বদলে গেছে ছাত্রদল

সংগ্রাম ডেস্ক: ছাত্রদের অধিকার, দাবি-দাওয়া নিয়ে কাজ করার কথা ছাত্রসংগঠনগুলোর। এজন্যই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বেশিরভাগ ছাত্রসংগঠন। ’৯০ পর্যন্ত ছাত্র নেতারা জাতীয় ইস্যু এবং শিক্ষার্থীদের ইস্যু নিয়েই তৎপর ছিলেন। তবে এর পরবর্তী সময়ে ছাত্রদের অধিকারের চেয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর চাওয়া-পাওয়াই বেশি প্রধান্য পেয়েছে তাদের কাছে। হারিয়েছে ছাত্র রাজনীতির জৌলুসও। ব্যতিক্রম নয় জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলও। তবে দীর্ঘ ২৯ বছর পর আবারও তৃণমূলের ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের। নির্বাচিত হয়েই ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠন, প্রকৃত ছাত্রদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেয়া, শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কর্মসূচি প্রদান, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মতো মানবিক কর্মকান্ডও চালিয়ে যাচ্ছেন সংগঠনটির নেতারা। সাবেক ছাত্রনেতাদের অনেকেরই মূল্যায়ন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক তারেক রহমানের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় বদলে গেছে ছাত্রদল।

