গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার আদায়ে রাজপথের আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ার বিকল্প নেই: তারেক রহমান

গণতন্ত্র এবং ভোটাধিকার আদায়ের আন্দোলনে সবাইকে বিশেষ করে ছাত্র এবং তরুনদের রাজপথে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহবান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন,’বাংলাদেশ যাবে কোন পথে ফয়সালা হবে রাজপথে’।
গত বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন, যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সভাপতি আলহাজ্ব এম এ মালিক। সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদের পরিচালনায় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিন রিজভী আহমেদ, ঢাকা মহানগর বিএনপি (দক্ষিণ) এর আহবায়ক আব্দুস সালামসহ অনেকে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, আজকের প্রবীণরা ৭১ এ তরুণ ছিলেন। অস্ত্র হাতে নিয়ে তারা একটি দেশ স্বাধীন করেছিলেন। বর্তমানেও গণতন্ত্র এবং জনগণের ভোটের অধিকার আদায়ে এই বিজয় দিবসে আরেকটি বিজয়ের শপথ নিতে হবে। তরুণদেরকেই আরেকটি বিজয়ের পথ রচনা করার দায়িত্ব নিতে হবে।শিক্ষার্থী এবং তরুণ প্রজন্মের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তারেক রহমান বলেন, দেশে বর্তমানে ভোটার সংখ্যা ১১ কোটির বেশি। এই ১১ কোটির মধ্যে গত একদশকে ভোটার তালিকায় যুক্ত হয়েছে, তিনকোটির বেশি নতুন ভোটার। এই ভোটারদের প্রায় প্রত্যেকেই ছাত্র-তরুণ-যুবক।

 

তিনি এইসব নতুন ভোটারদের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, নতুন ভোটার হওয়ার পর একটি জাতীয় নির্বাচনেও কি তারা কেউ ভোট দিতে পেরেছে? পারোনি, কেউ পারেনি। কারণ সকল নাগরিকের ভোট, নির্বাচনের আগের রাতেই নিশিরাতে ডাকাতি হয়ে গেছে। সুতরাং, এই ভোট ডাকাতদের প্রতিহত করে নিজেদের অধিকার আদায় করে নিতে হবে।

 

শিক্ষার্থী এবং তরুণদের উদ্যোগে শুরু হওয়া ‘রাষ্ট্র মেরামতে’র আন্দোলনের কথা স্মরণ করে তারেক রহমান বলেন, ভোটের
অধিকার আদায় করতে হলে ‘রাষ্ট্র মেরামতের’ আন্দোলনকে চূড়ান্ত লক্ষ্যে নিয়ে যেতে হবে। আর ‘রাষ্ট্র মেরামত’ আন্দোলন চূড়ান্ত লক্ষ্যে নেয়ার প্রধান অস্ত্রই হলো নাগরিকদের ‘ভোটের অধিকার’। নাগরিকদের ‘ভোটের অধিকার’ পুনরুদ্ধার করা গেলে প্রতি নাগরিক যে যার’ভোটের অধিকার’ প্রয়োগের মাধ্যমে রাষ্ট্র মেরামতের জন্য সঠিক মিস্ত্রি, সঠিক কারিগর অর্থাৎ যোগ্য এবং সঠিক ব্যক্তিটিকে নির্বাচিত করার সুযোগ পাবে। যারা রাষ্ট্রটিকে সঠিকভাবে মেরামত করতে সক্ষম হবে।

 

তারেক রহমান বলেন, সুতরাং, কে, কখন, কাকে কিংবা কোন দলকে ভোট দেবেন, সেই সিদ্ধান্ত হবে পরে। তার আগে ঐক্যবদ্ধভাবে ভোটাধিকার আদায়ে রাজপথের আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ার বিকল্প নেই।

 

স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া, মাদার অফ ডেমোক্রেসি বেগম খালেদা জিয়া তথা জিয়া পরিবারের প্রতি মিথ্যাচার এবং অপরচারের কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ষড়যন্ত্র, জুলুম নির্যাতন যতই আসুক মিথ্যাচার-অপপ্রচার যতই চলুক, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, মানুষের ভোটের অধিকার আদায়ে এই মুহূর্তে তাঁর রাজনৈতিক কর্মসূচী ‘টেইক ব্যাক বাংলাদেশ’।

 

তাঁবেদারদের দখলে চলে যাওয়া জনগণের বাংলাদেশ জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে ‘টেইক ব্যাক বাংলাদেশ’ কর্মসূচি ঘোষণা করে তারেক রহমান প্রশ্ন করে বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূলমন্ত্র ছিল সাম্য-মানবিক মর্যাদা-সামাজিক সুবিচারএর একটিও কি এখন রাষ্ট্র ও সমাজে অবশিষ্ট আছে? ৭১ এর শত্রুমুক্ত সেই বাংলাদেশ কি এখন শত্রুমুক্ত নাকি বাংলাদেশ আজ বন্ধুবেশী শত্রু দ্বারা পরিবেষ্ঠিত? ক্ষমতাসীন অপশক্তির কাছে বাংলাদেশ কি নিরাপদ ?

