প্রসঙ্গ : বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ
নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরশাসনের অবসানের পর বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে নিরপেক্ষ নির্বিচনে বিজয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রী হন বেগম খালেদা জিয়া। ‘দেশনেত্রী’ ও ‘আপসহীন’ নেত্রী বিশেষণে দেশে পরিচিত হয়ে ওঠেন তিনি। সেই তিনি দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের ইতিহাসের এটি অবিচ্ছেদ্দ অংশ, যা মুছে ফেলা যাবে না।
১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সালের কথা। ওই সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কাজ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। সে সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি নিয়ম চালু ছিল, মাসে একটি বা দু’টি ‘মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত বিশেষ সভা’ হতো। মন্ত্রণালয়ের নানা প্রকল্পের ও কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে পদক্ষেপ নেয়াই ছিল সভার লক্ষ্য। এতে সিনিয়র মন্ত্রী ও সচিবরা উপস্থিত থাকতেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস শাখায় দায়িত্ব থাকায় ওই সভায় প্রায়ই উপস্থিত থাকতাম। কোনো সভায় প্রেস সচিবও থাকতেন।
একদিন এমনই একটি সভা চলছিল ত্রাণ মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত। মন্ত্রী-সচিব ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সাথে তৎকালীন একান্ত সচিব সাবিহ উদ্দিন আহমেদ এবং আমারও উপস্থিত থাকার সুযোগ হয়। সভা শুরু হলো। বন্যা-পরবর্তী পুনর্বাসন, কাবিখা, খাল খনন ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। মানুষের কল্যাণের সাথে জড়িত প্রকল্পগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতেই অনুমোদন করে দেয়া হলো। অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানকেও দেখলাম প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের সাথে একমত হয়ে দ্রুত টাকা ছাড় করার কথা বলছেন। আলোচনার একপর্যায়ে তৎকালীন ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী লুৎফর রহমান খান আজাদ একটি বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে বললেন, “ম্যাডাম এ সময় তো ‘কামলা’ পাওয়া যায় না”। প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া তৎক্ষণাৎ মাইক্রোফোন অন করে বললেন, “আজাদ আপনি এটা কী শব্দ বললেন? তারা ঘাম ঝরিয়ে কাজ করেন। তাদের ‘শ্রমজীবী মানুষ’ বলতে অসুবিধাটা কোথায়? ‘কামলা’ তো গালাগাল অর্থে ব্যবহার করা হয়। প্রতিমন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করে প্রতিশ্রুতি দিলেন এর পর থেকে শব্দটি আর তিনি ব্যবহার করবেন না। এই হলেন খালেদা জিয়া।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে যোগ দেয়ার পর প্রেস সচিব হিসেবে তৎকালীন পিআইও আবদুস সোবহান ভাইকে পাই। তার আগে প্রেস সচিবের কক্ষে বসতেন সাংবাদিক সম্পাদক তোয়াব খান। তিনি প্রেসিডেন্ট এরশাদের প্রেস সচিব ছিলেন। সোবহান ভাই প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার প্রেস সচিব হিসেবে এ কক্ষে বসার পর আমরা তার টেবিলের ড্রয়ারে আগের আমলের কিছু আছে কি না দেখছিলাম। একটি ড্রয়ারে পেলাম অনেকগুলো লেখা প্যাডের কাগজ। রাষ্ট্রপতির অফিসের প্যাডের কাগজ। এতে প্রাপ্তি স্বীকার স্বাক্ষর করা। এরশাদের কাছ যারা অর্থ নিয়েছিলেন তার প্রাপ্তি স্বীকার। আমরা বেশ মজা পেলাম।
