খালেদাকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য মনগড়া : ফখরুল

দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় জড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বক্তব্য দিয়েছেন তার কড়া সমালোচনা করেছে বিএনপি।

দলটির পক্ষ থেকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ নিয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতি তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় বেগম খালেদা জিয়াকে জড়িয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা ভিত্তিহীন এবং মনগড়া।

বিএনপির সহ দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত এক ইমেইল বিবৃতিতে ফখরুল বলেন, ‘‘২১ আগস্ট ২০০৪, গ্রেনেড হামলায় হতাহতদের স্মরণে গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের অনুষ্ঠানে সরকারী বাসভবন গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী যুক্ত হয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনি আমাকে মারার চেষ্টা করেছেন’। এছাড়াও তিনি বেগম জিয়াকে আরও মনগড়া ও ভিত্তিহীন মন্তব্য করেছেন-যা অনভিপ্রেত ও সম্পূর্ণরুপে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’’

তিনি বলেন, এই আকস্মিক হামলার ঘটনা শোনার সাথে সাথেই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া হতবাক ও বিচলিত হয়ে পড়েন। তিনি দ্রুত হতাহতদের খবর নিতে থাকেন। তিনি আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমান এবং বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেনারেল তারেক সিদ্দিকীকে দেখতে সিএমএইচ-এ যান। প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনার বাসায় গিয়ে সমবেদনা জানাতে চেষ্টা করেন, এজন্য নিরাপত্তা বাহিনী দিনভর চেষ্টা চালায়। কিন্তু ছাত্রলীগ ও যুবলীগের অসংখ্য নেতাকর্মী সুধা সদনের আশেপাশের রাস্তা দিনরাত দখল করে রাখে। এক পর্যায়ে নিরাপত্তার অগ্রীম টীম হিসেবে পাঠানো প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বাহিনীর দুই সদস্যকে শারীরিকভাবে নাজেহাল করে সেখান থেকে বের করে দেয় আওয়ামী লীগের কর্মীরা। ২১ আগষ্ট বোমা হামলার ঘটনা নিঃসন্দেহে ভয়াবহ এবং এতে হতাহতের ঘটনা মর্মস্পর্শী ও হৃদয়বিদারক।

এই ভয়াবহ হামলার ঘটনায় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পীকার ও ক্যাবিনেট নিন্দা জানান, নিহত ও আহতদের প্রতি শোক ও সমবেদনা জানান ও দোষীদের বিচারের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনার কাছে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া নিজ স্বাক্ষরে শোক ও সমবেদনা জানিয়ে পত্র পাঠান। সেই চিঠি পৌঁছাতে গিয়ে পত্রবাহক নিজেও হামলার শিকার হন। বোমা হামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য বিশেষজ্ঞ সার্ভিস দিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এফবিআই সদস্যরা আসেন। জাতীয় সংসদে উত্থাপিত দাবি অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের কর্মরত একজন বিচারপতিকে দিয়ে তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, পরবর্তীতে ১/১১ এর সরকারের সময় গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্ত শেষে অভিযোগ পত্রে (চার্জশিট) বোমা হামলার সাথে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বিএনপির অন্যান্য নেতৃবৃন্দের জড়িত থাকার কোন উল্লেখ নাই। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নাম কেউ কখনোই উচ্চারণ করেনি। ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের আমলে পুলিশী পুনঃতদন্তের মাধ্যমে রচিত সম্পূরক চার্জশিটে তারেক রহমানসহ বিএনপি’র অন্যান্য নেতৃবৃন্দের নাম জড়িত করা হয়।
এতে সুষ্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয় যে, রাষ্ট্রশক্তি প্রয়োগ করে পুলিশী ক্ষমতার যথেচ্ছ ব্যবহারের মাধ্যমে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কল্পিত চার্জশিট তৈরী করা হয়েছে। যে পুলিশ কর্মকর্তা কাহার আকন্দকে পুনতদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়, তিনি বর্তমান সরকারের অত্যন্ত আপনজন হিসেবে পরিচিত। কারণ তিনি সেসময় অবসরে থাকলেও এবং নৌকা মার্কা নিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিতে এলাকায় ব্যাপকহারে পোষ্টার সাঁটার পরেও তাকে ডেকে নিয়ে এসে চাকুরীর মেয়াদ বৃদ্ধি করে ২১ আগস্ট বোমা হামলার মামলার পুনঃতদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়- মামলাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য। সরকারের ইচ্ছা পূরণে তদন্ত কাজ সম্পন্ন করার জন্য তাকে কয়েকটি পদোন্নতিও দেয়া হয়-যা নজীরবিহীন।

 

আরো পড়ুন