২১ আগষ্টের গ্রেনেড হামলার আশংকার কথা দু’ দিন আগেই জানার পর শেখ হাসিনা কি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, তারেক রহমানের প্রশ্ন

আব্দুল আজিজ লন্ডন :

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ২১ আগস্ট, ওয়ান ইলেভেন,পিলখানায় সেনাহত্যাজ্ঞ, একটি ঘটনাকে আরেকটি ঘটনা থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখার সুযোগ নেই। সোমবার (২১ আগস্ট) দেশবাসীর উদ্দেশ্যে দেয়া ভার্চুয়াল বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, জনগণ বিশ্বাস করে দেশকে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করার সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই দেশে বিদেশে জাতীয়তাবাদী শক্তির ইমেজ ক্ষুন্ন করতে ২০০৪ সালে ২১ আগষ্টের ঘটনা ঘটানো হয়েছিল। ২১ আগস্ট ছিল স্পষ্টতঃই দেশের জাতীয়তাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে এক গভীর ষড়যন্ত্র।

তারেক রহমান বলেন , ২১ আগস্টের নৃশংস ঘটনাটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিলোনা। ‘একুশে আগস্ট’ আর ওয়ান ইলেভেন একই সূত্রে গাঁথা। ২১ আগস্ট ছিল ২০০৭ সালের কথিত ‘ওয়ান ইলেভেন’ সৃষ্টির প্রাক মহড়া।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে হামলাকে ভয়ঙ্কর ও জঘন্যতম উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, প্রতি বছর ২১ আগষ্টের জঘন্যতম ঘটনা নিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যাপক আলোচনা হয়, নানারকম অনুষ্ঠান হয়। হতেই পারে। তবে ২১ আগষ্টের চেয়ে আরো ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছিল ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছিল। কিন্তু কেন রাষ্ট্রীয় আয়োজনে প্রতিবছর পিলখানায় বর্বরতম সেনা হত্যাযজ্ঞ দিবসে কোনো আলোচনা হয়না, প্রশ্ন করেন তারেক রহমান।

ভার্চুয়ালী প্রায় ২৫ মিনিটের বক্তব্যে তারেক রহমান ২১ আগষ্টের হামলা মামলা নিয়ে আওয়ামী লীগের রহস্যময় তৎপরতা, কথিত ‘জজ মিয়া’কে নিয়ে আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্যমূলক প্রোপাগান্ডা এবং দলীয় পুলিশ কর্মকর্তা দিয়ে কিভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাকে (তারেক রহমানকে) এ মামলায় জড়ানো হয়েছে এসব বিষয় তথ্য প্রমান সহকারে তুলে ধরেন। তিনি প্রশ্ন করে বলেন, প্রয়াত সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফের কাছ থেকে দু’দিন আগেই ২১ আগষ্টের সমাবেশে হামলার আশংকার কথা জানার পর শেখ হাসিনা কি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন?

তারেক রহমান বলেন, ‘দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণই আমার রাজনৈতিক আশ্রয়’ । তাই ২১ আগষ্টের নির্মম ঘটনাটি ঘিরে কিছু প্রশ্ন জনগণের আদালতে উপস্থাপন করতে চাই’। .

তারেক রহমান বলেন, ২১ আগস্ট সম্পর্কে আলোচনা উঠলেই ‘জজ মিয়া’ নামে এক ব্যক্তির গ্রেফতার প্রসঙ্গটি সামনে এনে পুরো বিষয়টিকে সম্পূর্ণ ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্ট চালানো হয়। অথচ, সকল তদন্তেই ২১ আগষ্টের মুখ্য চরিত্র গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার মুফতি হান্নান।

তিনি বলেন, বিএনপি সরকারের আমলেই ২০০৫ সালের পহেলা অক্টোবর মুফতি হান্নানকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে ২০০৫ সালের ৯ জুন গ্রেফতার হয় জজ মিয়া নামে একব্যক্তি। গ্রেফতার হওয়ার সপ্তাহ দুয়েক পর ২৫ জুন ‘জজ মিয়া’ ২১ আগস্ট মামলায় নিজেকে জড়িয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। ‘জজ মিয়া’র স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ‘মুফতি হান্নানের নাম ছিলোনা।

