বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ আসছে শেখ হাসিনার পরিবার ও তাঁর দলের লোকদের লুটপাটের কারণে।

বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঢাকার সমাবেশ সফল করতে আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ঢাকায় যাতে রাজপথ জনগণের দখলে থাকে সেই পরিবেশ বিএনপি’র নেতাকর্মীদের তৈরি করতে হবে। নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই রাজপথ দখলে নিতে হবে। আগামীতে রাজপথে ফয়সালার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আগামীতে দেশ যাবে কোন পথে, ফয়সালা হবে রাজপথে।

যুক্তরাজ্য বিএনপির সুযোগ্য সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদ এর পরিচালনায় ও যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সফল সভাপতি এম এ মালিক এর সভাপতিত্বে সর্বকালের সেরা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি’র ক্যারিশমাটিক লিডার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশ নায়ক তারেক রহমান
৭ই নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবসের অনুষ্ঠানের প্রথান অতিথি বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এর বক্তব্যের চুম্বন অংশ টুকু তুলে ধরা হলো-

৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান। যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সভাপতি এম মালেকের সভাপতিত্বে পূর্ব লন্ডনের একটি হলে আয়োজিত আলোচনা সভায় যুক্তরাজ্য বিএনপি’র বিভিন্নস্তরের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

তারেক রহমান দীর্ঘ এক ঘণ্টা ১২ মিনিটের বক্তব্যে দেশে বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিএনপি সব সময় জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করে।

ডিসেম্বরে ঢাকায় বিএনপি’র সমাবেশকে সফল করতে প্রবাসীদের প্রতিটি পরিবারের একজন করে সদস্য হলেও সমাবেশে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারেক রহমান বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও ভোট দিতে পারেনি। বিদেশীদের কষ্টে পাঠানো টাকা আওয়ামী লীগ বিদেশে পাচার করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপি মানুষের ভোট ও বাক স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করছে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে যে ভোট হবে সেই নির্বাচনকে এক দলের সাথে আরেক দলের নির্বাচন হিসাবে দেখার সুযোগ নাই। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে যে নির্বাচন হবে সেই নির্বাচনকে দেখতে হবে, যারা বাক স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে এবং যারা ভোটের অধিকার ও মানুষের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে তাদের সাথে এবং যারা এসব অধিকার কেড়ে নেয়, মানুষের টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচার করে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই হিসাবে। যারা কুইক রেন্টালের নামে মানুষের টাকা লুট করে নিয়ে যায় তাদের বিরুদ্ধে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। এটা এক দলের সাথে আরেক দলের নির্বাচন নয়। লুটেরাদের সাথে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই হিসাবে দেখতে হবে আগামীতে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনকে। যারা খেলা হবে বলে হুঙ্কার দেয়, তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, অবশ্যই লেখা হবে। বিএনপি’র প্লেয়ার হচ্ছে দেশের জনগণ। ইতোমধ্যে বিএনপি’র সমাবেশ গুলোতে এই খেলা খেলে দেখিয়ে দিয়েছে।

তারেক রহমান বলেন, পৃথিবী যতদিন থাকবে ৭ নভেম্বরের বিপ্লব ইতিহাসের পাতায় উজ্জল নক্ষত্র হিসাবে থাকবে। ১৯৭১ সালে লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়েছিল। মানুষের আকাঙ্ক্ষা ছিল স্বাধীন দেশে মানুষ আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার পাবে। মন খুলে নিজেদের কথা বলবে। কিন্তু মানুষ যে প্রত্যাশা নিয়ে লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীনতা এনেছিল সেই প্রত্যাশার বিপরীতে নিয়ে গিয়েছিল স্বাধীনতা পরবর্তী সরকার। বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকার যেভাবে মানুষ গুম করছে, লুটপাট করছে, পত্রপত্রিকার স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে, স্বাধীনতা পরবর্তী সরকারও একইভাবে গুম-খুন ও লুটপাট চালিয়েছিল। সেদিনও তাদের নেতা বলেছিলেন-মানুষ পায় সোনার খনি-আমি পেয়েছি চোরের খনি। সেদিনও বর্তমান মাফিয়া সরকারের মত বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গুম-খুন করা হয়েছিল।

তারেক রহমান বলেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিপক্ষ শক্তিকে পরাজিত করেছিল সিপাহি-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে। সেদিন দেশের মানুষ শহীদ জিয়াউর রহমানকে ডেকে নিয়ে দায়িত্ব দিয়েছিল দেশ পরিচালনার জন্য।

বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা যুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন। অথচ, যারা স্বাধীনতা যুদ্ধের ডাক দেওয়ার কথা ছিল তারা স্বাধীনতার ডাক দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। শহীদ জিয়াউর রহমান সেদিন মানুষের মনের আকাঙ্ক্ষা বুঝতে পেরেছিলেন। তাই স্বাধীনতার ডাক দিয়ে যুদ্ধ করেছিলেন। একইভাবে ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লবের মাধ্যমে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের পক্ষের শক্তির কাছে মানুষ দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছিল। ৭ নভেম্বর যেভাবে বিপ্লবের মাধ্যমে শহীদ জিয়াউর রহমানের হাতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তেমনিভাবে ১৯৯১ সালে শহীদ দেশের মানুষ ভোট দিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ তখন দেশব্যাপী বিশৃঙ্খলা, জ্বালাও পোড়াও করেছিল। জনতার মঞ্চের নামে তারা দেশব্যাপী বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছিল।

