তারেক রহমান- ভূত তাড়ানোর মন্ত্র জানেন যিনি-ব্যারিস্টার আবু সায়েম

সংগ্রাম ডেস্ক: সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে এসে ইংল্যান্ডের আবহাওয়া তার রূপের পসরা খুলে বসেছে। গেলো শনিবার থেকে চলছে একটানা রৌদ্রোজ্জ্বল দিন, ঝকমকে আকাশ। তাপের দহন নেই, কিন্তু চারদিকে মিষ্টি রোদের ছড়াছড়ি। সঙ্গত কারণেই সবার মনে ফূর্তি ফূর্তি ভাব। হালকা পোশাকে রাস্তায় হাঁটছেন লন্ডনবাসীরা, পার্কে যাচ্ছেন, লেকের ধারে সময় কাটাচ্ছেন। অনেকে আবার শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছেন সমুদ্রের কিনারে। আন্ডাবাচ্চাসহ বেলাভূমিতে লুটোপুটি খাচ্ছেন তারা, নেমে যাচ্ছেন ঢেউয়ের পানিতে।  

মঙ্গলবার দিনটিও ছিল এক কথায় অপূর্ব। সকাল থেকে পরিবেশে স্বচ্ছ কাঁচের নির্মলতা, ফুরফুরে বাতাস। মন ভালো না থাকার একদমই উপায় নেই। সারাদিন কাজে-অকাজে এদিকসেদিক ঘোরাঘুরির পর শেষ বিকেলে গেলাম চেয়ারম্যান মহোদয়ের সাথে দেখা করতে। দেশের দুজন রাজনৈতিক সহকর্মী ও এখানকার একজন বড় ভাইসহ সন্ধ্যের অনেকখানি সময় কেটেছিলো প্রিয় নেতার সান্নিধ্যে। আমার ভয় ছিলো, তার চেহারায় দুশ্চিন্তার ছাপ পাবো। তিনি হয়তো কিছুটা অমনোযোগীও থাকবেন। ছাত্রদলের কাউন্সিলে সরকারি আদালত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। কীভাবে কী হবে সে নিয়ে চলছে সীমাহীন অনিশ্চয়তা। ফাঁকতালে গুজবের ডালপালাও গজাচ্ছে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে। এমন পরিস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে হাসিখুশি দেখতে পেয়ে খুবই অবাক হলাম। তার চেয়েও বড় কথা, নেতার চোখেমুখে খেলা করছিলো প্রফুল্লতা, প্রশান্তির আমেজ। আলোচনার মাঝে খানিকটা বিরতি নিয়ে মাগরিবের নামাজ আদায় করলেন তিনি। আলোচনা আরও ছিলো, কিন্তু শেষ হওয়ার আগেই বিদায় নিতে উঠে দাঁড়ালেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। আমার কাঁধে হাত রেখে বললেন, আজ আর পারবো না সায়েম। সেই সকাল থেকে শুরু করেছি। বাকি বিষয়গুলো নিয়ে সহসাই আমরা বসবো।”

গতকাল সারাদিন ধরে ছাত্রদলের কাউন্সিলকে ঘিরে দেশেবিদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের মনে ছিলো টানটান উত্তেজনা। একদিকে সরকারি আদালতের পরোয়ানা, অন্যদিকে ঘরের দোরে গণতন্ত্রের বিজয়। উৎকন্ঠা-উদ্দীপনার মাঝে জানতে পারলাম, সব কাউন্সিলরকে দলীয় কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে। হঠাৎ খবর এলো, ভোট শুরু হবে। কিন্তু তার আগেই অন্ধকারের ভূতেরা সক্রিয় হয়ে উঠলো। নয়াপল্টনে বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হলো। মধ্যরাতের অপশক্তির ভয়ভীতি ও গ্রেপ্তারের মুখে পড়লো কাউন্সিলরসহ ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। তবে কিছুতেই দমানো গেলো না বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ধারকবাহকদের। মুহূর্তের সিদ্ধান্তে সমাবেশস্থল চলে গেলো স্থায়ী কমিটির সদস্য, অকুতোভয় রাজনীতিবিদ জনাব মির্জা আব্বাসের শাহজাহানপুরের বাসায়। সেখানেও বন্ধ হয়ে গেলো বিদ্যুৎ সরবরাহ। এরপর যা ঘটলো, তার নাম কেবলই ইতিহাস। 

রাতে বাসায় ভাতৃসম এক অনুজকে নিয়ে সুস্বাদু বিরিয়ানি খেতে খেতে যখন ছাত্রদলের নির্বাচনী ফলাফল মনিটর করছিলাম, তখনই হঠাৎ বুঝে গেলাম কেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গতদিন এতটা নির্ভার ছিলেন। আসলে সব আয়োজনই তার মাথায় সাজানো ছিলো। সর্ষের ভূত, জঙ্গলের ভূত কীভাবে তাড়াবেন, নিজের মনে সে ছক তিনি  নিখুঁতভাবেই এঁকে রেখেছিলেন। সর্বনাশা, পরগাছা এক শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এমন একটি বিজয় ছিনিয়ে আনার গল্পটা যে তিনি আগেভাগেই লিখে রেখেছিলেন, সেটা কারো কল্পনাতেই আসেনি। তারেক রহমান বুঝতে পেরেছিলেন, অবৈধ সরকার কোন কোন দিক থেকে খেলবে। তিনিও গেমের কৌশল সেভাবেই তৈরি করেছেন। তারেক রহমান নিশ্চিত ছিলেন, গণতন্ত্রের বিজয় ঘটতে যাচ্ছে। সেকারণেই আগের দিন সন্ধ্যায় তার মুখে নির্মল প্রশান্তি দেখেতে পেয়েছিলাম। 

এখন নিশ্চয়ই কারো বুঝতে বাকি নেই, তৃণমূল রাজনীতির প্রবক্তা তারেক রহমানকে দেশীবিদেশী শক্তির কেনো এতো ভয়। রাজনীতির এ প্রমিথিউস আছেন বলেই আমরা বিশ্বাস রাখতে পারি, গণতন্ত্রের মুক্তি মিলবেই। 

দেশনেতা তারেক রহমান ভূত তাড়ানোর মন্ত্র জানেন।

You might also like