এদের মধ্যে কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা, শিল্পী, কবি-সাহিত্যিক এবং অন্যান্য পেশার ব্যক্তি রয়েছেন। টাকার পরিমাণ খুব একটা বেশি না। পঁচিশ, পঞ্চাশ হাজার, এক লাখের মতো। অবশ্য ১৯৯১ সালের আগে এ পরিমাণ টাকা একেবারে কমও না। যাই হোক, আমরা কাগজগুলো নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাই। বেগম খালেদা জিয়ার কক্ষে তাকে প্রাপ্তি স্বীকারপত্রগুলো দেয়ার পর তিনি এক এক করে সেগুলো দেখলেন। আমরা তার সামনে চেয়ারে বসা। দেখা শেষ হয়ে গেলে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বললেন, ‘সোবহান সাহেব, এগুলো পুড়িয়ে ফেলুন। এখনি পুড়িয়ে ফেলুন।’ আমি বললাম, ম্যাডাম প্রেসে দিলে তো মানুষ জানতে পারতেন। তিনি আমাকে অনেকটা ধমকের সুরেই বললেন, ‘এরশাদ সাহেব যে টাকা বিলাতেন সেটি তো সবাই জানেন। তা ছাড়া তার তো পতন হয়েছে, জনগণ তাকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। আর প্রাপ্তি স্বীকারপত্রে যাদের নাম দেখছি তারা তো আমাদের দেশের সৃজনশীল ও গুণী মানুষ। হয়তো একান্ত প্রয়োজনেই টাকা নিয়েছেন। প্রেসে গেলে তাদের সুনাম ও মর্যাদা নষ্ট হবে না? কেন আমরা তা করব? এই হলেন খালেদা জিয়া।
১৯৯৬ সালের ৩১ মার্চের ঘটনা। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়ার শেষ কার্য দিবস। কিছুক্ষণ পরই তিনি বঙ্গভবনে যাবেন রাষ্ট্রপতিকে সংসদ ভেঙে দেয়ার পরামর্শ দিতে। প্রধানমন্ত্রীর কক্ষ থেকে বের হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে তার মনে হলো ‘রাজারবাগ-শহিদবাগ মোড়ে’ নিহত একজন পুলিশ কর্মকর্তার পরিবারকে প্রতিশ্রুত অর্থ সহযোগিতা করা হয়নি। তিনি তৎকালীন সচিব ড. কামাল সিদ্দিকীকে ডাকলেন। ফাইল আনিয়ে সেই অর্থ সহযোগিতার নোটে স্বাক্ষর করে বললেন, ‘আমি বঙ্গভবনে যাওয়ার আগেই যেন নিহতের পরিবার টাকার চেক পায়।’ এই হলেন খালেদা জিয়া।
বেগম খালেদা জিয়া আজ ভীষণ অসুস্থ। তিনি ৭৫ বছর পার করে এখন বার্ধক্যে উপনীত। দেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন দু’বার। নির্বাচনে দাঁড়িয়ে কখনো হারেননি। সব সময়ই রেকর্ডসংখ্যক ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। দেশের মানুষ এখনো তাকে অসম্ভব ভালোবাসেন। প্রতিটি দুর্যোগে তিনি ছুটে গেছেন দুর্গত মানুষের পাশে। দুই হাতে সহযোগিতা করেছেন। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট তৈরিতে, শিক্ষার বিস্তারে, মানুষকে আত্মকর্মসংস্থানে উদ্বুদ্ধ করেত হাঁস-মুরগির খামার, গরু-ছাগলের খামার, বৃক্ষরোপণ প্রভৃতিতে নিয়োজিত করতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প নিয়ে তা অনুমোদন করে দিয়েছেন।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় অসামান্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন তিনি। স্বামী জিয়াউর রহমান যখন মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন, তখন দুই শিশুপুত্রকে নিয়ে একাত্তরে বন্দিশিবিরে তিনি। স্বামী রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর জনগণের চাওয়াকে প্রাধান্য দিয়েই গৃহবধূ থেকে রাজনীতি আসেন। অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে সাথে নিয়ে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলন শুরু করেন। নব্বইয়ের স্বৈরশাসনের পতনের পর দেশে আবার গণতন্ত্র ফিরে আসে। তিনিই সংসদে বিল এনে দেশে সংসদীয় ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করেন। