দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে আ.লীগ সরকারকে হটাতে হবে: বিএনপি

আওয়ামী লীগ আর গণতন্ত্র একসঙ্গে যায় না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য খন্দকার মোশারফ হোসেন।

তিনি বলেন, ‘আজকের প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ক্ষমতায় এলে ১০ টাকা কেজি দরে চাল খাওয়াবেন।

তারা একটা কথাও রক্ষা করেননি। জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। বার বার মানুষকে ঠকিয়েছেন। তাদের হাতে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে না। আর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার না হলে এদেশের ভোটের অধিকার আসবে না। ’

‘আজ দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ, তারা নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। নিজের হাতে ভোট দিয়ে নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু এ আওয়ামী লীগের হাতে সুষ্ঠু নির্বাচন তো দূরের কথা আর কোনো নির্বাচনই হতে পারে না। অতএব সুষ্ঠু নির্বাচন চাইলে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে। তা করতে হলে ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে স্বাধীনভাবে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিতে হবে,’ যোগ করেন তিনি।

প্রবীণ এ বিএনপি নেতা আরও বলেন, ‘আজকের এ সরকারের কাছে দাবি করে কোনো লাভ নাই। একটাই টার্গেট, দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে, বিদেশে আমাদের ভাবমূর্তি ফিরিতে আনতে এ সরকারকে হটাতে হবে এবং জনগণকে মুক্ত করতে হবে। সামনে আন্দোলন, দ্রব্যমূল্য কমাতে হবে, গণতন্ত্র দিতে হবে, তা না হলে পদত্যাগ করে দেশে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ’

গতকাল বুধবার (২ মার্চ) সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ নগরীর নতুন বাজারস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে জেলা দক্ষিণ ও উত্তর বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে খন্দকার মোশারফ হোসেন আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বার বার গণতন্ত্র হত্যা করেছে, তারা গণতন্ত্র উপহার দিতে পারে না। আওয়ামী লীগ আর গণতন্ত্র একসঙ্গে যায় না। ’

তিনি বলেন, ‘আজ দ্রব্যমূল্য কে বৃদ্ধি করেছে? আওয়ামী লীগ এখন হাইব্রিড সরকার। তারা দেশের অর্থনীতি, ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে আওয়ামী লীগ সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেট দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি থেকে শুরু করে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। চালের দাম ছিল ১৬ টাকা, এখন ৫০ টাকা কেজি।

এদিন টাঙ্গাইল জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, নতুন নির্বাচন কমিশনের যে ইতিহাস, এরই মধ্যে আপনারা খবরের কাগজ ও বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় দেখেছেন। এ সমস্ত সরকারি সুবিধাভোগী শ্রেণি দিয়ে কখনও নির্বাচন কমিশন হতে পারে না।

আমরা এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না।

আমাদের একটাই দাবি, ‘এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। ’ এ সরকারকে আমরা ইনশাআল্লাহ তাড়াব, যোগ করেন তিনি।

মির্জা আব্বাস বলেন, নতুন নির্বাচন কমিশন হবে একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। তা যদি না হয়, এ নির্বাচন কমিশনে যে কাউকে বসালে কোনো লাভ হবে না, সরকার দ্বারা পরিচালিত হবে। নির্বাচন কমিশন কিছু করতে পারবে না। আমরা নিরপেক্ষ সরকার চাই, নিরপেক্ষ সরকারের মাধ্যমে আমরা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব। তারেক রহমানকে আবার দেশে নিয়ে আসব। এ দেশের সার্বভৌমত্ব স্বাধীনতা ইনশাআল্লাহ রক্ষা করব।

তিনি বলেন, এক ভদ্রলোক রাগে দুঃখে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ‘৪০ টাকা হালি ডিম কিনিয়া, ১৮০ টাকা লিটার তৈল দিয়ে ভাজিয়া, ১২৬০ টাকা গ্যাসের চুলায়, ৭০ টাকার চালের সঙ্গে ১২০ টাকার ডাল একসঙ্গে মাখাইয়া খাইলাম। অতঃপর আকাশের দিয়ে তাকাইয়া আমরা স্যাটেলাইট বানাইলাম, স্যাটেলাইট তো দেখা যায় না। এই যে স্যাটেলাইট, স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বাংলাদেশের যে কত হাজার কোটি টাকা ফ্রান্সে পাঁচার হয়েছে, সেই খবর দেশবাসী জানে না। ’

আব্বাস উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্য করে বলেন, কাকে শাসন করতে এসেছেন? আমরা যে কথা বলব, এটা তো আপনাদের মনের কথা। আপনারা বলতে পারছেন না, কিন্তু আমরা বলতে পারছি। এটা তো আপনাদের মনের কথা, আপনাদের আত্মীয়-স্বজন ও পরিবারের সবার মনের কথা। আপনিও এর মধ্যে আছেন। আপনি ভাবতে পারেন, রেশন পান, টাকাটা খুব কম লাগে, তা কিন্তু না। রেশন তো আর সবাইকে দেওয়া হয় না। রেশন তো শুধুমাত্র পুলিশ ভাইয়েরাই পান। আর কেউ পায় না। আমরা তো আপনাদের কথা বলছি, দেশের মানুষের কথা বলছি। আর আপনারা লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তবে একটা কথা আপানাদের বলতে চাই, এ লাঠি, এ বন্দুক- কামান ওই লুটেরাদের দিকে ঘুরিয়ে দিতে পারেন, যে লুটেরারা আপনাদের ও দেশের মানুষকে লুটেপুটে খাচ্ছে।