তারেক রহমান বলেন, চাঞ্চল্যকর মামলাগুলো তদারকি করার জন্য বিএনপি সরকারের সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি ‘জাতীয় মনিটরিং সেল’ করা হয়েছিল। জজ মিয়া’র জবানবন্দির আলোকে মামলা এগিয়ে নেয়ার জন্য তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তারা দু’দফায় জাতীয় মনিটরিং সেলের কাছে নির্দেশনা চেয়েছিলো। কিন্তু ২১ আগস্ট মামলার তদন্ত চলাকালে তৎকালীন বিএনপি সরকার শুধু ‘জজ মিয়া’র জবানবন্দির উপর তদন্ত সীমাবদ্ধ রাখেনি। বরং জাতীয় মনিটরিং সেলের পক্ষ থেকে আরো গভীরভাবে তদন্ত এগিয়ে নেয়ার জন্য পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তাদেরকে নির্দেশনা দেয়া হয়। এরই জের ধরে ‘জজ মিয়া’ গ্রেফতারের পর তিনমাসের মাথায় মুফতি হান্নানের গ্রেফতারে প্রমাণিত হয়, বিএনপি সরকারের তদন্ত সঠিক ভাবেই এগুচ্ছিলো।

তিনি আরো বলেন, ‘জজ মিয়া’কে ব্যবহার করে ২১ আগস্ট মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চাইলে বিএনপি সরকারের সময় মুফতি হান্নানকে গ্রেফতারের প্রয়োজন ছিলোনা। ‘জজ মিয়া’কে ব্যবহার করে মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চাইলে বিএনপি সরকারের আমলেই পুলিশ ‘জজ মিয়া’কে অভিযুক্ত করে চার্জশীট দিতে পারতো। ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে হামলা মামলাটিকে জাতীয় স্বার্থেই বিএনপি সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছিলো। তদন্ত পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় তাড়াহুড়ো করে বিএনপি সরকারের আমলে ২১ আগষ্ট হামলা মামলার কোনো চার্জশীট দাখিল করা হয়নি।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, যেখানে ‘জজ মিয়া’কে অভিযুক্ত করে কোনো চার্জশিটই দাখিল করা হয়নি, যেখানে মামলার ১ নম্বর আসামী মুফতি হান্নানকে বিএনপি সরকারই গ্রেফতার করেছে, সেখানে ‘জজ মিয়া’কে ইস্যু বানিয়ে ২১ আগষ্ট মামলার তদন্ত সম্পর্কে বিএনপির বিরুদ্ধে জনগণকে বিভ্রান্ত করার পেছনে আওয়ামী লীগের অবশ্যই ভিন্ন কারণ রয়েছে। সুতরাং, ২১ আগষ্টের ভয়ঙ্কর হামলার নেপথ্য কারণ বের করতে হলে ‘জজ মিয়া’ থেকে বেরিয়ে এসে আরো অনেক প্রশ্নের জবাব খুঁজে পেতে হবে।

তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করে তারেক রহমান বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশ রাজধানীর ‘মুক্তাঙ্গনে’ হওয়ার কথা ছিল। সমাবেশের জন্য ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ লিখিতভাবে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন থেকে ‘মুক্তাঙ্গন’ বরাদ্দ নেয় । ‘মুক্তাঙ্গন’ বরাদ্দ পাওয়ার পর তৎকালীন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের তৎকালীন উপ-দপ্তর সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মিলন ২০০৪ সালের ১৭ আগস্ট লিখিতভাবে ঢাকা মহানগর পুলিশকে জানায়। ঢাকা মহানগর পুলিশ যথারীতি আওয়ামী লীগকে ১৯ আগস্ট লিখিতভাবে ‘মুক্তাঙ্গনে’ সমাবেশের সম্মতিপত্র দিয়ে দেয়।

তিনি বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট প্রায় সকল জাতীয় পত্রিকায় ‘আজ মুক্তাঙ্গনে আওয়ামী লীগের সমাবেশ’ শিরোনামে সংবাদও প্রকাশিত হয়। ২১ আগস্ট নির্ধারিত সমাবেশের দিন বেলা ১২ টার মধ্যেই পুলিশ প্রশাসন ‘মুক্তাঙ্গন’ ও এর আশেপাশের এলাকায় প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

