৭ই নভেম্বরই মূলত মুক্তিযুদ্ধের পরিপূনতা -রাকেশ রহমান ”
রাত যখন গভীর হলো, দেড়টা-দুটা বাজে, ঘড়ির সময় অনুযায়ী ৭ই নভেম্বর গভীর রাতে হঠাৎ গুলির আওয়াজ শোনা যেতে লাগল। রাত যতই বাড়তে লাগল গুলির আওয়াজও ততই বাড়তে লাগল। গুলির আওয়াজে মনে হতে লাগল এ যেন পঁচিশে মার্চ, ১৯৭১–এর মতোই এক কালো রাত। পঁচিশে মার্চ, ১৯৭১–এর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র ঘুমন্ত বাঙালিকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করেছে। কিন্তু আজকের গুলি কারা করছে। কেন করছে। কার বিরুদ্ধে করছে কিছুই বুঝা যাচ্ছে না। ৭ই নভেম্বর ভোর হতে না হতেই দেখা গেল সেনাবাহিনীর সিপাহীরা (জোয়ান) আকাশপানে গুলি করতে করতে রাস্তা দিয়ে পায়ে হেঁটে, গাড়িতে চড়ে যে যেভাবে খুশি ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর এই সেনা সিপাহীদের সাথে স্বতঃস্ফূর্তভাবে জনগণের একটা অংশ যোগ দিয়েছে। সিপাহী-জনতা রাজপথে মিছিল করছে আর আকাশের দিকে গুলি ছুঁড়ছে, শ্লোগান দিচ্ছে। সিপাহী-জনতার এই মিছিল থেকে নানা ধরণের শ্লোগান শোনা গেল। কোনো মিছিল থেকে শ্লোগান এলো মোস্তাক-জিয়া জিন্দাবাদ, মুসলিম বাংলা জিন্দাবাদ। কোনো মিছিল থেকে শ্লোগান উঠল কর্নেল তাহের জিন্দাবাদ, তাহের-জিয়া ভাই ভাই। গণবাহিনী জিন্দাবাদ, সিপাহী-জনতা ভাই ভাই ইত্যাদি নানা ধরণের শ্লোগান দিতে শোনা গেল সিপাহী-জনতার মিছিল থেকে। এই সিপাহী-জনতার সামনে কোনো সুস্পষ্ট লক্ষ্য বা পরিষ্কার কোনো ধারণা যে ছিল না তা বোঝা যাচ্ছিল। এবং এই সিপাহী-জনতার বিদ্রোহে কোনো একক নেতৃত্ব বা নিয়ন্ত্রণ যে ছিল না তাও বোঝা যাচ্ছিল। তবে এই সিপাহী-জনতার বিদ্রোহ যে আওয়ামী বাকশালী এবং শেখ মুজিব–এর অনুসারীদের বিরুদ্ধে তা নিশ্চিত ছিল। ঐ মিছিলকারী সিপাহী-জনতা আওয়ামী বাকশালী বা শেখ মুজিব–এর অনুসারীদের দেখামাত্র যে মেরে ফেলত তাতে কোনোই সন্দেহ ছিল না। ৭ই নভেম্বরের সিপাহী-জনতার বিপ্লব ছিল শেখ মুজিবর রহমান, আওয়ামী বাকশালী ও ভারতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। সাধারণ সিপাহী-জনতা এই বিপ্লবে স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকেই নেতা মনে করেছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টে শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী বাকশালীরা বা শেখ মুজিবের অনুসারীরা কে যে কোথায় লাপাত্তা হয়ে গেল তার কোনো হদিস পাওয়া গেল না। অবশ্য শেখ মুজিবের সহ পার্টি বা আওয়ামী বাকশালী নেতাদের একটা বিরাট অংশ মুজিব হত্যাকারীদের সাথে হাত মেলালো এবং হত্যাকারীদের নেতা খন্দকার মোস্তাক আহম্মেদের নেতৃত্বে সরকার গঠন করল।” – ( ইতিহাস থেকে নেওয়া ) জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশের প্রকৃত দেশ প্রেমিক , গণতন্ত্রের প্রবর্তক , একজন খাঁটি মুসলিম যিনি সংবিধানে বিসমিল্লাহির রহমানের রাহিম সংযোজন করেছিলেন এবং তাঁর উদ্যোগে বাংলাদেশের সাথে মুসলিম দেশগুলোর সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো। বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৮০ ভাগই মুসলমান তাই