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল বাংলাদেশে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছিল। তিনি প্রধানমন্ত্রীর দফতর চট্টগ্রামে সরিয়ে নিয়ে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কাজ একটানা তদারকি করে মানুষকে আবার উঠে দাঁড়াতে সহযোগিতা করেন। সফলভাবে এ ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় তার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন- তৎকালীন বাংলাদেশে আসা মার্কিন টাস্কফোর্সের প্রধান জেনারেল স্ট্যাকপল। ভয়েস অব আমেরিকাকে তিনি বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার আবেদনে সাড়া দিয়ে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের (সিনিয়র) নির্দেশে আমরা ত্রাণ কাজ চালাতে গিয়েছিলাম। আমাদের এক মাসের অভিজ্ঞতা চমৎকার। ত্রাণসামগ্রী যাদের জন্য এসেছে, তারাই পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দৃঢ় মনোভাব ও কঠোরতার প্রশংসা করি। তিনি কোনো ত্রাণসামগ্রী অপচয় হতে দেননি। দুর্নীতি হয়নি, লুটপাটের প্রশ্নই ওঠে না। তার সাথে কাজ করতে পেরে খুব ভালো লেগেছে।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে বিরোধী দলের দাবি মেনে নিয়ে সংসদে তিনিই বিল পাস করে দিয়েছিলেন। এর আগে স্যার নিনিয়ান যে ফর্মুলা দিয়েছিলেন, সেটিও মেনে নিয়েছিলেন। যদিও যারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার আন্দোলন করে এনেছিলেন, তারাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা এখন ছুড়ে ফেলে দিয়েছেন।
রাজনীতিতে বিনয় আর উদারতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ তিনি। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় চট্টগ্রামে শেখ হাসিনার জনসভায় গুলি হয়েছিল। ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে দুই নেত্রীর নেতৃত্বে শোক মিছিল বের হওয়ার কথা ছিল। মিছিলে সেই দিন শেখ হাসিনা আসতে পারেননি। খালেদা জিয়া এসেছিলেন। মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তেমনি ১৯৮৬ সালে বায়তুল মোকাররম থেকে দুই নেত্রীর নেতৃত্বে গণমিছিলের কর্মসূচি ছিল। সেই মিছিলেও শেখ হাসিনা আসতে আসেননি, খালেদা জিয়াই নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
১৯৮৬ সালের পাতানো নির্বাচনের পর ৭ দল ও ১৫ দলের ঐক্য ভেঙে যায়। ১৯৮৮ সালে খালেদা জিয়ার কারণেই সেই ঐক্য আবার হয়। আন্দোলন ঐক্যবদ্ধভাবে চলে।
মেয়েদের শিক্ষায় বেগম খালেদা জিয়া্র সরকার যুগান্তরী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন |
খালেদা জিয়াই শেখ হাসিনাকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাতে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে গিয়েছিলেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিয়েতে যোগ দিতে বেগম জিয়া এমপি হোস্টেলে গিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা ব্যস্ততার কারণেই হয়তো তাকে রিসিভ করতে পারেননি। কিন্তু তারেক রহমান ও আরাফাত রহমানের বিয়েতে শেখ হাসিনা এলে বেগম জিয়া তাকে রিসিভ করেন। একসাথে খাবার খান। ছেলের বউ দেখাতে নিয়ে যান। জরুরি সরকারের সময় সাব-জেলে শেখ হাসিনার চোখের অসুখ বেড়ে গেলে খালেদা জিয়া কোর্টে এসে তাকে চিকিৎসা করানোর আহ্বান জানান। শেখ হাসিনার স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার মৃত্যুর পর খালেদা জিয়া শেখ হাসিনাকে সমবেদনা জানাতে সুধা সদনে ছুটে গিয়েছিলেন। একটিমাত্র ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম ছিল। আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুলশান অফিসে গেলে তাকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। অবশ্য খালেদা জিয়া তখন অচেতন ছিলেন। এ ভুলের জন্য তার কর্মকর্তারা দায়ী। এই একটিমাত্র ঘটনা ছাড়া খালেদা জিয়ার বিনয়ের ক্ষেত্রে কোনো ঘাটতি লক্ষ করা যায়নি। নারী জাগরণের নেত্রী মহীয়সী বেগম রোকেয়ার স্বপ্নের রূপকার ছিলেন বেগম জিয়া। নারী উন্নয়নে এবং মেয়েদের শিক্ষা বিস্তারে তিনি অনন্য অবদান রেখেছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন।