তিনি আরো বলেন, আইনশৃংখলাবাহিনীর সদস্যরা ‘মুক্তাঙ্গনে’ দায়িত্ব পালনের জন্য যাওয়ার সময় নিয়মানুযায়ী মতিঝিল থানায় জিডি করে।
তবে পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা ‘মুক্তাঙ্গনে’র যাওয়ার কিছু সময় পর জানতে পারেন সমাবেশের স্থান কাউকে না জানিয়েই হঠাৎ করেই ‘মুক্তাঙ্গন’ থেকে গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে স্থানান্তর করা হয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী থানায় ফিরে গিয়ে ভেন্যু স্থানান্তরের বিষয়ে বেলা দেড়টার দিকে মতিঝিল থানায় জিডি করে।

ভেন্যু স্থানান্তরের বিষয়ে প্রশ্ন উথাপন করে তারেক রহমান বলেন, যেই সমাবেশের প্রধান অতিথি সেই সময়কার বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা, সেই সমাবেশের ‘ভেন্যু’ কার সিদ্ধান্তে পরিবর্তন করা হয়েছে? কে পরিবর্তন করেছে?

তিনি বলেন, তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেয়া হয়, ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার সমাবেশে হামলার আশংকায় ‘মুক্তাঙ্গনে’র পরিবর্তে সমাবেশের স্থান পরিবর্তন করে ‘বঙ্গবন্ধু এভিন্যু’ এলাকায় স্থানান্তর করা হয়েছিল। তাহলে সেই ‘ভেন্যু’ পরিবর্তনের তথ্য কি আইন শৃংখলাবাহিনীকে জানানো হয়েছিল?

তারেক রহমান বলেন, ২১ আগষ্ট শেখ হাসিনার সমাবেশে হামলার ঘটনা দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অবশ্যই অত্যন্ত ভয়ঙ্কর এবং নৃশংস ঘটনা। এমন একটি ভয়ঙ্কর হামলার ঘটনা সাধারণত ‘পূর্ব পরিকল্পনা ও নিখুঁত নিশানা নির্ধারণ’ ছাড়া হতে পারেনা। সেক্ষেত্রে সমাবেশে গ্রেনেড হামলাকারীদের অবশ্যই ‘ভেন্যু’ সম্পর্কে আগেভাগেই স্বচ্ছ ও সুস্পষ্ট ধারণা থাকবে এটাই স্বাভাবিক।

এ প্রসঙ্গে ২১ আগস্ট হামলা মামলা সম্পর্কে গণমাধমে প্রকাশিত রিপোর্টের কথা তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, পুলিশ এবং হামলাকারিদের জবানবন্দির বরাতে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে , শেখ হাসিনা সমাবেশে প্রথমে ‘আবু জান্দাল এবং কাজল’ গ্রেনেড ছুড়ে মারে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সমাবেশে হামলাকারীদের কয়েকজনের জবানবন্দির আলোকে ‘যারা যেভাবে পরিকল্পনা ও হামলা করেছিল’ শিরোনামে ২০১৮ সালের ২১ আগস্ট দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই রিপোর্টে বলা হয়, ‘হামলার আগের দিন ২০ আগস্ট কাজল ও আবু জান্দাল ‘বঙ্গবন্ধু এভিন্যু’তে গিয়ে এলাকা পর্যবেক্ষণ (রেকি) করে আসেন’।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, রহস্যটি এখানেই। হামলাকারী জঙ্গি- সন্ত্রাসীরা সমাবেশেস্থল ‘মুক্তাঙ্গনে’র পরিবর্তে কেন ‘বঙ্গবন্ধু এভিন্যু’ পর্যবেক্ষণ করলো? ২১ আগস্ট দুপুরে হঠাৎ করেই আওয়ামী লীগের সমাবেশের ভেন্যু ‘মুক্তাঙ্গন’ থেকে পরিবর্তন করে ‘বঙ্গবন্ধু এভিন্যু’তে নেয়া হলো? তাহলে হামলাকারীরা আগেই কিভাবে জানলো, মুক্তাঙ্গনে নয় সমাবেশ হবে ‘বঙ্গবন্ধু এভিনিউ’? হামলাকারীদেরকে ভেন্যু পরিবর্তনের তথ্য আগেই কে জানিয়ে দিয়েছে?

