শৈশব থেকে স্বপ্ন ছিল রাজনীতি করার স্টাফ রিপোর্টার

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা সবসময় বলে আসছি আওয়ামী লীগ একটা ফ্যাসিস্ট সরকার। ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলন করা সহজ বিষয় নয়। আর বিএনপি যেহেতু একটা উদার রাজনৈতিক গণতান্ত্রিক দল তাই আমাদের পক্ষে অন্য ভাবে কোন কিছু করা সম্ভব হয়নি। এরপরও আমরা চেষ্টা করছি, আন্দোলন করছি। সরকারকে বিভিন্নভাবে আলটিমেটাম দিচ্ছি। দেশে গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থাকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আমরা সবসময় সংগ্রাম করে যাচ্ছি।
সোমবার মানবজমিন ফেসবুক লাইভে তিনি এসব কথা বলেন। শাহনেওয়াজ বাবলুর উপস্থাপনায় লাইভ অনুষ্ঠানে রাজনীতি আর জীবনের নানা অধ্যায় নিয়ে কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, আমি দলের মহাসচিব হিসেবে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করছি।

আমাদের দল ইউনাইটেড আছে। দল ভালো রয়েছে। আমাদের দল থেকে বেরিয়ে কেউ আওয়ামী লীগে যোগ দেয়নি। এত বৈরিতা সত্ত্বেও যে আমরা ঠিক আছি বা রাজনীতি করছি এটাই আমাদের সফলতা।
আপনারা খুব ভালো করে জানেন সরকারের পক্ষ থেকে করোনা মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা দরকার সেটা সরকার করছে না। করোনা যখন বাংলাদেশে আসে তখন থেকে আমরা অনেকগুলো প্রেস কনফারেন্স করেছি। শুরু থেকেই করোনার বিষয়ে সরকার এবং মানুষকে আমরা অ্যালার্ট করেছি। আমরা সব সময় বলে আসছি করোনা মোকাবিলার সঙ্গে যারা নিয়োজিত বিশেষকরে চিকিৎসকদের নিয়ে একটা জাতীয় ঐক্য তৈরি করে কাজ করার জন্য। কিন্তু সরকার সেটা কর্ণপাত না করে এককভাবে কাজ করেছেন। এককভাবে কাজ করতে গিয়ে পুরোটা অকাজই করেছেন। এ কারণে আমরা এর ফলাফল পাচ্ছি যে সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে করোনা মোকাবিলা করতে। করোনা মোকাবিলা করতে গিয়ে সরকার এখন একটা লেজেগোবরে অবস্থা তৈরি করেছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়েছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এতোটাই ভেঙ্গে পড়েছে যে আমি জানিনা স্বাস্থ্যমন্ত্রী কিভাবে এখনো স্বপদে রয়েছেন। তারতো নিজের আত্মসম্মানবোধ রক্ষার জন্য হলেও পদত্যাগ করা উচিত। সেটা তিনি করেননি।

স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নয় দেশের পুরো ব্যবস্থাকেই ঢেলে সাজানো দরকার উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, শুধু স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নয় সরকারকেই ঢেলে সাজানো দরকার। কারণ সরকারের তো জনগণের কাছে কোনো জবাবদিহিতা নেই। তারা জনগণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। সুতরাং জনগণের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য তারা কতোটা আন্তরিক এতো সকলের মনেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সরকার যে পার্লামেন্ট তৈরি করেছে যেই পার্লামেন্টে জনগণের কোন অংশগ্রহণ নেই। কারণ এটাতো কোনো নির্বাচনই হয়নি। পার্লামেন্ট থেকে যেসব বক্তব্য আসে বা তারা যেভাবে কথা বলে এগুলো সত্যিই অবান্তর।

তিনি বলেন, গণমাধ্যমের উপর সরকার এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে যে, গণমাধ্যম আগে যেসব বিষয়গুলো তুলে ধরেছিল জনগণের সামনে সেগুলো এখন তারা তুলে ধরতে পারছে না। সরকারের বিরুদ্ধে কোনো কথা বললে তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষকে তারা গ্রেপ্তার করেছে। মামলা দিয়েছে। চারদিক থেকে যে একটা নিপীড়নমূলক ও দমনমূলক নীতি চলছে সেই দমন নীতির কারণেই মানুষ আজ খুব উদ্বেগ উৎকন্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।

জোট থেকে জামায়াতকে বাদ দেয়ার বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এসব নিয়ে দেশের গণমাধ্যম বিভিন্ন কথা বলছে। বিভিন্ন ধারণা দিচ্ছে। আমরা যখনই রাজনীতি সম্পর্কে কোন আলোচনা করি তখন গণমাধ্যম এসব বিষয় নিয়ে বিভিন্ন স্টোরি তৈরি করে। কিন্তু আমরা এসব এখন পর্যন্ত কোনো গুরুত্ব দেই না। আমাদের সিদ্ধান্ত যদি হয় আপনারা সেটা জানতে পারবেন। জামায়াতের বিষয়ে বিএনপিতে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

করোনা মোকাবেলায় ব্যক্তিগতভাবে আপনার সরকারের প্রতি কোন পরামর্শ আছে কিনা জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা এখন আর সরকারকে কোনো পরামর্শ দেই না। কারণ আমরা সরকারকে কোনো পরামর্শ দিলে তারা এটাকে বিভিন্নভাবে বিকৃতি করে ভিন্ন ভাবে কথা বলে। সরকারের প্রতি আমার একটাই পরামর্শ হবে ‘জাস্ট গো’। জনগণের কথা চিন্তা করেই একটা জনগণের পার্লামেন্ট তৈরি করুন।

ছোটবেলা থেকে রাজনীতি করার স্বপ্ন ছিল উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, শৈশব থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল রাজনীতি করার। কারণ আমি যে পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি এই পরিবারের সবারই রাজনীতির সাথে একটা সম্পৃক্ততা ছিল। ছাত্রজীবন থেকেই আমি নিজেকে সেভাবে তৈরি করেছি। আমি সত্যিই আনন্দিত এবং গৌরবান্বিত যে আমি রাজনীতি করতে পারছি। রাজনীতিতে আমি কতটুকু দিতে পেরেছি বা কতটুকু করতে পেরেছি সেটা বড় কথা নয়। আমি রাজনীতির মধ্যে ছিলাম রাজনীতির মধ্যে আছি এবং জনগণের সঙ্গে আমার যে সম্পর্ক তৈরী হয়েছে এটা আমার কাছে একটা বিরাট ব্যাপার।

দেশ বিনির্মানে তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, নতুন প্রজন্মের প্রতি আমার একটাই আবেদন যে রাজনীতি থেকে বিমুখ না হওয়া। দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের তরুণ প্রজন্ম আজ রাজনীতি বিমুখ হয়েছে। কিন্তু সেটার জন্য তারা দায়ী নয়। এজন্য এদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা, রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক নেতাদের পরিস্থিতি সবকিছু মিলেই তরুণ প্রজন্ম আজ রাজনীতিবিমুখ হয়েছে। তরুণরা রাজনীতি বিমুখ হলেতো যে দেশের জন্য আমরা যুদ্ধ করেছি এটাকে রক্ষা করা যাবে না। তাই আমি বলি বাংলাদেশকে একটি সুখী এবং সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে।

আরো পড়ুন