১৫ আগস্টের খলনায়করা এখনও প্রধানমন্ত্রীর সাথে — রুহুল কবির রিজভী

সোমবার, আগস্ট ২৪, ২০২০ নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ এর ভিডিও কনফারেন্স’র পূর্ণ বক্তব্য নিছে দেওয়া হল।
সুপ্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
আসসালামু আলাইকুম।
১৫ আগষ্ট মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের খলনায়করা প্রধানমন্ত্রীর সাথেই এখনও রয়েছেন। কিন্তু কোন অজানা রহস্যজণক কারণে প্রধানমন্ত্রী তাদের কথা বলেন না। ১৫ আগষ্টের রক্তাক্ত ঘটনার সাথে সাথেই যারা কেবিনেট এবং সংসদ সদস্য থাকলেন তারা মরহুম শেখ মজিবুর রহমানের কেবিনেট ও পার্লামেন্টে ছিলেন। এটি নতুন করে বলার আর প্রয়োজন নেই যে, আওয়ামীলীগের নেতারাই রক্তাক্ত লাশ ডিঙ্গিয়ে নতুন করে শপথের মাধ্যমে মন্ত্রীসভা গঠন করে খন্দকার মুশতাকের নেতৃত্বে। খন্দকার মুশতাক ১৫ আগষ্ট পর্যন্ত বাকশালের মন্ত্রী ছিলেন এবং বাকশালের পার্লামেন্টেই খন্দকার মুশতাক আহমেদ রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর তার অধীনে কার্যক্রম চালাতে থাকে। খন্দকার মুশতাকের মন্ত্রীসভার শপথ পরিচালনা করেছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম।
১৫ আগষ্টের পর খন্দকার মুশতাকের সময়ে জাতীয় সংসদের স্পিকার এবং মন্ত্রীপরিষদের অনেক সদস্যই শেখ হাসিনার অধীনে রাজনীতি করেছেন। কিন্তু তাদেরকে কখনো খলনায়ক তিনি বলেননি। জিয়াউর রহমান সরকারি চাকুরি করতেন এইট টি ইমামের মতই। সেনাবাহিনী সরকারের একটি বিভাগ। তিনি ছিলেন সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় ব্যক্তি, প্রথম ব্যক্তি নন। যিনি সেনাবাহিনীর প্রধান তাঁর কোন দায় নেই, দায় নাকি জিয়াউর রহমানের ! তৎকালীন সেনা প্রধান জনাব শফিউল্লাহর হাতেই ছিল সমগ্র সেনাবাহিনীর কমান্ড। অথচ আওয়ামীলীগের এমপি হওয়ার কারণে তিনি অভিযুক্ত নন। কারণ যে যত অপরাধই করুক শেখ হাসিনার আনুগত্য করলে তার সাত খুন মাফ। ১৫ আগষ্টের সাথে আওয়ামীলীগ নিজেরাই জড়িত তা দিবালোকের মতো যেমন সত্য ঠিক তেমনিই সুপরিকল্পিতভাবে ২১ আগষ্টের সাথেও আওয়ামীলীগের আপনজনরা জড়িত। ২১ আগষ্টে বোমা হামলার পূর্বাপর ঘটনা পরম্পরাতে তা সুস্পষ্ট। অসংখ্য উদাহরনের মধ্যে একটি উদাহরণ হচ্ছে- মুক্তাঙ্গন থেকে আওয়ামী কার্যালয়ে কেন তারা সভা স্থানান্তর করেছিলেন সেই রহস্য সম্পর্কে তারা নির্র্বাক থাকেন।
স্বাধীনতার পর থেকেই আওয়ামী বিরোধীদের নিশ্চিহ্ন করার রক্তাক্ত কর্মসূচী গ্রহণের উদাহরণ একমাত্র আওয়ামী সরকারের। বাম নেতা ও প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ সিকদারসহ সেই সরকারের আমলেই জাসদ ও বাম সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যার মধ্যদিয়ে খুনের রাজনীতির ঐতিহ্য তৈরি করে আওয়ামীলীগ। এর পরে যতবারই তারা ক্ষমতায় আসছেন ততবারই পুলিশের কাষ্টডিতে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের খুনসহ মিছিলে-জনসভায় আক্রমণ করে খুন করার নজির একমাত্র আওয়ামীলীগের। আর এবারের ১২ বছরের দু:শাসনের সীমাহীন লুটপাট-টাকা পাচার-ব্যাংক লোপাটের পাশাপাশি বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের সমর্থক শব্দ হয়েছে আওয়ামীলীগ। বেপরোয়া দুর্নীতি আওয়ামীলীগের অলিখিত দলীয় ইশতেহার। গণতন্ত্রকে কবরের মধ্যে ঢুকিয়ে জনগণকে বশ মানাতে রক্তাক্ত বল প্রয়োগের জন্য হুকুম প্রতিনিয়ত উচ্চারিত হয় আওয়ামী মন্ত্রীদের মুখ থেকে।
