গুম হওয়া ব্যক্তির সম্পদ আটকা, সংকটে পরিবার

কাঠ ব্যবসায়ী ইসমাঈল হোসেন ২০১৯ সালের ১৯ জুন শাহ আলী মাজারের কাছে থাকা নিজের দোকান থেকে দুপুরের খাবার খেতে বেরিয়েছিলেন। আর ফেরেননি। ওই এলাকার সিসি ক্যামেরার সারা দিনের ফুটেজ পাওয়া গেছে। শুধু পাওয়া যায়নি দুই ঘণ্টার ফুটেজ, যে সময়টিতে তিনি দোকান থেকে বের হন।

ইসমাঈল হোসেনের স্ত্রী নাসরীন জাহান এখন ১৫ বছরের মেয়ে আর ৫ বছরের ছেলেকে নিয়ে কোনোরকমে সংসার চালাচ্ছেন। নিজে একটা কিন্ডারগার্টেন স্কুলে চাকরি নিয়েছিলেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে সেটা বন্ধ। নাসরীন গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর স্বামীর ব্যাংক হিসাবে কিছু টাকা জমা ছিল। স্থায়ী আমানতও ছিল। তিনিই নমিনি (মৃত্যুর পর টাকা পাওয়ার জন্য মনোনীত)। তবে ব্যাংক বলেছে, তাঁর স্বামী জীবিত না মৃত নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ওই টাকা তিনি পাবেন না।

মানবাধিকার সংস্থা এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের হিসাবে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে গুমের শিকার হয়েছেন ৫৫৩ জন। তাঁদের কেউ কেউ ফিরে এসেছেন। কেউ উদ্ধার হয়েছেন সীমান্তের ওপার থেকে। কারও লাশ পাওয়া গেছে পরে। ভুক্তভোগী পরিবারগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ তুলছে। যাঁরা এখনো নিখোঁজ, তাঁদের পরিবারের বিপদ অন্য রকম। সেটি হলো নিখোঁজ ব্যক্তির নামে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমানো টাকা তুলতে না পারা এবং সম্পদও বুঝে না পাওয়া।

এমন পরিস্থিতিতে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও আজ রোববার আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস পালিত হচ্ছে। জাতিসংঘের উদ্যোগে ২০১১ সাল থেকে বিভিন্ন দেশ দিবসটি পালন করে আসছে। এর আগে ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদ ‘ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর প্রোটেকশন অব অল পারসন্স অ্যাগেইনস্ট এনফোর্সড ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স’ গ্রহণ করে এবং ৩০ আগস্টকে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস ঘোষণা করে।

দিবসটি সামনে রেখে গতকাল শনিবার ছয়টি পরিবারের সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর, যাঁদের স্বজন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। পরিবারের সদস্যরা জানান, গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তি পরিবারের প্রধান উপার্জনকারী ছিলেন। তাঁদের কারও ব্যাংকে টাকা জমা আছে, কারও স্থায়ী আমানত (এফডিআর) ও কারও বিমা করা আছে। কিন্তু গুম হওয়ার পর পরিবার আর টাকা ও বিমার দাবি বুঝে পাননি। সম্পদ কেনাবেচা ও বণ্টনে আইনগত জটিলতা তৈরি হয়েছে।

আইন অনুযায়ী একজন ব্যক্তি টানা সাত বছর নিখোঁজ থাকার পর আদালত তাঁর পরিবারকে ব্যাংকে জমা টাকা ওঠানো ও সম্পদ বণ্টনের অনুমতি দিতে পারেন। এ জন্য পরিবারকে আদালতে যেতে হয়। আইনি নানা প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। এ বিষয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) চেয়ারপারসন ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না প্রথম আলোকে বলেন, সাত বছর একজন মানুষ নিখোঁজ থাকার পর তিনি আর ফিরবেন না বলে ধরে নেওয়া হয়।

আরো পড়ুন