খালাস চেয়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি এটিএম আজহারের রিভিউ

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকে দেওয়া মৃত্যুদন্ড বহাল রাখা আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। এতে আজহারুল ইসলামের দন্ড থেকে খালাস চাওয়া হয়েছে।

রোববার (১৯ জুলাই) আজহারুল ইসলামের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ৩১ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে আপিল বিভাগের বিভক্ত রায়ে (৩:১) জনাব ইসলামকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়। ২৩ পৃষ্ঠার পুনর্বিবেচনার এই আবেদনে সর্বমোট ১৪ টি যুক্তি উপস্থাপন করা হয়। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য যুক্তিসমূহ নিম্মে তুলে ধরা হলঃ

১। চার্জ গঠন আদেশ অনুযায়ী দুই নং চার্জের ঘটনাস্থল মোকসেদপুর গ্রাম। অথচ রাষ্ট্রপক্ষের ৩ নং সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেছেন যে, ঘটনাস্থল হল উত্তর রামনাথপুর। আপিল বিভাগ ঘটনাস্থল সংক্রান্ত পরস্পর বিরোধী এই বক্তব্যের সন্তোষজনক সমাধান না করেই জনাব আজহারকে মৃত্যুদ- দিয়েছেন।

২। রাষ্ট্রপক্ষের ৩ নং ও ৬ নং সাক্ষীর দাবি অনুযায়ী তারা ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী। অথচ তাদের জবানবন্দী পর্যালোচনায় দেখা যায়, ঐসময় তিন নং সাক্ষী ৫/৬ কিলোমিটার ও ৬ নং সাক্ষী ৩/৩.৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিলেন। আপিল বিভাগ সাক্ষীদের বক্তব্যের এই বৈপরীত্য বিবেচনায় না নিয়ে জনাব ইসলামকে মৃত্যুদ- দিয়েছেন।

৩। রাষ্ট্রপক্ষের ৪ নং সাক্ষী জেরায় স্বীকার করেছেন যে, ঝাড়ুয়ার বিলের ঘটনায় জনাব ইসলাম জড়িত নন। আপিল বিভাগ মতামত প্রদান করেছেন যে, ট্রাইব্যুনাল ভুলবশতঃ ‘ইহা সত্য নহে’ শব্দসমূহ উল্লেখ করতে পারে নি এবং জনাব ইসলামকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেছেন। মামলার নথিপত্রে উল্লিখিত সাক্ষ্যপ্রমাণ অনুযায়ী জনাব ইসলাম ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

৪। রাষ্ট্রপক্ষের দাখিলকৃত প্রদর্শনী নং ২৫ অনুযায়ী জনাব ইসলামের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে গনহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাটের মতো কার্যক্রমে জড়িত থাকার কোনো সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায় নি। আপিল বিভাগ রাষ্ট্রপক্ষের এই দালিলিক প্রমাণ বিবেচনায় না নিয়েই জনাব ইসলামকে মৃত্যুদ- প্রদান করেছেন।

৫। আপিল বিভাগ রায়ে উল্লেখ করেছেন যে, জনাব ইসলাম রাষ্ট্রপক্ষের ৯ নং সাক্ষীর জবানবন্দীতে আপত্তি জানান নি। নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৯ নং সাক্ষীর জবানবন্দীতে সুনির্দিষ্টভাবে আপত্তি জানানো হয়েছে।

৬। রাষ্ট্রপক্ষের ১০ নং সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেছেন যে, তিনি জনাব ইসলামকে ১৯৭১ সালে চিনতেন কারণ জনাব ইসলাম তখন কারমাইকেল কলেজের ছাত্রনেতা ছিলেন। অথচ তিনি কারমাইকেল কলেজের তৎকালীন ছাত্রলীগ কিংবা ছাত্র ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দের নাম জানেন না। এমনকি কারমাইকেল কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষের নামও জানেন না। রায়ে আপিল বিভাগ সাক্ষ্যের এই অংশ বিবেচনায় না নিয়েই জনাব ইসলামকে মৃত্যুদ- প্রদান করেছেন।

৭। স্বীকৃত মতে জনাব ইসলাম ১৯৭১ সালে ১৮ বছর বয়সে উচ্চ মাধ্যমিকের একজন ছাত্র ছিলেন। অথচ সকল হত্যাকা-ের দায় তার উপর চাপানো হয়েছে। আপিল বিভাগ তৎকালীন তার এই সামাজিক অবস্থান বিবেচনায় না নিয়েই তাকে মৃত্যুদ- প্রদান করেছেন।

আরো পড়ুন