জানা যায়, ২৯ বছর আগে রুহুল কবির রিজভী ও ইলিয়াস আলী ছিলেন সর্বশেষ নির্বাচিত ছাত্রদল নেতা। সাংগঠনিক ও সামাজিক কার্যক্রমের কারণে সেই সময় দেশব্যাপী ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছিলেন ছাত্রদল নেতারা। পরবর্তীতে ধীরে ধীরেই ছাত্রদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন থেকে সরে আসে প্রতিটি কমিটিই। এর মাঝে বেশ কয়েকটি কমিটি নিয়ে বিতর্কও হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে রাজিব-আকরাম কমিটি। অর্থের বিনিময়ে কমিটিতে পদ দেয়া। বাসের কন্ডাক্টর, কৃষক, ব্যবসায়ীসহ চাকরিজীবীদের ছাত্রদলের কমিটিতে রাখা এবং নাতিদীর্ঘ কমিটি করার কারণে নানা মহলেই সমালোচিত হয়েছিলেন সেই কমিটির নেতারা। ছাত্রদলের বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে তৃণমূলের ভোটে কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনের সিদ্ধান্ত জানান সংগঠনটির সাংগঠনিক অভিভাবক তারেক রহমান। ফলে নির্দিষ্ট শিক্ষাবর্ষ ও অবিবাহিত শর্ত রেখেই অনুষ্ঠিত হয় কাউন্সিল। গতবছর ১৯ সেপ্টেম্বর সারাদেশের কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে ফজলুর রহমান খোকন সভাপতি ও ইকবাল হোসেন শ্যামল সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
বর্তমান কমিটির কর্মকান্ড : ছাত্রদলের নতুন নেতৃত্ব গঠনের পর অবিবাহিত ও ছাত্রদের দিয়ে প্রতিটি শাখায় ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন নেতারা। কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয় ৬০ সদস্যের। গঠন করা হয় ১০টি সাংগঠনিক টিম। এসব টিম প্রতিটি বিভাগে সফল করে উপজেলা পর্যায়ে সভা করেছে। বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে এমপি, মন্ত্রী হয়েছেন কিংবা সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে অর্থবিত্ত কামিয়েছেন করোনাভাইরাসে এমন নেতারা যখন ঘর থেকে বের হননি তখন ছাত্রদলের নেতারাই প্রথম বিভিন্ন জেলায় সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ ও জীবাণুনাশক স্প্রে করে বেড়িয়েছেন। পরবর্তীতে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর ছাত্রদলের নেতারা সারাদেশেই ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেন। এ পর্যন্ত তারা নিজেদের পকেটের টাকা দিয়ে, কেউ টিউশনির জমানো টাকাতে কিংবা পরিবারের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ৪ লাখ পরিবারের হাতে খাদ্যসামগ্রী, সুরক্ষাসামগ্রী তুলে দিয়েছেন।
ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্য সচিব আমানউল্লাহ আমান বলেন, ঢাবি ছাত্রদল সবসময় শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার রয়েছে। করোনাকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে যখন ৫৪ লাখ টাকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে জমা দেয়া হয়, তখন আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি। আমরা দাবি জানিয়েছিলাম এই অর্থ মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শিক্ষার্থী যারা টিউশনি করে লেখাপড়ার খরচ চালায় তাদের জন্য ব্যয় করার। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মেট্রোরেল নির্মাণ ও গাছ কাটার প্রতিবাদে কর্মসূচি দিয়েছি, শিক্ষার্থী হত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন বিক্ষোভ করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০০ সাধারণ শিক্ষার্থী যারা টিউশনির মাধ্যমে পড়াশুনা চালায় তাদেরকে অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল বলেন, এই কমিটি দায়িত্ব পাওয়ার পর তৃণমূল থেকে কেন্দ্রের কানেক্টিভিটি তৈরি হয়েছে, মানবিক কার্যক্রম শুরু করেছে। সাংগঠনিক কাঠামো তৈরির কাজ চলছে। কর্মীদের প্রশিক্ষিত করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি বিভাগে সাংগঠনিক টিম সফর করেছে। সুমাইয়া ও অভি হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছি, শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোন, বিদ্যুৎ ইন্টারনটে নিশ্চিত করার পর অনলাইন সকল কার্যক্রম গতিশীল করতে সরকারের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি। সবকিছুই হচ্ছে তারেক রহমানের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায়।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তানজিল হাসান বলেন, ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা মহানগরের টিম গঠন হয়। এই টিম মহানগর দক্ষিণ, পূর্ব, ঢাকা কলেজ, তেজগাঁও, তিতুমীর, কবি নজরুলসহ বিভিন্ন কলেজে মতবিনিময় সভা করেছে। ১০টির মতো ইউনিটে ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া করোনাকালে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অসহায় মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। আমাদের অভিভাবক তারেক রহমান যেভাবে নির্দেশনা দিচ্ছেন সেভাবেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
রাজশাহী বিভাগীয় টিমের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহ-সভাপতি সাজিদ হাসান বাবু বলেন, টিম গঠনের পর ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক তারেক রহমান আমাদের নির্দেশনা দিয়েছিলেন, যে ছাত্রদলকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত ভোটের মাধ্যমে, প্রকৃত ছাত্রদের মধ্য থেকে নেতৃত্ব নির্বাচনের। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। আমরা করোনার আগেই রাজশাহী বিভাগের প্রতিটি উপজেলার নেতাদের সাথে সভা করেছি। তৃণমূলের কথা শুনেছি, আন্দোলনে তৃণমূলের ভাবনা কি? কমিটি সম্পর্কে তাদের অভিযোগ কি? কেন্দ্রের প্রতি তাদের প্রত্যাশা কি?
ছাত্রদল সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন বলেন, ছাত্রদলকে ছাত্রদের অধিকার আদায়ে সবসময় সোচ্চার এবং দেশের সঙ্কট ও দুর্যোগে মানবিক সংগঠন হিসেবে দেখতে চান আমাদের অভিভাবক তারেক রহমান। আমরাও সে লক্ষ্যে কাজ করছি। টিম করে দেয়া হয়েছে সাংগঠনিক কর্মকান্ড ত্বরান্বিত করার জন্য। কমিটি হচ্ছে প্রকৃত ছাত্রদের দিয়ে।
তিনি বলেন, দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই ছাত্রদের যত সমস্যা এসেছে সবগুলোতে আমরা কর্মসূচি দিয়েছি। রাজপথে থেকেছি। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে মিছিল, সমাবেশ করেছি। ঢাবি ক্যাম্পাসে যেতে আমাদের বাঁধা, মারধর করা হয়েছে কিন্তু আমরা পিছপা হয়নি। করোনার সময় ৪ লাখ পরিবারের হাতে খাদ্যসামগ্রী তুলে দিয়েছি। নেতাকর্মীরা কৃষকের ধান কেটে দিয়েছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে সারাদেশে ২০ লাখ গাছ লাগিয়ে নেতাকর্মীরা। দেশের যেখানে শিক্ষার্থী ও সাধারণ-অসহায় মানুষ সমস্যায় পড়ছে সেখানে ছাত্রদল নেতারা এগিয়ে আসছেন। আমরা চাই ছাত্রদলের হাত ধরে ছাত্র রাজনীতির হারানো ঐতিহ্য ফিরে আসুক।

sources- dailyinqilab

You might also like