কে এই চাঁদাবাজ রব্বানী?

কামরুননাহের শাহানাঃ ডাকসু জিএস গোলাম রাব্বানীর আমলনামা, বিএনপিপুত্র ছাত্রলীগ নেতা!

আবারো আলোচনায় ডাকসু জিএস গোলাম রাব্বানী। নানা অপকর্মে জড়িত থাকার দায়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া রাব্বানীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও কমিটি বাণিজ্যের গুরুতর অভিযোগের পর তার বিলাসী জীবনযাপন নিয়েও আলোচনা কম হয়নি।

এরপর গত রোববার, ‘ভিপি নুরুল হক নুর আহত নাকি নিহত হয়েছেন, ডাজ নট ম্যাটার’ বক্তব্যের পর ‘কেঁচো খুড়তে বেড়িয়ে আসতে শুরু করেছে সাপ’। পদ হারানোর পর থেকেই ঐতিহ্যবাহী সংগঠনটির গায়ে কালিমা লেপনের জন্যই এই বক্তব্য দিয়েছেন বলে মনে করছেন অনেকে।

তাদের দাবি, মাদারীপুর রাজৈর থানা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল রশিদ মাস্টারের এই সন্তান স্বাধীনতার চেতনায় উদ্ভাসিত হয়ে নয়, বরং ছাত্রলীগকে পুঁজি করে উদরপূর্তিতে ব্যস্ত থেকেছেন সব সময়। তার ক্ষমতায় থাকাকালীন রেখে যাওয়া নেতাকর্মীদের নিয়েই এসব অনৈতিক ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি

রাব্বানীর আদি বাড়ি মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বদরপাশা ইউনিয়ন সূত্রে জানা যায়, তার বাবা রশিদ মাস্টার ১৯৮১ সালে রাজৈর থানা ছাত্রদলে সভাপতি পদে নির্বাচন করেন। এ বছর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের বিরুদ্ধেও রাজৈরে বিক্ষোভ মিছিলের নেতৃত্ব দেন তিনি। পরে তিনি থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদকও হন। যে কমিটির সভাপতি ছিলেন শামসুল হক। ছাত্রাবস্থায় তিনি ছাত্র শিবিরের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। ওয়ান ইলেভেন চলাকালীন ঘুষ নেওয়ার সময় হাতেনাতে গ্রেফতার হয়ে জেলও খাটেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে, সেই রশিদ মাস্টারের বড় ছেলে গোলাম রাব্বানী ছাত্রলীগের পদ পাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কখনো ‘জয় বাংলা’ও বলেননি। যদিও এসব কথা অস্বীকার করে ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেন রশিদ। তিনি দৈনিক ভোরের পাতাকে বলেন, ‘সবই ছিল সাজানো।’ 

বর্তমান উপজেলার নির্বাচিত নেতাদের একজন নাম প্রকাশ না করার সূত্রে জানান, রাব্বানীর পরিবার বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত হিসেবেই সবাই চিনত। রাব্বানীর বাবা বিভিন্ন সময়ে জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। যদিও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে এসে রাব্বানী এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করেন এবং তার ভয়ে বিএনপি পরিবারটি ‘লীগ পরিবার’ হিসেবে পরিচিতি পায়। 

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কয়েকজন সাবেক নেতা জানান, রাব্বানীকে বিএনপি নেতা পারভেজ আহমেদসহ অনেক জামায়াত নেতার গোপন এজেন্ট হিসেবে মনে করা হত। তিনি বিভিন্ন সময়ে অভিনয় করে এবং কুটকৌশলের মাধ্যমে ফেসবুকে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। পরে ছাত্রলীগে পদ পেয়ে এর অপব্যবহার শুরু করেন। বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের ম্যানেজ করে বিপুল অংকের অর্থ আত্মসাৎ করেন। যা প্রধানমন্ত্রীর চোখেও ধরা পড়ে বলেই তিনি পদ হারান। 

গোলাম রাব্বানীর বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ দৈনিক ভোরের পাতাকে বলেন, ‘আমি মূলত গোলাম রাব্বানীকে চিনি বঙ্গবন্ধু হলে রাজনীতি করার সুবাদে। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পরে বিভিন্ন সময়ে নানা অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে অনেকবার বুঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু তা তিনি শোনেননি।’

ছাত্রলীগ থেকে পদ হারানো, এরপরও দুর্নীতি এবং রোববার প্রশ্নবিদ্ধ উস্কানিমূলক মন্তব্যের পর রাব্বানীকে ছাত্রলীগে রাখা না রাখা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন জন্ম নিয়েছে। এ প্রসঙ্গে সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্যর মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি। 

এ বিষয়ে ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি খান আসাদুজ্জামান মাসুম দৈনিক ভোরের পাতাকে বলেন, ‘দুর্নীতি, টেন্ডারবাজিসহ নানা অপকর্মের দায়ে সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর গোলাম রাব্বানীর ছাত্র সংসদের জিএস পদে থাকাটাই প্রশ্নবিদ্ধ। আর যেহেতু তার দুর্নীতি প্রমাণিত, তাই ছাত্র রাজনীতি করার কোনো নৈতিক অধিকার রাখেন না গোলাম রাব্বানী।’ 

এসব অভিযোগের বিষয়ে ডাকসু জিএস গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি।

source dailyvorerpata

আরো পড়ুন