ভার্চুয়াল বক্তব্যে তারেক রহমান প্রয়াত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ছেলে সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের একটি বক্তব্য উদ্বৃত করে বলেন,
‘২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা ‘স্মৃতির পাতা থেকে জানা-অজানা দুই একটি কথা’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল জাতীয় প্রেসক্লাবে। ২০২১ সালের ২০ আগস্ট অনুষ্ঠিত সভায় সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে হামলার ব্যাপারে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করেছে। সভায় সাঈদ খোকন অন রেকর্ড বলেছে, ‘২০০৪ সালে ২১ আগষ্ট শেখ হাসিনার সমাবেশে হামলার কথা তারা দুই দিন আগেই জানতে পেরেছিলেন’। জানার সঙ্গে সঙ্গেই পিতা মোহাম্মদ হানিফের নির্দেশে সাঈদ খোকন নিজে সুধাসদনে গিয়ে শেখ হাসিনাকে দুই দিন আগেই হামলার আশংকার তথ্যটি পৌঁছে দিয়েছেন’।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কয়েকটি প্রশ্ন উথাপন করে বলেন, প্রয়াত সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফ দু’দিন আগেই ২১ আগষ্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে হামলার কথা জানতে পেরেছিলেন সেটি কোন ভেন্যু ? ‘মুক্তাঙ্গন’ নাকি ‘বঙ্গবন্ধু এভিন্যু’ ? শেখ হাসিনাকে তার সমাবেশে হামলার আশংকার কথা দুই দিন আগেই জানানোর পর শেখ হাসিনা কি পদক্ষেপ নিয়েছিলো ? এমন ভয়ঙ্কর তথ্য জানার পর শেখ হাসিনা তথ্যটি কি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানিয়েছিল? শেখ হাসিনা, প্রয়াত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ কিংবা সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন অথবা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কেউ কি আওয়ামী লীগের সমাবেশে হামলার আশংকার তথ্যটি জানিয়ে থানায় জিডি করেছিলেন? এমন একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য সম্পর্কে সিআইডির তদন্তকারী কর্মকর্তারা সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন?

তারেক রহমান বলেন, ২১ আগষ্টের ঘটনার নেপথ্য কারণ জানতে হলে এইসব প্রশ্নের জবাব জানা প্রয়োজন। তবে হীন দলীয় স্বার্থের চেয়ে দেশের স্বার্থ বড় করে না দেখলে কখনোই এ সব প্রশ্নের জবাব মিলবেনা।

বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার পর একযুগ পেরিয়ে গেলেও বর্তমান মাফিয়া সরকার একটি তদন্ত প্রতিবেদন এখন পর্যন্ত আদালতে দাখিল করতে সক্ষম হয়নি। আট বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও আদালতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ফান্ড ডাকাতি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি কিংবা করেনি। অথচ, ২১ আগষ্টের মতো ভয়াবহ হামলা মামলার প্রধান আসামি মুফতি হান্নানকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে মাত্র বছর দু’য়েকের মধ্যেই তৎকালীন বিএনপি সরকার ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিলো।

তারেক রহমান বলেন, মেয়াদ শেষে বিএনপি সরকারের পদত্যাগের পর ষড়যন্ত্রের পথ ধরে ক্ষমতা দখল করে কথিত ওয়ান ইলেভেন সরকার। বিএনপি সরকার ‘জজ মিয়া’র জবানবন্দী আমলে না নিয়ে ২১ আগস্ট হামলা মামলার সঠিক তদন্ত অব্যাহত রেখেছিলো। একইভাবে বিএনপি পরবর্তী ওয়ান ইলেভেন সরকারও ‘জজ মিয়া’র জবানবন্দী আমলে নেয়নি। ওয়ান ইলেভেন সরকারের আমলে ‘জজ মিয়া’কে বাদ দিয়ে মুফতি হান্নানকে এক নম্বর আসামি করে ২০০৮ সালের ৯ জুন প্ৰথমবারের মতো আদালতে ২১ আগস্ট হামলা মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়। এতে মোট ২২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। এই চার্জশিটের উপর ভিত্তি করে ২১ আগস্ট হামলা মামলার বিচার কার্য্ক্রমও শুরু হয়। বিচার শুরুর পর কমপক্ষে ৬১ জনের সাক্ষ্যও গ্রহণ করা হয়।