 

তারেক রহমান বলেন, লাখো প্রাণের বিনিময়ে, দখলদারবাহিনীকে হটিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশকে সম্পূর্ণভাবে শত্রু মুক্ত করেছিলেন, হানাদার মুক্ত করেছিলেন কিন্তু বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তীতে এসে দেখা যায়, বর্তমানে মানুষের স্বাধীনতা দূরের কথা দেশের স্বাধীনতাই এখন হুমকির মুখে। দেশে গণতন্ত্র নেই, মানুষের ভোটের অধিকার নেই, মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা নেই।

 

তিনি বলেন, দেশের বর্তমান বাস্তবতা হলো, অন্যের স্বার্থে একদিকে আবরারদের মতো দেশপ্রেমিককে পিটিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে, অথবা মানুষকে ভয় দেখাতে ফেলে রেখে আসা হচ্ছে সীমান্তের ওপারে। মিথ্যা অপবাদ দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে, সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলিয়ে রাখা হচ্ছে ফেলানীদের লাশ।

 

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, গত একযুগ ধরে যারা অবৈধভাবে বিনাভোটে দেশের ক্ষমতা জবর দখল করে রয়েছে,দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের সঙ্গে তাদের আচরণ ৭১ এর হানাদারবাহিনীর মতো। মুক্তিযুদ্ধকালে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে না পেলে, হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের মা-বোন-ভাই কিংবা স্বজনদের ধরে নিয়ে যেত। তাদেরকে হত্যা করতো, গুম করতো, নির্যাতন চালাতো। আর এখন স্বাধীন বাংলাদেশেও, ভিন্ন দল এবং মতের মানুষকে হাতের নাগালে না পেলে, তাদের মা-বোন আত্মীয় স্বজনকে, আওয়ামী দখলদারবাহিনী তুলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করছে। গুম করছে, খুন করছে।
তারেক রহমান আরো বলেন, বর্তমানে দেশে সরকারটি ক্ষমতা দখল করে রেখেছে, দেশে বিদেশে এই সরকারটির পরিচয়, গভর্নমেন্ট অফ দ্যা মাফিয়া, বাই দ্যা মাফিয়া, ফর দ্যা মাফিয়া।

 

তিনি বলেন, ৭৫ এর ৭ নভেম্বরের পরাজিত অপশক্তি, ২১ আগস্ট, কথিত ওয়ান ইলেভেন-সহ নানা ষড়যন্ত্রের পথ ধরে,মহাজোটের নামে একজোট হয়ে ২০০৯ সালে ক্ষমতা দখল করেছিল। এরপর, তারা বিনাভোটে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে, একে একে রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের চরিত্র নষ্ট করে দিয়েছে। ধ্বংস করে দিয়েছে। এই মাফিয়া চক্র, অবৈধভাবে, বিনাভোটে ক্ষমতা ধরে রাখতে, গণতন্ত্রকামী জনগণের পেছনে লেলিয়ে দিয়েছে র্যাব- পুলিশ।
একটি বিশেষ চক্র, গত একযুগ ধরে ভিন্ন দল ও মতের অসংখ্য মানুষকে গুম-খুন-অপহরণ করেছে। তারা স্ত্রীর কাছ থেকে স্বামীকে, মায়ের কোল থেকে সন্তানকে, বোনের কাছ থেকে ভাইকে, অপহরণ করে নিয়ে গেছে। গুম করেছে। অনেককে হত্যা করে লাশ ফেলে দিয়েছে বনে-জঙ্গলে নদীতে।.
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির ক্ষমতার লিপ্সা মেটাতে গিয়ে, তাকে বিনাভোটে ক্ষমতায় রাখতে গিয়ে, খুন-খারাবি আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে বর্তমানে র্যাব-পুলিশ দেশে বিদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী বাহিনী হিসেবে অভিযুক্ত। শুধু র্যাব -পুলিশই নয় ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে নিশিরাতের নির্বাচনে বিতর্কিত ভূমিকা রাখায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খোদ সেনাবাহিনীর ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ করে দিয়েছে, দেশের ক্ষমতাসীন মাফিয়া সরকার।
You might also like