সরকার দেশে লুটপাটের অর্থনীতি ও সমাজ চালু করেছে: বিএনপি

সরকার দেশে লুটেরা অর্থনীতি ও সমাজ চালু করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বুধবার (১৯ আগস্ট) বিকালে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন। জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভা হয়। সাড়ে চার ঘন্টার এই ভার্চুয়াল আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশে দুইটা দুর্যোগ চলছে। একটি হচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, স্বাস্থ্য খাতের দুর্যোগ কোভিড-১৯ এর দুর্যোগ। অন্যটি হচ্ছে রাজনৈতিক দুযোর্গ। কোভিডে মানুষের জীবন-জীবিকা বিপদ গ্রস্থ হয়ে পড়েছে। আর রাজনৈতিক দুর্যোগের মধ্য দিয়ে এদেশে মানুষের যে মালিকানা ছিলো, সেই মালিকানা বিলিন করে দেয়া হয়েছে। তারা (সরকার) দেশে লুটেরা অর্থনীতি, একটা লুটেরা সমাজ তৈরি করেছে।’

স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চরম অব্যবস্থাপনার কথা তুলে ধরে ফখরুল বলেন, ‘মানুষের কোনো চিকিৎসা নেই। উদাসীনতা, অজ্ঞতা, ব্যর্থতা- স্বীকারও করতে চায়। মানুষের জীবন নিয়ে ওরা তামাশা করছে। এই সরকারকে যদি সরানো না যায় এবং এখানে জনগণের সরকার যদি প্রতিষ্ঠা না করা যায় …। সত্যিকার অর্থে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেই লক্ষ্যে আমাদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।’

এই অবস্থা থেকে উত্তরণে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলনে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা, দেশনেত্রীকে মুক্ত করা ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা এবং এখানে লক্ষ মানুষ যারা মামলা-মোকাদ্দমায় জড়িত হয়ে পড়ে আছে, যারা কারাগারে রয়েছে তাদেরকে মুক্ত করা এটা এখন জরুরি একটা বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সংকট শুধু বিএনপির নয়, এটা সমগ্র দেশের, সমগ্র মানুষের।’

‘আমি মনে বিএনপি তার ভূমিকা ইতিমধ্যে পালন করছে এবং স্বেচ্ছাসেবক এই ভূমিকা অতীতে পালন করেছে এবং এখনোও করছে। আমাদের এখন সময়ে এসেছে আমাদের মধ্যে ঐক্যসৃষ্টি করা।’

জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে সরকারের বিশোষগারের কঠোর সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কোন অবস্থার প্রেক্ষিতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাহেবকে জনগণ সামনে নিয়ে এসেছিলো। সেই অবস্থাটা হচ্ছে, ১৯৭২-৭৫ সাল। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের যেই চেতনা ছিলো, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে যারা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো তাদের লক্ষ্য ছিলো একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা, একটা গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা হবে এবং জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি আসবে। কিন্তু জনগণ দেখেছে ১৯৭২ সাল থেকে মানুষের মুক্তি বদলে আরো আবদ্ধ হয়েছে, ক্রীতদাস হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘মানুষ মুক্তি তো পাইনি, তারা আরো নির্যাতিত হয়েছে আরো বেশি করে। আমরা সেই সময়ে দেখেছি, এই আওয়ামী লীগ সেদিন শুধুমাত্র ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সেই সমস্ত স্বপ্ন গুলোকে চূরমার করে দিয়ে প্রথমে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলো, বিশেষ ক্ষমতা আইন করেছিল এবং সবশেষে ক্ষমতাকে ধরে রাখার জন্য তারা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল করেছিলো। ওই অবস্থা থেকে জিয়াউর রহমান পরিবর্তন নিয়ে এসেছিলেন, তিনি একটা নতুন সমাজের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন তার বহুদলীয় গণতন্ত্র, তার মুক্ত অর্থনীতি ও তার ১৯ দফা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে।’

