ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনে নির্যাতিতদের সহায়তায় প্রবাসীদের এগিয়ে আসার আহবান।

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, বিএনপির চেয়ারপারসনের মুক্তি, ক্ষমতাসীনদের দূর্নীতি, লুটতরাজ, বিএনপির মহাসমাবেশে হামলা, নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধি, মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে হয়রানিমূলক গ্রেফতার, নেতা-কর্মীদের বাসা বাড়িতে হামলা ভাংচুর ও হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে যুক্তরাজ্য বিএনপি ৩১ অক্টোবর মঙ্গলবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে।যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের অন্যতম সদস্য এম এ মালিকের সভাপতিত্বে প্রেস ব্রিফিং পরিচালনা করেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য কয়ছর এম আহমদ।

প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয় যে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন ‘’সারাদেশের রাজপথ-রেলপথ-নৌপথে সর্বাত্মক অবরোধ শুরু হয়েছে। একটি সুন্দর এবং নিরাপদ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের গড়ার লক্ষ্যে যারা কষ্ট এবং প্রতিকূলতা স্বত্তেও অবরোধ সফল করছেন তাদেরকে গণতন্ত্রকামী জনগণের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাই। আন্দোলনকে বানচাল করতে মাফিয়া সরকার মিথ্যাচার অপপ্রচারের আশ্রয় নিয়েছে। অতীতের মতো তারা নিজেরাই নাশকতা আশ্রয় নিয়ে গণতন্ত্রকামী জনগণকে ফাঁসানোর অপকৌশলে লিপ্ত হয়েছে।’’

প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়, মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসীরা যেভাবে আর্থিকসহ সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছিলেন ঠিক একইভাবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনে নির্যাতিতদের সহায়তায় প্রবাসীদের এগিয়ে আসার আহবান জানানো হয়। যুক্তরাজ্য বিএনপির প্রতিটি নেতা-কর্মী নির্যাতিত নেতা-কর্মীদের সাধ্যমত সহযোগিতার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয় যে, ২৮ অক্টোবরের বিএনপির শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশে আওয়ামী বাকশালী ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অতি উৎসাহী পুলিশ লীগের সদস্য পরিকল্পিতভাবে হামলা করেছে। পুলিশের দায়িত্ব হলো শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা করা। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা দেখেছি পুলিশের কিছু সদস্য আওয়ামী বাকশালীদের সাথে মিলে মুহুর্মুহ গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার সেল নিক্ষেপের মাধ্যমে বিএনপির সমাবেশে হামলা করে যুবদল নেতাকে হত্যার পাশাপাশি কয়েকশত নেতা-কর্মীকে রক্তাক্ত করেছে। শুধু তাই নয় রক্তাক্ত নেতা-কর্মী চিকিৎসা নেয়া দূরের কথা তাদেরকে গ্রেফতার করে নির্যাতন করে করে জেলে নিয়েছে। এর পরে পুলিশ-কর্তৃক কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে ছাত্রদল নেতা রেফায়েত উল্লাহ ও কৃষকদল নেতা বিল্লাল মিয়া এবং সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার যুবদল নেতা দিলু আহমেদ জিলুকে গাড়ী চাপা দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। যুক্তরাজ্য বিএনপি প্রবাসীদের যার যার অবস্থান থেকে এসব হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে উন্নয়ন সহযোগী রাষ্ট্রসমূহের নীতিনির্ধারকদের অবহিত করার আহবান জানিয়েছে।

বিভিন্ন মিডিয়াতে ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে যে, শনিবার কাকরাইল-নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মীদের পুলিশ যখন বেধড়ক লাঠিপেঠা করছিল তখন পুলিশের উচ্চ পর্যায় থেকে বারবার জানতে চাওয়া হয়েছিল গির্জা বা মন্দিরে হামলা হয়েছে কি-না। পুলিশের ওয়্যারলেস মারফত এমন বার্তা আদান প্রদানের একটি অডিও প্রকাশ হয়েছে। এছাড়া ডিবির পোশাক পরে গাড়িতে আগুন দেয়ার কথা গাড়ির ড্রাইভার নিজে স্বীকার করেছেন। তাই ভোটারবিহীন আরেকটি নির্বাচন আয়োজনের জন্য বিএনপির ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ থেকে আজ পর্যন্ত সকল হত্যাকাণ্ড ও নৈরাজ্য তৈরী করা অবৈধ ফ্যাসিবাদী সরকারের মাস্টার প্ল্যান।

