কান্নাজড়িত কণ্ঠে পুত্র হত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাইলেন সিনহার মা
কান্নাজড়িত কণ্ঠে পুত্র হত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চেয়েছেন পুলিশের গুলিতে নিহত সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের মা নাসিমা আক্তার। তিনি বলেন, ‘এটাই যেন হয় শেষ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড।’
আজ ১০ আগস্ট, সোমবার সকালে রাজধানীর উত্তরার বাসায় নিহত সিনহা রাশেদের পরিবারের সাথে দেখা করতে যান বেশ কয়েকজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা। এসময় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নানা বিষয়ে কথা বলেন নাসিমা আক্তার।
তিনি বলেন, ‘পুলিশের গুলিতে নিহত অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা সবসময় পরবর্তী প্রজন্মের কথা ভাবতো; দেশকে ভালোবাসতো। সে কখনো নিজের পরিচয় ব্যবহার করত না। মানুষকে মানবিক গুণাবলী দিয়ে বিচার করত। তাই তার প্রতিটি কাজেই আমার সমর্থন ছিল। ভিতরে ভিতরে আমি গর্ববোধ করতাম। সে প্রচুর ভালো কাজ করতে চাইত। তাই আমি কখনোই বাধা দেই নি।’
তিনি বলেন, ‘সিনহা সবসময় সারপ্রাইজ দিতে চাইতো। ক্রিয়েটিভ কাজ করা তার নেশা ছিল। মূলত মনের খোরাক মেটাতেই সিনহা এসব কাজ করত। তাই আমি শতভাগ আস্থা নিয়েই বসে থাকতাম যে, আমার ছেলে কাজ করতেছে।’
তিনি বলেন, ‘ও বলতো, আমি আমার মনের খোরাকের জন্য কাজ করি যাতে মানুষ উপকৃত হয়। একটা ডকুমেন্টরি করছি এখনো বলার মতো কিছু হয়নি, যখন হবে তখন বলবো।’
নাসিমা আক্তার আরো বলেন, ‘আমার একটা ভয় ছিল, সিনহা খুব দ্রুতবেগে গাড়ি চালাত। কখনো দুর্ঘটনা ঘটে কী না- এই ভয় আমি সবসময় পেতাম।’ এসময় তার কণ্ঠ আবেগে আপ্লুত হয়ে ওঠে।
ঘটনার রাতের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘রাত ১১ টার দিকে আমি সিনহাকে ফোন দিয়েছি, কিন্তু সে ফোন ধরেনি। মনে করেছি হয়ত কাজে ব্যস্ত, কিন্তু পরে আর ফোনও দেয়নি।’
১২ টার দিকে টেকনাফ থানার ওসি তাকে ফোন দিয়ে সিনহা সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয় যখন জানতে চায় তখন একটু খটকা লাগে এই ভেবে যে, সিনহা তো দ্রুত গাড়ি চালায় কোন কিছু হলো কী না।
নাসিমা বলেন, ‘তখন আমি সিনহার সাথে কথা বলতে চাইলে সে (ওসি) বলে, “ও একটু দূরে আছে, তবে কথা বলা যাবে।” তারপর ফোন রেখে দেয়। আর ফোন ধরে না। আবার সিনহার সাথে যারা কাজ করে তাদের ফোন নম্বরও আমার কাছে ছিল না। পরে আমি মেজর মহসিনকে ফোন দিয়ে বিস্তারিত বলি।’
পরদিন সকালে ১০ টার পর উত্তরা পশ্চিম থানার পুলিশ তাদের বাসায় আসে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারা আমার সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলে। আমিও তাদের সাথে কথা বলি। পরে জানতে চায়, “সিনহা কোন রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল কী না?” আমি “না” বললে তারা চলে যায়। এরপরই তার মৃত্যুর খবর পাই।’
তবে এ হত্যাকাণ্ডের বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে নিজেদের সন্তুষ্টির কথা জানান সিনহার মা ও তার পরিবারের সদস্যরা।
সংবাদ সম্মেলনে আরো কথা বলেন রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (রাওয়া) প্রেসিডেন্ট নুরুল আফসার।
তিনি এসময় বলেন, ‘মেজর সিনহা কেমন ছিলেন তার রেকর্ড সেনাবাহিনীতে আছে। এই হত্যার বিচার পেলে সিনহার পরিবার শান্তি পাবে।’
মেজর সিনহার ঘটনাই যেনো শেষ বিচারবহির্ভুত হত্যাকাণ্ড হয় সে দাবি তুলে ধরে তিনি আরো বলেন, ‘সিনহাকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা হয়েছে।’
এ ঘটনার সঠিকভাবে তদন্ত করে দ্রুত বিচারের উদাহরণ সৃষ্টি করার আহ্বান জানিয়ে তিনি কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনকেও প্রত্যাহার করার দাবি জানান।
উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে কর্তব্যরত পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে তাকে গুলি করার দাবি করলেও একে সরাসরি হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করছেন সিনহার স্বজনরা।
স্বেচ্ছায় সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেয়ার পর বিশ্ব ভ্রমণের পরিকল্পনা করছিলেন মেজর সিনহা রাশেদ। ভ্রমণবিষয়ক একটি ইউটিউব চ্যানেল তৈরির কাজ করছিলেন তিনি। পরিবার জানায়, এরই অংশ হিসেবে কক্সবাজারে ভিডিও তৈরির কাজে গিয়েছিলেন সিনহা।
বাংলা/এসএ/