তারেক রহমান আরো বলেন, কথিত ওয়ান ইলেভেন সরকারের বিদায়ের পর ২০০৯ সালে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তারা মাঝপথেই আদালতে ২১ আগস্ট হামলা মামলার চলমান বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। ২১ আগস্ট হামলা মামলার অভিযোগপত্র নিজেদের ইচ্ছেমতো বানাতে কিশোরগঞ্জের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল কাহহার আকন্দকে পুলিশে ফিরিয়ে এনে তাকে ২১ আগস্ট মামলার অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়।

উল্লেখ্য, বিগত বিএনপি সরকারের আমলে পুলিশের চাকুরী থেকে অবসরে গিয়েছিলেন আব্দুল কাহহার আকন্দ। চাকুরী থেকে অবসরে গিয়ে আব্দুল কাহহার আকন্দ কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে গিয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যক্রমে সক্রিয় হয়েছিলেন। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নও চেয়েছিলো আব্দুল কাহহার আকন্দ। তবে আওয়ামী লীগ তাকে এমপি মনোয়ন দেয়নি।

এ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, আব্দুল কাহহার আকন্দকে আওয়ামী লীগ এমপি না বানালেও ক্ষমতায় গিয়ে তাকে পুলিশের এসপি বানিয়েছে। এসপি পদ পেয়ে আব্দুল কাহহার আকন্দ ২১ আগস্ট মামলাকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে।

উল্লেখ্য, ২১ আগস্ট মামলায় ক্যাঙ্গারু কোর্টে তারেক রহমানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে । ২১ আগস্ট হামলা মামলার অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে কিভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনোদিতভাবে আব্দুল কাহহার আকন্দ কিভাবে ২০১১ সালে দাখিল করা সম্পূরক চার্জশিটে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম ঢুকিয়ে দিয়েছে, বক্তব্যে ধারাবাহিকভাবে সেই বর্ণনাও তুলে ধরেন তারেক রহমান।

তারেক রহমান বলেন, অধিকতর তদন্তের নামে আব্দুল কাহহার আকন্দ ২০১১ সালের তেশরা জুলাই আদালতে দ্বিতীয়বারের মতো ২১ আগস্ট মামলার চার্জশিট দাখিল করে। সেখানে ২২ জনের পরিবর্তে এসপি আকন্দ চার্জশিটে ৫২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে। ৫২ জনের নামের তালিকায় এসপি আকন্দ ২০১১ সালে ‘আমার নাম’ও জড়িয়ে দেয়।

তারেক রহমান বলেন, ‘বিএনপি পরবর্তী ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময়ে প্রথমবারের মতো দায়ের করা ২১ আগস্ট হামলা মামলার চার্জশীটে আমার নাম জড়ানো হয়নি। এমনকি মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর ৬১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছিল। সেই ৬১ জনের মধ্যেও কেউ আমার নাম উল্লেখ করেনি। ২১ আগষ্টের ঘটনার সঙ্গে আমাকে জড়িয়ে কেউ কোনো অভিযোগ তোলেনি। অথচ, অধিকতর তদন্তের নামে এসপি আকন্দ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার নাম জড়িয়ে দিয়েছে’। ২১ আগস্ট হামলা মামলায় শেষ পর্যন্ত এসপি আকন্দের সাজানো গল্প অনুসারে বিচারের নামে প্রহসনের নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে’।

তারেক রহমান আরো বলেন, ‘২১ আগস্ট হামলা মামলায় কোনোভাবেই আমাকে জড়ানোর কোনো তথ্য প্রমান না পেয়ে যেকোনোভাবেই হোক আমাকে জড়ানোর জন্য এসপি আকন্দ শুধুমাত্র ২১ আগস্ট হামলা মামলায়ই মুফতি হান্নানকে ৪১০ দিন রিমান্ডে নেয়। রিমান্ডের নামে আকন্দের নির্যাতন সেল থেকে মুক্ত হয়ে ২০১১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর আদালতকে মুফতি হান্নান লিখিতভাবে জানায়, নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে তার কাছে ২১ আগস্ট মামলায় তার মুখ থেকে ‘আমার নাম’ আদায় করা হয়েছে’।