সরকারের আত্মম্ভরি ও বাধ্যকরণের নীতির কারণ হচ্ছে সব সেক্টরে তারা ব্যর্থ হয়েছে নিদারুনভাবে। অর্থনীতি অধোগতি, করোনা মোকাবেলায় ব্যর্থতা, হাসপাতালে করোনা রোগির চিকিৎসা না থাকা, আইসিউর অভাব, নমুনা পরীক্ষার দীর্ঘ সূত্রতা, ফল পাওয়ার আগেই রোগির মৃত্যুসহ স্বাস্থ্যব্যস্থার বিপর্যয়, মৃত্যু ও রোগাক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি, ধ্বংশপ্রাপ্ত শিক্ষা, মানুষের জীবনের নিরাপত্ত্বাহীনতা, কর্মসংস্থানের অভাব, লক্ষ-লক্ষ বেকার, দুর্নীতি, টাকা পাচার, ভৌতিক বিদ্যুত বিল, গ্যাস, সুপেয় বিশুদ্ধ পানির অভাব ও মুল্যবৃদ্ধি, আইন ও বিচার বিভাগকে হস্তগত করা, ক্যাসিনো, ভয়ঙ্কর সামাজিক অবক্ষয়, নারী-শিশু নির্যাতন ও ক্রসফায়ারের জন্য এক মনুষত্যহীন বর্বর চেহারা ফুটে উঠেছে বাংলাদেশের। এরা দেশের মানব জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে যে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে সেটিকে ঢাকতেই ১৫ আগষ্ট ও ২১ শে আগষ্ট নিয়ে দেশের মাতৃভূমির মুক্তির জন্য ঝাঁপিয়ে পড়া মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়া ও গণতন্ত্র পূনরুদ্ধানের অবিসংবাদিত নেত্রী, সরকারের জুলুম ও নির্যাতনের শিকার বেগম খালেদা জিয়া এবং নির্যাতিত মজলুম নেতা জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আওয়ামী মন্ত্রীরা ধৃষ্টতাপূর্ণ অবাস্তব গালগল্প ক্রমাগত বর্ননা করে যাচ্ছে। সরকার ‘কোড অব সাইলেন্স’ নীতি অবলম্বন করে বিরোধী মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সম্পূর্ণরূপে হরণ করে, গণমাধ্যকে কব্জায় নিয়ে ক্রমানয়ে ফ্যাসিবাদের অবয়ব চুড়ান্ত রূপ ধারণ করে শহীদ জিয়া, বেগম জিয়া এবং তারেক রহমান সহ বিএনপি’র বিরুদ্ধে অকপট বানোয়াট মিথ্যা কথা প্রচার করে যাচ্ছেন।
বন্ধুরা,
দিন শেষে সবকিছু ছাপিয়ে সত্যই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। মহান স্বাধীনতার ঘোষক ৭১’র রনাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা সেক্টর কমান্ডর ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ৮১ সালের ৩০শে মে চট্টগ্রাম কালুরঘাটে হত্যা করার দিনে কেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সীমান্তের দিকে যাচ্ছিলেন ? যারা তাঁকে হত্যা করেছে তাদের অনেকেরই ফাঁসি হয়েছে কিন্তু দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়েছে। ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্রের কাহিনীও বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। কোন সংস্থা ষড়যন্ত্র করেছে তার সাথে বর্তমান সরকারের সর্ম্পক কি তা কারোই অজানা নয়। স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত সকল হত্যাকান্ডের দায় আওয়ামীলীগের।
বন্ধুরা,
বর্তমান গণবিরোধী অত্যাচারের আরেকটি নমুনা পাটকল বন্ধ করে দেয়া। সরকারি ২৫টি পাটকল এখন সম্পূর্ণ বন্ধ। পাটকল শ্রমিকরা এখন রিকশা চালায় ও নৌকা বাইছে। বর্তমান করোনার সময়ে তারা মানবতার জীবন-যাপন করছে। পাটকল শ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের কথা বলা হলেও তাদের প্রাপ্য টাকা দেয়া হয়নি। সরকারের পক্ষথেকে নানা ধরণের আশ্বাস দেয়া হলেও কোনটাই পূরণতো করা হয়নি বরং শ্রমিকরা প্রতারিত হয়েছে বলে মনে করে। অনাচার-অবিচারের উপর প্রতিষ্ঠিত সরকার কখনোই কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষের স্বার্থকে গুরুত্ব দেবেনা বরং তাদের রক্ত চুষে সমাজে স¤্রাট, খালেক, বরকত ও শামিম তৈরি করবে। পাচার হবে হাজার-হাজার কোটি টাকা।
সকলকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ
Image may contain: 1 person, sitting and indoor
148
3 Comments
8 Shares
Like

Comment
Share
আরো পড়ুন