এমন একজন অসাধারণ গুণের মানুষ আজ জটিল রোগে জর্জরিত হয়ে প্রবীণ বয়সে নিদারুণ কষ্টের জীবনযাপন করছেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ১৭ জুন সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, করোনা-পরবর্তী জটিলতা ও পুরনো রোগে খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ। দীর্ঘ চার বছর তার কোনো চিকিৎসা হয়নি। কারাগারে অমানবিক পরিবেশে তিনি অনেক রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। হার্টের সমস্যা, কিডনি সমস্যা, লিভারের সমস্যা, পুরনো আর্থ্রাইটিস- সব মিলে তিনি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছেন। সরকার তাকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেয়নি।
৫৩ দিন পর রাজধানীর এভারকেয়ার হসপিটাল থেকে গুলশানে নিজ বাসভবনে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া |
১৯ জুন রাতে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে বাসায় আনা হয়েছে। তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক দলের প্রধান অধ্যাপক ডা: এফ এম সিদ্দিকী সাংবাদিকদের জানান, ৫৩ দিন তিনি হাসপাতালে ছিলেন। এ সময় কতটা জটিলতার মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ধারণা ছিল না, কনফিউশন ছিল অনেক। তিনি জানান, তাকে হাসপাতালে নেয়ার পর সিটি স্ক্যানসহ সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। প্রথম দেখা যায় তার বুকে পানি এসেছে, হার্ট ফেইলিওর-সংক্রান্ত। করোনায় হার্ট ফেইলিওর হতে পারে। প্রথন তিন দিন চিকিৎসার পর কিছুটা উন্নতি হলেও জ্বরে আক্রান্ত হন আবার। বুকে আবার পানি আসে। এক দিনের মধ্যে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে যায়। এ অবস্থায় সিসিইউতে নিয়ে গিয়ে দেখা যায় অর্ধেক বুক পানিতে ভরে গেছে। চেস্ট টিউব দিয়ে পনি বের করি। দেখা যায় পানি নয়, রক্ত। প্রায় ১৮দিন চেস্ট টিউবে পানি নিঃসরণ করা হয়। ভেন্টিলেটরে দিতে পরিবারের মতও ছিল। তার বুক থেকে ৭ লিটারের মতো পানি ও রক্ত বের করা হয়েছে। পরীক্ষার সময় দেখেছি হার্ট ফেইলিওর, কিডনি ও লিভার সমস্যা প্রকট।
ব্লাড কালচার করে দেখেছি, হাসপাতালে যেসব জীবাণু থাকে সেগুলো আক্রমণ করছে। দুই তিন ধরে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টায় কিছু নার্স, মেডিক্যাল স্টাফ, ডাক্তার আক্রান্ত হয়েছেন। মেডিক্যাল বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ অবস্থায় খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে রাখাটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে তাকে পাঁচ ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়েছে। অথচ খালেদা জিয়ার সারা জীবনে তাকে রক্ত দেয়ার কোনো নজির নেই।
খালেদা জিয়া এমন অসুস্থতায় বর্তমানে এক দুঃসহ, মর্মান্তিক ও অসহায় জীবন অতিবাহিত করছেন। একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, তিন যুগেরও বেশি সময়ের দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক নেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন, মুক্তিযুদ্ধে অনন্য ভূমিকা পালনকারী এবং যার স্বামী একজন সেক্টর কমান্ডার ও জেড ফোর্সের প্রধান ছিলেন, সর্বোপরি একজন নারী এবং বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ হিসেবে উন্নত চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার তার রয়েছে। এটি তার মানবাধিকার। আশা করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন নারী হয়ে বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে বিদেশে উন্নত চিকিৎসায় তাকে সুযোগ করে দেবেন।
-
লেখক সাংবাদিক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় প্রেস ক্লাব