স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পেটোয়া বাহিনী ও আওয়ামী সন্ত্রাসী গুন্ডাদের বিরুদ্ধে দেশের জনগণ যেভাবে স্বতঃস্পুর্ত হরতাল ও অবরোধ পালন করছে তার জন্য যুক্তরাজ্য বিএনপি প্রবাসীদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন । যুক্তরাজ্য বিএনপি সাধ্যমত দেশে হামলা, মামলা ও নির্যাতনের শিকার নেতৃবৃন্দের পাশে থাকবে এই অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয় বিএনপির চলমান শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অস্ত্রসজ্জিত পুলিশ যে তাণ্ডবলীলা চালাচ্ছে, এটি কোনো সংঘর্ষ নয়, সুস্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন। লক্ষ-লক্ষ গণতন্ত্রকামী মানুষের বিরুদ্ধে মুষ্টিমেয় কিছু অস্ত্রধারীর এই মানবাধিকার লঙ্ঘন দেশে-বিদেশে ধিকৃত হচ্ছে। বিএনপির নিরস্ত্র নেতা-কর্মীদের উপর পরিকল্পিত আক্রমণ চালাচ্ছে পুলিশ-র্যাব-বিজিবির একটি উচ্ছিষ্টভোগী অংশ। যৌথভাবে আওয়ামী লীগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চালিয়ে যাচ্ছে আগুন সন্ত্রাস, পুড়াচ্ছে একের পর এক যানবাহন ও স্থাপনা। তাদের লক্ষ্য সবার কাছে পরিষ্কার, নিজেরা নানা দেশবিরোধী অঘটন ঘটিয়ে তার বেনিফিশিয়ারি হিসেবে বিএনপির সকল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলার প্রহসনমূলক গ্রেপ্তার ও রায় নিশ্চিত করা। ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে আবারো ক্ষমতায় টিকে থাকতে উন্মত্ত হায়েনার মতো হত্যাকান্ড চালাচ্ছে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার।

কিন্তু অবৈধ সরকারের এই এজেন্ডা এবার বাস্তবায়ন করতে দেয়া হবে না। আমাদের নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান ইতিমধ্যে নেতৃত্বের বিভিন্ন স্তর নির্ধারণ করে দিয়েছেন। একজন গ্রেফতার হলে অন্যজন দায়িত্ব পালন করবেন। তাই হামলা-মামলা ও গ্রেফতার করে এই আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ এই আন্দোলনে হারবেই।

প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এনিসহ সকল নেতা-কর্মীর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করে সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানানো হয়। বিএনপির চেয়ারপারসন, মাদার অব ডেমোক্রেসি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানানো হয়।

বিএনপির স্থায়ীকমিটির সদস্যসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের বাসা বাড়িতে হামলা ও নির্যাতনের তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। এই তান্ডব বন্ধ করে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকার গঠন না করলে দেশের জনগণ এর পুরো হিসেব আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে করায় গন্ডায় আদায় করবে বলে হুশিয়ার করে দেয়া হয়।

দেশের জনগণের পাশাপাশি প্রবাস থেকেও আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত কর হয়। অবৈধ দখলদারদের কাছে আর কোনো দাবি নয়, এবার এদেরকে ক্ষমতাচ্যুত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এর বদলা নেয়া হবে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সহ সভাপতি মুজিবুর রহমান মুজিব, আলহাজ্ব তৈমুছ আলী, তাজুল ইসলাম, কাজী ইকবাল হোসেন দেলোয়ার, আতিকুর রহমান চৌধুরী পাপ্পু, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক পারভেজ মল্লিক, গোলজার আহমেদ, ডক্টর মুজিবুর রহমান (দপ্তরের দায়িত্বে), আজমল হোসেন চৌধুরী জাবেদ, সিনিয়র সদস্য এমদাদ হোসেন টিপু, সেলিম আহমেদ( সহদপ্তরের দায়িত্বে),
জাসাসের সাবেক সভাপতি এম এ সালাম, কেন্দ্রীয় যুবদলের সদস্য ও যুক্তরাজ্য যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন, কার্ডিফ বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ রফিকুল ইসলাম,
লন্ডন মহানগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ চৌধুরী, যুক্তরাজ্য বিএনপির সহ প্রচার সম্পাদক মইনুল ইসলাম, লন্ডন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারন সম্পাদক শেখ সাদেক আহমেদ প্রমূখ।

আরো পড়ুন