একুশে আগস্ট মামলার বেনিফিশিয়ারি আ’লীগ: মির্জা ফখরুল
‘বিএনপি একুশে আগস্টের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে তারা আলামত নষ্ট করেছে’– এমন অভিযোগের জবাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আলামত বিএনপি নষ্ট করেনি। আজকে যিনি এ কথা বলছেন, তিনি নিজেই আলামত উপস্থাপন করেননি।
তিনি বলেন, যে গাড়িতে হামলা হয়েছিল, সেটি তদন্ত সংস্থাগুলো চেয়েছিল, সেই গাড়ি দেয়া হয়নি। মামলা শুরু হলো, সেই মামলার সাক্ষী ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সেই মামলায় সাক্ষ্য দিতে যাননি। অর্থাৎ তিনি সহযোগিতাই করেননি। এতেই প্রমাণিত হয়েছে, তারা রাজনৈতিক উদ্দেশে এ মামলাটিকে তখনও ব্যবহার করতে চেয়েছেন, এখনও করছেন। প্রকৃতপক্ষে এ মামলাটি থেকে কেউ যদি বেনিফিশিয়ারি হয়ে থাকে, সেটি আওয়ামী লীগ হয়েছে।
মঙ্গলবার বেলা ১১টায় জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সমাধিতে দোয়া ও পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি এ কথা বলেন।
‘জিয়াউর রহমান ও তারেক রহমান ১৫ আগস্ট এবং ২১ আগস্টের ঘটনায় জড়িত’ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের এমন অভিযোগের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বারবার বলেছি– এটি একটি ষড়যন্ত্র। ১৫ আগস্টের হত্যার তদন্ত হয়েছে। রায় হয়েছে। দোষীদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে আবার নতুন করে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নাম জড়ানোর চেষ্টাই হচ্ছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপচেষ্টা এবং এই দেশের স্বাধীনতাকামী মানুষের চিন্তাচেতনার প্রতি অবমাননা। একুশে আগস্টের সঙ্গে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে জড়ানোর অপচেষ্টাও তারই একটি অংশ।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এ দেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছিলেন এবং এ দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে দেশকে একটি সমৃদ্ধশীল রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। আজকে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে তার অবদানকে খাটো করে দেখানোর জন্য ১৫ আগস্টের ঘটনার সঙ্গে তাকে জড়ানোর একটি প্রচার-প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে।’
ঢাকা-৫ ও ১৮ আসনের উপনির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। আজকে সভা আছে, তার পরে জানানো হবে।
এ সময় সরকারের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশের গণতন্ত্রের চেতনা আজ ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হয়েছে, মানুষের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে এবং নির্যাতন-নিপীড়ন আর দুঃশাসন চলছে।’
তিনি বলেন, ‘করোনা সারা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশকেও তছনছ করে দিয়েছে। এই অবৈধ সরকারের সম্পূর্ণ উদাসীনতা ও অযোগ্যতা পরিস্থিতি ভয়াবহ করে তুলেছে। মানুষের জীবন ও জীবিকার কোনো মূল্য না দিয়ে তারা দুর্নীতির পাহাড় গড়ে তুলেছে।’
চট্টগ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে আজকে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর নির্যাতন চলছে। এখানে উপস্থিত থাকা খ্যাতনামা ও রণাঙ্গনের অনেক মুক্তিযোদ্ধাকেও কারাগারে যেতে হয়েছে এবং নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে। কারণ তারা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়।’
তিনি বলেন, ঠিক একইভাবে ২৪ আগস্ট দুর্ভাগ্যজনকভাবে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতাকর্মীদের ওপর সরকারি দলের সংসদ সদস্যের গুন্ডা বাহিনী হামলা চালিয়েছে এবং আহত করেছে। শুধু একটিই কারণ কেন সংসদ সদস্যকে সমর্থন করা হলো না।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমদ খান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, বিএনপির মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) জয়নাল আবেদীন প্রমুখ।