এছাড়াও এদিন গাজীপুর জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, দেশে মানুষের আয় কম, ব্যয় বেশি। কর্মসংস্থান সংকুচিত। দেশে ১০-১২ বছর ধরে নতুন কোনো শিল্প কলকারখানা গড়ে উঠেনি, বরং পর্যায়ক্রমে বন্ধ হচ্ছে বিভিন্ন কলকারখানা। যার কারণে বেকারত্ব বেড়েই চলেছে। দিনমজুররা কাজ পায় না, অপরদিকে জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলেছে। সরকার নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।

তিনি বলেন, সারাবিশ্বে তেলের দাম যখন কমছে, তখন আমাদের দেশে তেলের দাম বারবার বেড়েই চলেছে।

গয়েশ্বর বলেন, দেশের মালিকানা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিতে বিএনপি অবিরাম সংগ্রাম করে আসছে। অথচ বর্তমান সরকারের আমলে দেশে মেগা প্রকল্পের নামে মেগা লুটপাট চলছে। দেশের মুদ্রা পাচার হয়ে যাচ্ছে। গত ১২ বছরে ১০ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। দুর্নীতির মাধ্যমে লুণ্ঠিত টাকা বিদেশে পাচার করে সরকার এখন জনগণের পকেট কেটে বিদ্যুৎখাতে ভর্তুকি দিচ্ছে।

সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের চুরি করা টাকার ক্ষতিপূরণের দায়িত্ব জনগণের নয়। বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বাড়লে সব কিছুর দাম বাড়ে। অবিলম্বে এ দু’টির দামসহ সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমান।’

এছাড়াও গতকাল বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খাঁন বলেছেন, নিত্য প্রয়োজনীয় দৃব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দেশে আজ শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির চাপে জনজীবনে নাভিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে।

বগুড়ার নবাব বাড়ি রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি এবং দুর্নীতির প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বগুড়া জেলা বিএনপি আয়োজিত বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এসময় তিনি বলেন, জনগণের কাছে জবাবদিহিতা ও দায়বদ্ধতা নেই বলেই বর্তমান সরকার দফায় দফায় পানি, তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের দামসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম লাগামহীন বাড়িয়েছেন। কিন্তু জনদুর্ভোগ লাঘবে সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই। কারণ বর্তমান সরকার জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসেনি। তারা দিনের ভোট রাতে করে দখলদারীর মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা ছাড়া অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়।

বগুড়া জেলা বিএনপির আহবায়ক ও বগুড়া পৌরসভা মেয়র রেজাউল করিম বাদশার সভাপতিত্বে বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আলী আজগর তালুকদার হেনার পরিচালনায় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, আমরা বিশ্বাস করি আওয়ামী লীগ যদি নির্বাচনের সময় সরকারে থাকে, তাহলে কোনো নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারবে না। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা ছেড়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।

‘সার্চ কমিটি চোরদের সহযোগী’ মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী এদিন বলেছেন, সার্চ কমিটি নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। এদেশে কেয়ারটেকার সরকার ছাড়া আর কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।

নিরপেক্ষ সরকারের অধিনেই নির্বাচন দিতে হবে, তা নাহলে জনগণ একনায়কতন্ত্র রুখে দেবে।

খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে বিকেলে বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দেশে আজ শাসরুদ্ধকর অবস্থা বিরাজ করছে। জনগণের কাছে জবাবদিহিতা ও দায়বদ্ধতা নেই বলেই বর্তমান সরকার দফায় দফায় পানি, তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে জনজীবনে এক দুর্বিষহ অবস্থার সৃষ্টি করেছে। নিত্যপণ্যের বাজার সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। সরকারের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই।

আওয়ামী লীগের নেতারা দুর্নীতিবাজ মন্তব্য করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতারা আজ বড় বড় প্রকল্পের নামে তহবিল চুরি করছে। বাদ যাচ্ছে না যুবলীগ, ছাত্রলীগ। নেতারা আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে, যার বোঝা বইতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, এই দখলবাজ সরকার স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না। জনগণের ভোটের হারানো অধিকার ফিরিয়ে আনতে হলে দরকার নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার। তাই ফ্যাসিস্ট সরকার হঠাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে চূড়ান্ত আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। ‘

‘বিএনপির নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে আমির খসরু বলেন, ফ্যাসিবাদ বিতাড়িত করতে হবে। এই চোর সরকারকে আর সময় দেওয়া যাবে না। কোন ফ্যাসিস্ট সরকারকেই আন্দলন ছাড়া হঠানো যায়নি।

আরো পড়ুন