মানুষ এই সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না: ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সারা দেশে বিএনপির ডাকা সমাবেশের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে এই দেশের জনগণ একেবারেই চায় না এই অনির্বাচিত সরকার আর ক্ষমতায় থাকুক। এটাও প্রমাণিত হয়েছে দেশের মানুষ দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে চায়। রোববার দুপুরে গুলশানস্থ বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার দাবিতে আমরা সারা দেশে গণঅনশন, দেশের ৩২টি জেলা ও মহানগরে সমাবেশ করেছি। এই সমাবেশগুলোতে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে উদ্বিগ্ন হয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং সরকারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা, প্রতিটি কর্মসূচিতে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেছে। বিভিন্ন পদ্ধতিতে কখনও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, কখনও দলীয় নেতাকর্মীদের দিয়ে আক্রমণ করে আন্দোলনকে দমন করার চেষ্টা করেছে।

সর্বশেষ অনুষ্ঠেয় সারাদেশে সমাবেশগুলোতে নেতাকর্মীদের উপর হামলার বর্ণনা দিয়ে গিয়ে ফখরুল বলেন, সবচেয়ে ভয়াবহ যে কাজটি করেছিল হবিগঞ্জে, সেখানে ছাত্রদলের কয়েকজনের চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। একইভাবে পটুয়াখালীতে হামলায় ৩৫ জন আহত হয়েছে, নওগাঁয় সভা করতে দেয়নি। ফেনীতে ১৪৪ ধারার মধ্যে সমাবেশ হয়েছে এবং যশোরেও ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সভা হয়েছে। একইভাবে ঠাকুরগাঁওয়ে মঞ্চ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।পরে সভা হয়েছে। গাজীপুর, টাঙ্গাইলে গাড়ি বন্ধ করে দিয়ে নেতাকর্মী সমর্থকদের আসতে বাধা দেয়া হয়েছে। সবশেষ সিরাজগঞ্জে সন্ত্রাসী কার্যক্রম করা হয়েছে। সেখানে অসংখ্য মানুষকে হতাহতের মধ্য দিয়ে সমাবেশ পণ্ড করতে চেয়েছিল। কিন্তু জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের কারণে সমাবেশ সফল হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দাবি জানানোর যে প্রক্রিয়া আমরা শুরু করেছি, এতে ভীত হয়ে আওয়ামী লীগের অনির্বাচিত সরকার আক্রমণের ওপর আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। আমার একটা বিশ্বাস জন্মেছে যে, এই কর্মসূচিগুলোর মধ্য দিয়ে এটা প্রমাণিত হয়েছে এই দেশের জনগণ আর একেবারেই চায় না এই অনির্বাচিত সরকার আর ক্ষমতায় থাকুক। তারা এভাবে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করুক। এটাও প্রমাণিত হয়েছে এদেশের মানুষ দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে চায়।

তিনি বলেন, আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে স্পষ্ট করে বলতে চাই যে বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে, রাজপথের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তারা তাদের দাবি আদায় করবে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে এবং দেশনেত্রীর মুক্তি আদায় করবে, একইসঙ্গে সুচিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠাতে সক্ষম হবে।

অস্ত্রধারীদের হামলা অশুভ লক্ষণ
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গত ৩০ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের সমাবেশে আপনারা দেখেছেন, পত্রিকাগুলোতে এসেছে যে, সমস্ত অস্ত্রগুলো অবৈধ। একটা ছবি দেখলাম যে, ইম্প্রোর্টেড, চক চক করছে নতুন রিভলবার। দেশী নয়, বিদেশী রিভলবার। এই যে দেশের মধ্যে অস্ত্রধারীরা প্রকাশ্যে এসে গেছে- এটা শুভ লক্ষণ নয়। এই অস্ত্রধারীরা হলো, সিরাজগঞ্জের মধ্যপাড়ার বায়েজিদ, দত্তবাড়ীর সুজয়, কোল গয়লার সুমন ও জনি চারটি পিস্তল নিয়ে প্রকাশ্যে দিবালোকে হামলা চালায় যা পত্রিকায় ও মিডিয়াতে ছবি প্রকাশিত হয়েছে। এরা সবাই ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সদস্য। অথচ এই অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি। সন্ত্রাস করবে তারা, আবার তারা বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। আমরা অবিলম্বে অস্ত্রধারীর গ্রেপ্তার ও তাদেরকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আমরা তিন দিন আগে প্রশাসনকে জানালাম অস্ত্রধারীরা অস্ত্র নিয়ে রেডি হচ্ছে-আপনারা ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এরপর সমাবেশের দিন মারামারি হলো, জনগণ প্রতিহত করলো। এখন পর্যন্ত ৬টা মামলা হয়েছে আমাদের বিরুদ্ধে। তারমধ্যে সরকার বাদী হয়ে মামলা করেছে ৪টা এবং আওয়ামী লীগের লোকজন করেছে ২টা। গতকাল আমরা মামলা করতে গিয়েছিলাম রাত্রে বেলা। কিন্তু আমাদের মামলা নেয়া হয়নি।
তিনি বলেন, যারা অস্ত্র নিয়ে সমাবেশের দিন ঘুরে বেড়াল, পত্রিকায় ছবি আসলো তাদের বিরুদ্ধে কেনো মামলা হলো না? যারা আক্রান্ত তাদের বিরুদ্ধে সরকার মামলা করল। এই হচ্ছে সিরাজগঞ্জের অবস্থা। ১৯৭১ সাল থেকে ৭৫ পর্যন্ত এই আওয়ামী লীগ এভাবেই সারাদেশে সন্ত্রাস করেছিলো যা নতুন প্রজন্ম অনেকে জানেন না। আওয়ামী লীগ চরিত্রই হচ্ছে সন্ত্রাসী।

টুকু বলেন, এটা আজকে পরিষ্কার যে, বাংলাদেশের মানুষ এক মুহূর্ত এই সরকারকে দেখতে চায় না। যদি দেখতে চাইতো তাহলে সেদিন সিরাজগঞ্জে এতো মানুষের ঢল নামতো না। আওয়ামী লীগ দেশটাকে জাহান্নামের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তাই সময় এসেছে জনগনকে প্রতিরোধ করতে হবে। সমাবেশে ক্ষমতাসীনদের হামলায় অসংখ্য নেতা-কর্মীর গুরুতর আহত হওয়ার বিভিন্ন আলোকচিত্র সাংবাদিকদের দেখান তিনি।

বিএনপি চেয়ারপারসনের নিঃশর্ত মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে ৩২ জেলার সমাবেশ শেষ হয়েছে। এরপর পরবর্তী কোনো কর্মসূচি রয়েছে কি-না জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আগামীকাল আমাদের স্থায়ী কমিটির সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মসিউর রহমান, রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির নির্বাহী সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন।

আরো পড়ুন