তারেক রহমান প্রশ্ন করে বলেন, ‘যার মুখ থেকে আমার নাম বের করে ২১ আগস্ট মামলায় আমাকে জড়ানো হয়েছে, সেই মুফতি হান্নানকে অবশ্যই আদালতের কাঠগড়ায় আমার আইনজীবী ‘ক্রস এক্সামিন’ করার সুযোগ পাবে, এটিই আইনের নিয়ম। অথচ, ২১ আগস্ট মামলায় আমার আইনজীবীকে আদালতের কাঠগড়ায় ‘মুফতি হান্নান’কে ‘ক্রস এক্সামিন’ করার সুযোগ না দিয়ে কি কারণে অন্য একটি মামলায় মুফতি হান্নানকে তড়িঘড়ি করে ফাঁসি দেয়া হলো’?

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, এটি বলার অপেক্ষা রাখেনা, শুধুমাত্র ২১ আগস্ট মামলায় আমার নামটি যেকোনোভাবে জড়ানোর জন্যই এমপি না বানিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনা তার বিশ্বস্ত কর্মী আব্দুল কাহহার আকন্দকে এসপি বানিয়েছে। তিনি আরো বলেন, অপ্রিয় বাস্তবতা হচ্ছে, একমাত্র মুফতি হান্নানের মুখ থেকে জোর করে ‘আমার নাম’ বের করে ২১ আগস্ট মামলায় আমাকে জড়ানো হয়েছে। এটি অবশ্যই তদন্তের নামে অনাচার। আর সেই তদন্ত অনুসারে যা হয়েছে সেটি বিচারের নামে অবিচার’।

২১ আগষ্টের সমাবেশ এবং এর আগে পরের কিছু বিষয় সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, দেশের জনগণ এসব বিষয় অল্পবিস্তর সবাই জানার পরও বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের সামনে তিনি এইসব প্রশ্ন ও প্রসঙ্গ আবারো তুলে ধরেছেন, কারণ, ‘মাফিয়া সরকার একদিকে আদালতকে ব্যবহার করে জাতীয় গণমাধ্যমে তার বক্তব্য প্রচার বাধাগ্রস্থ করছে অপরদিকে তার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার-অপপ্রচার অব্যাহত রেখেছে’।

তারেক রহমান বলেন, ‘সচেতন জনগণের সামনে এইসব তথ্যগুলো থাকুক। তিনি বলেন, ‘সময়ের পরিক্রমায় সত্য উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে তার আপন আলোয়’।

ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে চলমান গণ আন্দোলন প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, দেশের ১৮ কোটি মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, ১২ কোটি ভোটারের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য মাফিয়া চক্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করছে বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি, গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি, দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী শক্তি। আন্দোলনকে বাধাগ্রস্থ করতে মাফিয়া সরকার নির্যাতন নিপীড়ন হামলা মামলায় জড়িয়ে বিরোধী দল ও বিরোধী মতের নেতা-কর্মীদের দমিয়ে রাখার অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

তিনি বলেন, হামলা মামলা করে আন্দোলন দমিয়ে রাখা যায়না, সাম্প্রতিক বাংলাদেশ তার সবচেয়ে বড় প্রমান। তিনি বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী -সাহসী-সংগ্রামী জনগণকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘আপনাদের সাহসী আন্দোলনে, মাফিয়া চক্রের বুকে কাঁপন ধরেছে। ইতোমধ্যেই তারা ভারসাম্য হারিয়ে আবোল তাবোল বকতে শুরু করেছে’।

মাফিয়া সরকারের সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র-মানবাধিকার-ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলন অচিরেই চূড়ান্ত বিজয় লাভ করবে। ইনশাআল্লাহ। বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি, গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তির সামনে, ৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের পরাজিত অপশক্তির ষড়যন্ত্র এখন স্পষ্ট হয়ে পড়েছে। ফলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ। অপরদিকে বিশ্বের কোনো গণতান্ত্রিক শক্তিই এখন আর বাংলাদেশের মাফিয়া চক্রের অপকর্মের ভার বইতে রাজি নয়।

আরো পড়ুন