তিনি চেষ্টা করেছিলেন মুসলিম বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে নিজের দেশের ও মুসলিম জাতির একত্বতা তৈরি করতে। তিনি নিজেও একজন নামাজী , খুবই সাধারণ, উদার ও অন্যায়ের প্রতিবাদী ছিলেন। ১৯৭১ সালে একজন স্বার্থপর নেতা যখন পুরো জাতির আবেগ নিয়ে খেলছিলেন ঠিক তখনই অপরিচিত একজন মেজর একজন প্রকৃত দেশ প্রেমিক দেশ ও জাতির স্বার্থে নিজের জীবনের চিন্তা না করে নিজ উদ্যোগে, নিজ হাতে লিখে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন এবং নিজেই বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বলে ঘোষণা দিয়ে দেশ ও জাতিকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহবান জানান। অপরদিকে জাতির স্বার্থ নিয়ে খেলা করা সুবিধাবাদী নেতা যিনি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষায় ছিল সে পাবে কি পাবে না তথা পুরো পাকিস্থানের ক্ষমতা। পারলেন না দিতে একটি চিঠি তাঁর বাড়ি থেকে প্রায় ২০/৩০ মিনিটের রাস্তা দূরত্বে অবস্থানরত দেশী বিদেশী সাংবাদিকদের । সে কিনা ঐ স্বাধীনতার ঘোষণাটি দিয়ে পাঠিয়েছেন চট্টগ্রামে। এটা কি বিশ্বাস যোগ্য? দেশের স্বার্থে জাতির প্রয়োজনে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণায় বলেছিলন ” আমি রাষ্ট্রপতি মেজর জিয়াউর রহমান ” এটাই সত্যি আর এটা ছাড়া কোন উপায়ও ছিলোনা । কিন্তু জিয়াউর রহমান আবারো যখন দেশের চরম ক্লান্তিলগ্নে সিপাহী বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতায় এলেন। পারতেন সব মুছে ফেলে নিজের নাম বড় করে ইতিহাসের পাতায় লিখে দিয়ে যেতে, তা তিনি করেন নি। জীবনে কখনো বলেনও নি বরং সম্মান প্রদর্শন করেছেন সুবিধাবাদী নেতাদের। আর চালু করেছেন বহুদলীয় গণতন্ত্রের ধারা। স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন সংবাদ পরিবেশনার সকল সংবাদ মাধ্যমকে। দেশে ফিরিয়ে এনেছিলেন সেই সুবিধাবাদী নেতার কন্যাকে এবং আনার সময় বলেছিলেন নিজের জীবন দিয়ে হলেও সুবিধাবাদী কন্যার হেফাজত করবে। সুযোগ করে দিয়েছিলেন ঐ নেতার কন্যাদের রাজনীতি করতে। এরকম উদার নেতা কি আর আমরা পাবো ? এর ফলে কি ঘটলো… যেই মাসে ঐ সুবিধাবাদী নেতার কন্যা দেশে এলেন সেই মাসেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হলে জিয়াউর রহমানের হত্যার পরিকল্পনা করা হয় এবং জিয়াউর রহমান নিজেও জানতেন চট্টগ্রামে তার জীবনের হুমকি ছিল। তারপরও দেশ ও জাতির স্বার্থে তিনি সেখানে কোন্দল থামাতে জান , গিয়ে শহীদ হন ৩০ শে মে তাঁকে হত্যা করা হয়। তাঁর জানাযায় রেকর্ড পরিমাণ মানুষ সমাগত হয়েছিল। জিয়াউর রহমানই একজন সফল রাষ্ট্রপতি, মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিক নির্দেশক। ৭ই নভেম্বর জিয়াউর রহমান স্বেচ্ছায় নয় সিপাহী-জনতার গণতান্ত্রিক বলে উঠে আসেন ক্ষমতার শীর্ষে তাই ৭ই নভেম্বরকেই বাংলাদেশের গণতন্ত্রের বিপ্লব হিসেবে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় এবং বহিঃপ্রকাশ ঘটে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বহিঃপ্রকাশের। – রাকেশ রহমান ( লেখক, কলামিস্ট )