ফখরুল বলেন, ‘এরা (আওয়ামী লীগ) অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে গণতন্ত্রকে হরণ করবার জন্যে, মানুষের অধিকারকে হরণ করবার জন্য পরিকল্পিতভাবে ১/১১ এর পর থেকে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে এবং দেশের মানুষের অধিকারগুলোকে কেড়ে নিয়ে চলে গেছে। আমরা দেখেছি সেই সময়ে যে বিভক্তি সৃষ্টি করা হয়েছে, সেই সময়ে রাজনৈতিক নেতাদেরকে যেভাবে হিউমোলেটেড করা হয়েছে, সেই সময়ে রাজনীতিকে বিরাজনীতিকরণ করা হয়েছে।’

কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘শহীদ জিয়া বিএনপির অঙ্গসংগঠনগুলো প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এজন্য যে, এসব সংগঠন দলের ভ্যানগার্ড হিসেব কাজ করবে। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে হরণ করেছে, বাক স্বাধীনতা হরণ করেছে। মানুষ সত্য কথা বলতে পারছে না। সত্য আজকে মিথ্যার কাছে ধামাচাপা পড়ে গেছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরনে বিএনপির নেতৃত্বে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে যে লড়াই-সংগ্রাম চলছে তাতে আমাদের অঙ্গসংগঠনগুলোকে ভ্যানগার্ড হিসেবে কাজ করার প্রস্ততি নিতে হবে।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, ‘বাংলাদেশ দুইটি ভাইরাসে আক্রান্ত। একটা হচ্ছে আওয়ামী লীগ ভাইরাস, আরেকটা হচ্ছে করোনা ভাইরাস। আওয়ামী ভাইরাসে আমাদের দেশের রাজনীতি গত ১১ বছর আক্রান্ত। এই ভাইরাস আমাদেরকে জর্জরিত করেছে। আমাদের ৩৫ লক্ষ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেয়া আছে, মামলার সংখ্যা এক লক্ষের উপরে চলে গেছে। চিন্তা করে দেখেন এই সরকার বিএনপিকে নিঃশেষ করে দেয়ার জন্য কত না চেষ্টা করেছে, কিন্তু তারা দলের শক্তিকে কিছুই করতে পারেনি।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আওয়ামী লীগের রাজনীতির খবরটা কোথায়? শুধু মুখে, শুধু পত্র-পত্রিকা এবং টেলিভিশনে। সেই রাজনীতিটা কী? শুধু বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার, শুধু শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, গণতন্ত্র ফিরিয়ে জিয়াউর রহমান তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার।’

‘তারা কেনো এই অপ্রচার করছে? জিয়াউর রহমান সাহেবকে গালি দেয়া ছাড়া আওয়ামী লীগের তো কোনো রাজনীতি নেই। কেনো নাই? জিয়াউর রহমান রাজনীতি করেছে জনগণের স্বার্থে, জনগণের জন্য। আর আওয়ামী লীগের রাজনীতি হচ্ছে তাদের নিজের স্বার্থে।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমাদের রাজনীতিতে এখন কিছু কথাবার্তা নতুন করে আসছে। কেউ বলেছেন কিছুদিন আগে যে, তাকে জিয়াউর রহমান মন্ত্রী হওয়ার অফার দিয়েছিলেন এবং তিনি প্রত্যাখান করার কারণে তাকে জেলে নেয়া হয়েছিলো। যিনি বলেছেন, তথন তার বয়স ৩৩/৩৪ এর বেশি হবে না। আর সেই সময়ে তিনি কোনো প্রখ্যাত নেতা হিসেবে আওয়ামী লীগে প্রতিষ্ঠিত না। সেখানে প্রখ্যাত নেতা ছিলেন আসাদুজ্জামান খান, জুনাব আলী তালুকদার, মোমেন তালুকদার। এদের মতো প্রসিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতা থাকতে তাদের খোঁজ-খবর না নিয়ে, জিল্লুর রহমানের মতো নেতার খোঁজ খবর না নিয়ে তাকে মন্ত্রিসভায় আহবান করেছেন এটা একান্তই একটা ভুতড়ে গল্প।’

বক্তারা সদ্য প্রয়াত স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবুর স্মৃতি প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েলের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, রফিকুল ইসলাম মিয়া, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতা রুহুল কবির রিজভী, হাবিব উন নবী খান সোহেল, ফজলুল হক মিলন, মীর সরফত আলী সপুসহ স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা বক্তব্য রাখেন।

এর আগে শেরে বাংলা নগরে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে পুস্পমাল্য অর্পন করে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

আরো পড়ুন