জৈন্তাপুর উপজেলাবাসীর প্রতি সাংবাদিক শিহাবের অনুরোধ

সম্মানিত জৈন্তাপুর উপজেলাবাসী, আসসালামু আলাইকুম ও আদাব। আজ সারা বিশ্বে কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস নামের এক ভয়াবহ মহামারীর মধ্য দিয়ে সময় পার করছেন বিশ্ববাসী। বিশ্বের বড় বড় পরাশক্তিগুলো আজ এই ভাইরাসের কাছে পরাস্ত! এই ফ্লু মোকাবিলা করার মতো প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সারা বিশ্বের তথাকথিত শক্তিশালী দেশগুলোরও নেই। আজ তারা সকলেই ব্যর্থ। যেখানে, পান থেকে চুন খসলেই লেগে যেত যুদ্ধের ঘনঘটা। আজ সেখানে শুধু ইয়া নফসি, ইয়া নফসি। এ থেকে শিক্ষা গ্রহন করতে হবে বিশ্বায়নের কুপ্রভাবের। এসব বিষয় নিয়ে আর কথা না বাড়ানোই উত্তম, চলে যাওয়া যাক আসল কথায়।

সম্মানিত জৈন্তাপুর উপজেলাবাসী, আপনারা নিশ্চয় অবগত আছেন যে, ঐতিহ্যবাহী জৈন্তাপুর উপজেলা ভারতীয় উপমহাদেশ যখন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল, তখন সম্রাট নিজামের এলাহাবাদ বাদে একমাত্র জৈন্তিয়া রাজ্যই ছিল ১৮৩৫ সাল পর্যন্ত স্বাধীন। ‘সিংহ চিহ্ন সম্বলিত’ পতাকা উড়তো পত্ পত্ করে এই অঞ্চলে। জৈন্তাপুরের নাগরিকরা বুক ফুলিয়ে সাহসের সাথে ঘোষণা করতে পারত যে, আমরা স্বাধীন। এ থেকে বুঝা যায় জৈন্তাপুর একসময় নিজ মহিমায় ধনে-জনে স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি গৌরবান্বিত অঞ্চল ছিল। কালের বিবর্তনে আজ ক্রমেই জৈন্তাপুর তার ইতিহাস-ঐতিহ্য হারাতে বসেছে।

করোনা ভাইরাসের এই মহামারির সময়ে গত কিছু দিন থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জৈন্তাপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শ্যামল বনিক ফেসবুক স্ট্যাটাসে উল্লেখ করে যাচ্ছেন যে, কিছু কিছু এলাকা লকডাউন অমান্য, সালিশের নামে নৈরাজ্য, মারামারি, এই সুযোগে পাহাড়-টিলাকাটা সহ নানা ঘটনা ঘটছে এলাকায়। এসব কারনে কিছুটা হতাশাও প্রকাশ করেন তিনি। তার এ্সব স্ট্যাটাস তিনি সহ তার পুলিশ এসব নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ, তা কিন্তু নয়; বরং নিষ্ঠা, দায়িত্ববোধ এবং কর্মস্থলকে ভালোবাসার কারনেই মাঝে-মধ্যে হতাশা এমনিতেই প্রকাশ হয়ে যায়।এই হতাশা প্রকাশের উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষগুলো যদি অপরাধ না করে সচেতন হয়ে স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরে আসে।

আবার এসব স্ট্যাটাস কিন্তু জৈন্তাবাসীর জন্য লজ্জার। বর্তমান এই তথ্য প্রযুক্তির যোগে ফেসবুক একটি অন্যতম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। যার মাধ্যমে দূরের মানুষকে একেবারে কাছাকাছি আনতে পারা সম্ভব হয়েছে। ফেসবুকে কোনো একটি বিষয় নিয়ে স্ট্যাটাস বা মত প্রকাশ করলেই মূহুর্তেই ছড়িয়ে যায় ভার্চুয়াল জগতে। ফলে শুরু হয় মত প্রকাশের স্বাধিনতা। স্ট্যাটাস পছন্দ ও বাস্তব হলে যেমন বাহবা কুড়ানো যায়, তেমনি মিথ্যা ও কাল্পনিক স্ট্যাটাসে ধ্বংস হতে পারে একটি দেশ, বিভাগ, জেলা ও উপজেলা।

এমনই একটি ঘটনা থেকে রক্ষাও পায় জৈন্তাপুর উপজেলাবাসী। গত জানুয়ারি মাসে উপজেলার ৪নং দরবস্ত ইউনিয়নের হাজারী সেনগ্রাম মাঠে এক মাহফিলকে ঘীরে কি শুরু হয়েছিল তা দেখেছে পুরো দেশবাসী সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী প্রবাসীরা। সে সময় জৈন্তাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ শ্যামল বনিকের প্রশংসনীয় ভূমিকায় বড় ধরণের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ থেকে রক্ষা পায় উপজেলাবাসী। জৈন্তাপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ শ্যামল বনিক একজন চৌকস,দক্ষ ও দায়িত্ববান পুলিশ কর্মকর্তা।

আমি জৈন্তাপুরের একজন গর্বিত সন্তান হিসেবে তাকে ধন্যবাদের সহিত বলতে চাই; একটি সুন্দর জৈন্তাপুর গড়তে আপনার উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। তবে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোন ব্যর্থতা নয়, এখন থেকে দেখতে চাই সফলতা। এমনটাই প্রত্যাশা প্রবাসে বসবাসরত জৈন্তাপুরবাসীর।

অন্যদিকে জৈন্তাপুরবাসীর প্রতি আমার সবিনয় নিবেদন, আসুন আমরা সকলে মিলে আরো সচেতন হয়ে ঐতিহ্যবাহী জৈন্তার হারিয়ে যাওয়া অতীত ফিরিয়ে আনতে ভূমিকা রাখি। করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় আরো সচেতন হই। নিরাপদ রাখি প্রাণের জৈন্তাপুরকে। আল্লাহ আমাদের প্রতি সহায় হোন- আমিন।

আল্লাহ হাফেজ-

শাহাব উদ্দিন শিহাব
সাংবাদিক।

You might also like