রিজেন্ট মালিক সাহেদের যত রূপ-কর্ম

প্রতারণার আরেক নাম যেন মোহাম্মদ সাহেদ। রিজেন্ট হাসপাতালের এই কর্ণধারের রয়েছে একাধিক নাম ও পরিচয়। করোনা টেস্টের ভুয়া সার্টিফিকেট, বেআইনিভাবে অর্থ আদায়, আইসিইউ সেবার নামে প্রতারণা, বিনামূল্যে চিকিৎসার নামে রোগীর কাছ থেকে অর্থ আদায়, একই চিকিৎসার জন্য সরকারের কাছ থেকেও বিল আদায়ের চেষ্টার ঘটনায় আবার আলোচনায় আসেন সাহেদ।

প্রতারণা করেই কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। তার নামে ৩০টির বেশি মামলা রয়েছে। এরপর প্রভাবশালীদের সঙ্গে ছবি তুলে বেড়াতেন। ফেসবুকে এসব ছবি পোস্ট করে নিজের ‘গুরুত্ব’ বাড়াতেন তিনি। এছাড়াও প্রভাব রাখতে ‘নতুন কাগজ’ নামে একটি পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশকও তিনি।

জানা গেছে, তার নাম আসল নাম মো. সাহেদ করিম, শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএস‌সি। বাবার নাম সিরাজুল করিম ও মা মৃত সুফিয়া করিম। তবে তার নামে একাধিক আইডি রয়েছে। সাহেদ কখনো কখ‌নো ‘মেজর ইফতেখার আহম্মেদ চৌধুরী’, ‘ক‌র্নেল ইফতেখার আহম্মেদ চৌধুরী’ আবার ‘মেজর সাহেদ করিম’ বা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এসডিজি সংক্রান্ত প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে নিজের পরিচয় দিতেন। কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্রে তার নাম সাহেদ করিম। বর্তমানে তিনি মো. সাহেদ নামে আ‌রেক‌টি জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করছেন। এটি ২০০৮ সালে করা।

বিএনপি সরকারের আমলে রাজাকার মীর কাসেম আলী ও গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের সঙ্গে সর্ম্পক গড়ে হাওয়া ভব‌ন ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেন সাহেদ। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তিনি ২ বছর জেলও খাটেন। জেল থে‌কে বের হ‌য়ে ২০১১ সালে ধানমন্ডির ১৫নং রোডে এমএলএম কোম্পানি বিডিএস ক্লিক ওয়ান নামে ব্যবসা প্র‌তিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতারণা ক‌রে ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আর ওই সময় নিজেকে ‘মেজর ইফতেখার করিম চৌধুরী’ বলে পরিচয় দিতেন তিনি। মাঝে কিছু দিন পরিবারসহ ভারতে পালিয়েও ছিলেন তিনি।

তার নামে ধানমন্ডি থানায় ২টি, পল্লবী থানায় একটি, বরিশালে একটি, বিডিএস কুরিয়ার সার্ভিসে চাকরির নামে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রতারণার কারণে উত্তরা থানায় ৮টি মামলাসহ রাজধানীতে ৩২টি মামলা রয়েছে। এছাড়াও মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ থেকে ছয় কোটি টাকা ঋণ নেয়ার নথিতে নিজেকে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল হিসেবে পরিচয়য় দেন। এ ঘটনায় আদালতে দুটি মামলা চলছে।

র‌্যাবের এক কর্মকর্তা জানান, প্রতারণার এ ঘটনায় নিজে বিপদে পড়তে পারেন- এটা আচ করে পেরেই কর্মচারী ছাটাইয়ের নাটক সাজান রিজেন্ট মালিক সাহেদ। শুধু কর্মচারীদের ওপর এ অপকর্মের দায় চাপানোর চেষ্টা করেছিলেন। তার প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা করোনা টেস্টের জালিয়াতিতে জড়িত- এমন একটি অভিযোগ তুলে নিজেকে আড়াল করতে কয়েকদিন আগে থানায় একটি জিডিও করেন সাহেদ।

এদিকে সাহেদের মালিকানাধীন রিজেন্ট কেসিএস পূর্বাচল প্রজেক্টে বালু সরবরাহের কাজ পেয়েছিল ফেনীর জুলফিকার আলী। তিনি জানান, সিলেট থেকে বালু সরবরাহের পর তার পাওনা ৪২ লাখ ৫৭ হাজার ৫৫৯ টাকা সাহেদ পরিশোধ করেনি। টাকা চাইলে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়। এ ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানায় তিনি জিডি করেন।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, বাংলাদেশের হর্তা-কর্তা ব্যক্তিদের সঙ্গে সে ছবি তুলেছে। এটা আসলে তার একটা মানসিক অসুস্থতা। ছবি ব্যবহার করেই সে প্রতারণা করতো। প্রতারকদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। প্রতারণাই ছিল তার প্রধান ব্যবসা।

তবে এ বিষয়ে কথার বলার জন্য চেষ্টা করেও বিতর্কিত ব্যবসায়ী সাহেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

সূত্র : সমকাল

আরো পড়ুন