মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের কার্যক্রম
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল দেশের অন্যতম বৃহৎ ছাত্র সংগঠন। বিগত ১৭বছর ধরে সারাদেশে ছাত্রলীগ ও প্রশাসনের হামলা, মামলা, গুম, খুনসহ শত নির্যাতন উপেক্ষা করে তাদের রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছে। সিলেটেও এই চিত্রের বাইরে নয়৷ সারাদেশের মতোও সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ নেতাকর্মীদের নামে অর্ধশতাধিক মামলা, হামলা, গুলি ও গ্রেফতার হয়ে মাসের পর মাস কারাগারে থাকার নজির রয়েছে। মহানগর ছাত্রদলের সাধারন সম্পাদক ফজলে রাব্বি আহসান এর বিরুদ্ধে সর্বোচ্ছ ৪২টি দায়ের করা হয়েছে। এ সকল নির্যাতন উপেক্ষা করে সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় সকল কর্মসূচী সফলভাবে পালন করেছে। বিশেষ করে ২০২৩ সালের ২৮শে অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৫ই আগষ্ট পর্যন্ত ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে সিলেটের রাজপথে ছাত্রদল অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এই আন্দোলনের মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম টিপুসহ অসংখ্য নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ ও গুরুতর আহত হয়েছেন।
৫ই আগষ্টের গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মানে সিলেটেও ছাত্রদলকে নতুন নেতৃত্ব দেখতে চায় সাধারণ নেতাকর্মীরা। বর্তমানে দুই বছর মেয়াদি কমিটির মেয়াদ ৭বছর হতে চলছে। কমিটির জেলা ও মহানগর শাখার শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বয়স ৪০এর উপরে এবং কেউ কেউ আবার দুই /তিন সন্তানের ও জনক। এই অবস্থায় ক্যাম্পাসমুখী নতুন নেতৃত্ব চায় সাধারণ নেতাকর্মীরা।
সিলেট এমসি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্র দলের আহবায়ক সেলিম আহমদ সাগর বলেন, আমরা ক্যাম্পাসমুখী ছাত্র নেতৃত্ব চাই এবং যাদের ছাত্রত্ব রয়েছে তাদের দিয়েই নেতৃত্ব আসুক৷
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সহ সভাপতি ও মহানগর ছাত্রদলের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আকিরুল ইসলাম চৌধুরী জিসান বলেন, আমরা তরুন ছাত্র নেতৃত্ব চাই এবং যারা প্রকৃত ছাত্র তারাই কমিটিতে আসুক৷
সিলেট মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজহার আলী অনিক বলেন, যে সকল নেতাকর্মীরা বিগত আন্দোলন, সংগ্রামে পরিক্ষীত নেতৃত্ব ছিল তাদের মূল্যায়ন হউক।
মহানগর ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক রুবেল ইসলাম বলেন, আমরা সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের নতুন নেতৃত্ব চাই৷ আশা করি ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ লস্কর মুনিম বলেন, ২বছরের কমিটির মেয়াদ ৭বছর হতে চলছে। আমরা দ্রুত নতুন কমিটি গঠন হউক, এটা চাই।
বর্তমান কমিটি বাতিল করে নতুন করে সিলেটে ছাত্রদলের কমিটির বিষয়ে আলাপ করতে চাইলে সিলেট জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জুবের আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দিনার এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি৷ তবে মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি আহসান বলেন, আমরা চাই সিলেটে ছাত্রদলের নতুন নেতৃত্ব উঠে আসুক। আমরা চাইলেও কমিটি দিতে পারবো না, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহন করবে৷
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রাকিব আহমদ বলেন, আমরা ৫ই আগষ্ট গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ১৭বছর পরে শেখ হাসিনা বিতাড়িত করেছি। এই দীর্ঘ আন্দোলন ও সংগ্রামে নেতাকর্মীরা জীবনবাজি রেখে কাজ করে গেছেন৷ আমাদের অনেক ইউনিটের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে, এগুলো নিয়ে আমরা কাজ করতেছি।
জানা গেছে, বিগত ২০১৮ সালের ১৩ জুন সিলেট জেলা ও মহানগর আংশিক কমিটি ঘোষণার করা হয়। এরপর দীর্ঘ আড়াই বছর পরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল স্বাক্ষরিত ৩২১ সদস্যের জেলা ও ২৬৬ সদস্যের মহানগর কমিটির অনুমোদন দেন।
এই পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে আলতাফ হোসেন সুমনকে সভাপতি ও দেলোয়ার হোসেন দিনারকে সম্পাদক রেখে কেন্দ্রের অনুমোদিত জেলা ছাত্রদলের কমিটিতে সিনিয়র সহ সভাপতি পদে রাখা হয়েছে নজরুল ইসলামকে এবং সহ সভাপতি পদে আরো ২৩ জনকে রাখা হয়েছে। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে ৫৯ জন, সহ সাধারণ সম্পাদক পদে রাখা হয়েছে ৫২ জনকে। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আব্দুল মোতাকাব্বির চৌধুরী সাকিকে রেখে ৫৪ জনকে সহ সাংগঠনিক পদে, প্রচার সম্পাদকসহ বিভিন্ন সম্পাদকীয় পদে ৬৫ জন এবং ২৬৩ নম্বর থেকে ৩২১ পর্যন্ত ৫৮ জনকে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সদস্য পদে রাখা হয়। বিগত ২০২৩ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদপ্রার্থী হলে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আলতাফ হোসেন সুমন কে বহিস্কৃত করা এবং পরবর্তী সময়ে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব লাভ করেন সহ সভাপতি জুবের আহমদ।
এদিকে একই দিনে অনুমোদন পাওয়া মহানগর ছাত্রদলের কমিটিতে সুদীপ জ্যোতি এষকে সভাপতি ও ফজলে রাব্বি আহসানকে সাধারণ সম্পাদক পদে রেখে সিনিয়র সহ সভাপতি করা হয়েছে তোফায়েল আহমদকে। এই কমিটিতে সহ সভাপতি পদে ১৯ জন, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক পদে হোসাইন আহমদকে রেখে যুগ্ম সম্পাদক পদে ৫২ জন, সহ সম্পাদক পদে ৩১ জন, সাংগঠনিক সম্পাদক পদে রুবেল আহমদকে রেখে সহ সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ৫৪ জন, প্রচার সম্পাদকসহ বিভিন্ন সম্পাদকীয় পদে ৫৮ জন, ২২৩ থেকে ২৬৬ পর্যন্ত ৪৪জনকে কমিটিতে সদস্য হিসেবে রাখা হয়