শাহরিয়ার কবিরকে না চেনার অপরাধে সাফা কবিরকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিতে মন চায় আমাদের- মোস্তফা সরয়ার ফারুকী
আমরা মোটামুটি উত্তপ্ত তাওয়ার উপর বসে আছি। অনেকেই যেতে-আসতে তাওয়ার নীচের আগুনে তুষ ছুঁড়ে দিচ্ছে, কেউবা দিচ্ছে ঘি। সামনের ডিসেম্বর আসতে আসতে এই তাওয়ার অবস্থা কি হয়- এ নিয়ে বড় আতঙ্কে আছি। আমি নিশ্চিত বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষই এইরকম একটা উৎকণ্ঠার মধ্যে আছেন।
এই উৎকণ্ঠা একমাত্র দূর করতে পারতো আমাদের দূরদর্শিতা, আমাদের দিলের রহম, আর সহাবস্থানে ইচ্ছুক মন। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা আমাদের সকল কমিটিই নির্মূল কমিটি। আমাদের সকল আদর্শই অপর আদর্শকে বিনাশ করার মধ্যেই নিজের গৌরব খুঁজে পায়!
এখানে যে দল ক্ষমতায় থাকে তারা ক্ষমতার বাইরের দলকে নিশ্চিহ্ন করতে চায়! এবং এটা পালাক্রমে চলতেই থাকে। এই নিশ্চিহ্ন করার বাসনা ব্যক্তিজীবনেরও এতো গভীরে চলে যায় যে, শাহরিয়ার কবিরকে না চেনার অপরাধে বাচ্চা মেয়ে সাফা কবিরকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিতে মন চায় আমাদের। যেনো কিম জং উনকে না চেনার অপরাধে বসা এক কোর্ট মার্শাল। আমাকেও এরকম বহু মব ট্রায়ালে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। কোনো কোনো ট্রায়ালে ভারতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
২০১৪ বা ১৫ সালের দিকে একটা লেখায় লিখেছিলাম, এই দেশে আওয়ামী লীগ-বিএনপি একটা বাস্তবতা। আওয়ামী লীগের পক্ষে বিএনপি সমর্থক কোটি কোটি মানুষকে বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেয়া সম্ভব না। বিএনপির পক্ষেও তা সম্ভব না। এমনকি জামায়াতে ইসলামী প্রায় দশ বছর প্রবল চাপের মুখে থেকেও সেদিন সমাবেশে দেখিয়েছে, আপনি চাইলেই কোনো একটা আদর্শে বিশ্বাসী মানুষদের মুছে দিতে পারেন না। বরং এই চেষ্টায় আখেরে যেটা হয় সেটা হলো আমাদের কালেকটিভ শক্তির ক্ষয়! জাতির প্রাণ শক্তি ক্ষয় হয়।
আমরা তো অনেক কিছুই ছেড়ে আসছি। উন্মুক্ত স্থানে টয়লেট করা বাদ দিছি। এনালগ ফোনের জায়গায় মোবাইল টেপা শিখছি। এক সাথে থাকাটা কেনো শিখতে পারবো না? কেনো এটা বুঝতে চাইবো না সবাই আমার মতো একই স্রষ্টায় বিশ্বাসী হবে না, সবাই একই রকম খাবার খাবে না, একইভাবে ভালোবাসবে না? কেনো এটা বুঝতে চাইবো না, যার যার স্টেক নিয়ে সমাজের সব পক্ষই পাশাপাশি থাকবে? তর্ক হবে, বিতর্ক হবে, কিন্তু নির্মূলের ব্যর্থ চেষ্টা হবে না। সময় এসেছে সকল নির্মূল কমিটির দোকান বন্ধ করে দেয়ার।
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)