীকে গভীরভাবে হতাশ করেছে। সার্বভৌমত্ব ও সাংবিধানিক নিয়ম-নীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল কোন ব্যক্তি বা রাজনৈতিক দলের দায়িত্বশীল নেতা এ ধরনের মন্তব্য করতে পারেন না। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ১৯৭২-এ রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন সংক্রান্ত যে বিধান রয়েছে, সেগুলো আরপিও থেকে বের করে এবং এর মৌলিক বিধান অক্ষুণ্ন রেখে বাংলায় আলাদা একটি আইন করতে যাচ্ছে। ওই প্রস্তাবিত আইনের যে খসড়া নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের জন্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, আইনের অর্থাৎ আরপিও’র ওই অংশগুলো মূলত বাংলায় রূপান্তরিত করার জন্যই এই আইন করা হচ্ছে।