প্রদীপের রাজ্য টেকনাফ স্বাধীন হলো

প্রদীপ মানে বাতি। আর এ বাতির প্রয়োজন হয় অন্ধকারে। অর্থাৎ আঁধারকে দূরে ঠেলে দেয়াই হলো প্রদীপের কাজ। কিন্তু টেকনাফের ওসি প্রদীপ নিজ নামের সঙ্গেই প্রতারণা করেছেন। বেঈমানি করেছেন। যে নিজ নামের সঙ্গে এমন করতে পারে তার কাছে কি আসা করা যায়। তাছাড়া বাংলাদেশের কর্মকর্তা হয়ে আরেকটি দেশে সম্পদ করার অর্থ কি? তিনি সে দেশের আনুগত্য। অন্য দেশের প্রতি যার এতো প্রেম? সে বাংলাদেশকে ভালোবাসবে কি করে? তাইতো সে এ দেশকে বানিয়েছে টাকা বানানোর মেশিন হিসাবে।

এ দেশের মানুষকে প্রজা হিসাবে ব্যবহার করেছে। ভাবা যায়? মাত্র ২২ মাসে টেকনাফ থানা পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে ১৭৪ জন। যার প্রত্যেকটি ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রদীপ কুমার দাশ। অভিযোগ আছে, চাহিদা মতো টাকা না পেলে ক্রসফায়ারে দেয়ার নির্দেশ দিতেন প্রদীপ নিজে। এমনকি নিজে সরাসরি অংশ নিতেন কথিত বন্দুকযুদ্ধের প্রক্রিয়ায়। এত ঘটনার পরও সে কিভাবে টিকেছিল? এটা এখন বিরাট প্রশ্ন। মেজর (অব.) সিনহা  মোহাম্মদ রাশেদ খানকে হত্যার পর একের পর এক বেরিয়ে আসছে প্রদীপের কুৎসিত কাহিনী। কত বড় শক্তিশালী হলে কোন কিছুকে পরোয়া না করে একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে গেছেন অবলীলায়। দম্ভ করে প্রকাশ্যে শত লোকের সামনে বলেছেন, টেকনাফে যা করার আমি নিজ হাতে করব। মারতে হলে মারব। বাহ! কি চমৎকার। জনগণের চাকর হয়ে জনগণকে প্রকাশ্যে মারার হুমকি এ দেশেই সম্ভব। ইয়াবা গডফাদার ওসি প্রদীপ- এমন রিপোর্ট করায় এক সংবাদিককে আটকে রেখে বেদম প্রহার করেছেন। মুখ থেতলে দিয়েছেন। ওই সাংবাদিক আজও এর ক্ষত নিয়ে বেড়াচ্ছেন। এত যে ক্রসফায়ার, অত্যাচার চালিয়েছেন প্রদীপ তাতে কি নাফ নদী পেরিয়ে ইয়াবার চালান আসা বন্ধ হয়েছে? না, বন্ধ হয়নি বরং বেড়েছে। কারণ একটাই। প্রদীপ ছিলেন ইয়াবা গডফাদারের গডফাদার। তার সম্পদের বিবরণ এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে। তার স্ত্রীর ভারত বাংলাদেশের পাসপোর্টের কপিও এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জায়গা করে নিয়েছে। টেকনাফের এক বৃদ্ধ গতকাল এক টিভি চ্যানেলে বলছিলেন, আামার ভাতিজা দুপুরে ভাত খাচ্ছিল।  পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়। আমি নিজ হাতে ৫ লাখ টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে আনি। আমার মূল্যবান জায়গা দখল করা হচ্ছিল। টাকা দিয়ে ভাতিজাকে ছাড়াতে পারলেও জায়গা রক্ষা করতে পারিনি। ওসি প্রদীপের মদদে জায়গাটি দখল করে নেয় সন্ত্রাসীরা। আমি এ ব্যাপারে ওসির বিরুদ্ধে মামলা করব। কত ধুরন্ধর এই প্রদীপ। টেকনাফকে আলাদা রাজ্য বানিয়ে সেই রাজ্যের রাজা বনে যান তিনি। উপর মহলকে ভুল বুঝিয়ে ভাগিয়ে নেন একের পর এক পদক। এখন রিমান্ডে আরো তথ্য বেরিয়ে আসবে। সবচেয়ে বড় কথা ২২ মাস পর টেকনাফ স্বাধীন হলো। মুক্ত হলো প্রদীপের রাহু থেকে। টেকনাফবাসী এমনটাই বলছেন।

আরো পড়ুন