তিনি আরও বলেন, দেশব্যাপী বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে তারাই ২০০৪ সালে দেশব্যাপী বোমা বিস্ফোরণ ঘটাল, ২১ আগস্টে বোমা গ্রেনেড বিস্ফোরণের মাধ্যমে ১/১১-এর প্রেক্ষাপট তৈরি করেছিল। বর্তমানে যা ঘটছে, ১৯৭৫ সালের পূর্বেও তাই ঘটেছিল দেশব্যাপী। অর্থনীতি বলেন, আইন শৃঙ্খলা বলেন, আদালত বলেন সবই ১৯৭৫ সালের পূর্ববর্তী অবস্থার মত বিরাজ করছে। ১৯৭৫ সালের আগে শিক্ষাঙ্গন গুলোতে যেভাবে সন্ত্রাসীদের দখলে ছিল। এখনো একইভাবে শিক্ষাঙ্গন গুলো সন্ত্রাসীদের দখলে।

বুয়েটের আবরার হত্যাকাণ্ডকে স্মরণ করে তিনি বলেন ফেনী নদীর পানি নিয়ে কথা বলার কারণে আবরারকে মাফিয়া সন্ত্রাসীরা পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ছাত্রলীগ নামক সন্ত্রাসী দলের টর্চারসেলে পরিণত হয়েছে শিক্ষাঙ্গন গুলো। ঢাকাকে মানুষ এক সময় জানতেন মসজিদের নগরী হিসাবে। কিন্তু পবিত্র মসজিদের নগরীকে তারা এখন ক্যাসিনোর নগরী হিসাবে পরিণত করেছে। দুর্নীতির কথা বলে শেষ করা যাবে না। শুধু কুইক রেন্টালের নামে তারা নিজেদের টাকা তৈরির কারখানা বানিয়েছে। মানুষকে বিদ্যুৎ দেওয়ার নামে, কুইক রেন্টালের নামে নিশি রাতের মাফিয়া সরকার কুইক দুর্নীতি করেছে।

তিনি বলেন, প্রবাসে কর্মরতদের কষ্টে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রায় কুইক রেন্টালের মূল্য পরিশোধ করেছে নিশি রাতের মাফিয়া সরকার। মানুষের লুট করা টাকা দিয়ে আওয়ামী মাফিয়া ব্যবসায়ীরা বিদেশে বিলিয়নিয়ারের তালিকায় নাম উঠিয়েছে। তিনি বলেন, রাশিয়াকে ৩ ডবল দাম দিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে। বাড়তি টাকা সব তারা লুটপাট করছে।

সংসদকে অবৈধ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, আওয়ামী মাফিয়াদের যারা এই সংসদে রয়েছে তাদের হলফনামা দেখলেই বোঝা যাবে তারা কতটাকা লুটপাট করেছে। প্রত্যেকের হলফনামায় দেখা যাবে ৫০০ থেকে ১০০০ গুণ সম্পদ বেড়েছে।

হাইকোর্টকে খয়ের খা হিসাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুর্নীতি করে মাফিয়া সরকার দেশকে এমন এক জায়গায় নিয়ে গেছে যেখানে মানুষ ন্যায় বিচার পায় না।

দেশে দুর্ভিক্ষ আসছে বলে শেখ হাসিনার হুশিয়ারির প্রসঙ্গে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, যেখানে যুদ্ধ হচ্ছে ইউক্রেনেই তো দুর্ভিক্ষের কথা শোনা যায় না। বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ আসছে শেখ হাসিনার পরিবার ও তাঁর দলের লোকদের লুটপাটের কারণে। তাদের দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশের মানুষের এত কষ্ট।

সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমরা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আপনারা আর অবৈধ সরকারের কোন আদেশ মানবেন না। আমরা শুধু জনগনের ভোটের অধিকার নয়, আপনাদেরও অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আপনারা আর মানুষের উপর গুলি চালাবেন না।

তরুণদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছরে যারা নতুন ভোটার হয়েছে তারা কেউ নিজের ভোট দিতে পারেনি। অধিকার আদায়ের আন্দোলনে রাজপথে লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়ে তরুণদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে আরো বঞ্চিত হওয়ার আগে রাজপথে অধিকারের লড়াইয়ে নামতে হবে।

আন্দোলনে বিজয়ী হয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠন করতে পারলে সকলের পরামর্শ নিয়ে দেশ পরিচালনা করা হবে। সুশীল সমাজ, শিক্ষিত মানুষ যাদের মেধা কাজে লাগালে দেশ উপকৃত হবে, তাদের পরামর্শ নিয়ে দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট তৈরি করা হবে।

তিনি বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল। সংসদীয় গণতন্ত্রকে কবর দিয়েছিল। শহীদ জিয়ার নেতৃত্বে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।

বাংলাদেশকে বটমলেস বাস্কেটের দেশ হিসাবে পরিচিত করেছিল আওয়ামী লীগ। বিএনপি বটমলেস বাস্কেটের দেশ থেকে ইমার্জিং টাইগারের দেশে পরিণত করেছিল।

আরো পড়ুন