মাহফুজ আনাম গণতন্ত্র ধ্বংসের কুশীলবদের অন্যতম হোতা

ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামকে ‘ওয়ান ইলেভেনের গণতন্ত্র ধ্বংসের প্রধান কুশীলবদের অন্যতম হোতা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী

শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

‘আফটার থার্টি ইয়ার্স অব অটোক্রেসিস ডিমাইস, ডেমোক্রেসি স্টিল রিমেইনস এ ডিস্ট্যান্ট ড্রিম’ শিরোনামে গত ১৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবসে ডেইলি স্টারে মাহফুজ আনামের নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।

মাহফুজ আনামের লেখার সমালোচনা করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপি এবং সর্বাধিক ভোটে নির্বাচিত চারবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নির্জলা মিথ্যাচার, বিভ্রান্তিকর তথ্য, অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও অসংলগ্ন মতামত। ওয়ান ইলেভেনের গণতন্ত্র ধ্বংসের প্রধান কুশীলবদের অন্যতম হোতা এবং সেনা সমর্থিত মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দিনের প্রতিনিধি হিসাবে পরিচিত মাহফুজ আনামের এই নিবন্ধে বেগম জিয়াকে নিয়ে তিনি সরাসরি ও ইঙ্গিতে যে মন্তব্য করেছেন তাতে জনমনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।

‌‘গণতন্ত্রের কথা বলতে গিয়ে তিনি ইনিয়ে বিনিয়ে বারবার বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন। যা হলুদ সাংবাদিকতা ও বর্তমান মিডনাইট সরকারের নির্লজ্জ স্তুতিরই সমতুল্য। মাহফুজ আনাম ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা নিয়ে তার প্রবন্ধে যা লিখেছেন তা অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পারিষদবর্গের হাইপার-প্রোপাগান্ডা ও কলুষিত মিথ্যাচারের প্রতিধ্বনি মাত্র।’

তিনি বলেন, মিথ্যা বানোয়াট গল্প সাজিয়ে সংবাদ পরিবেশনের দায়ে বার বার ক্ষমা চেয়ে এখন সরকারের কাছে সাধু সাজার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন তিনি। তার লেখালেখির ভিশন-মিশন হলো বিএনপির বিরুদ্ধে বানোয়াট ও ভিত্তিহীন কাহিনী রচনা করে তা প্রকাশ করা। ভয়ে হোক বা উচ্ছিষ্ট ভোগিচ্ছায় হোক গণতন্ত্রহীন ও বেপরোয়া আচরণে লিপ্ত আওয়ামী লীগ সরকারকে খুশী করাই এখন তার আরাধ্য। মাহফুজ আনাম এখন আওয়ামী নব্য নাৎসিবাদের উপাসকে পরিণত হয়েছেন।

রিজভী বলেন, স্বচ্ছ সাংবাদিকতা নয়, বিদেশী অর্থদাতা প্রভু ও দেশীয় গোয়েন্দাদের এজেন্ট হিসেবেই কাজ করেছেন মাহফুজ আনাম। মাহফুজ আনামদের বাংলাদেশে গণতন্ত্র ধ্বংস এবং ফ্যাসিবাদের উত্থানে ভূমিকা ও অপতৎপরতা কলঙ্কিত ইতিহাস হয়ে থাকবে। বিএনপি বিপুল বিজয়ে ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর গণতন্ত্রের পথ রুদ্ধ করে গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যার মাধ্যমে অসাংবিধানিক শাসন কায়েম করার নীলনকশা বাস্তবায়নে কাজ শুরু করে এই মাহফুজ সাহেবরা।

‘২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি অবৈধ ক্ষমতা গ্রহণকারীদের মাধ্যমে সুশীল সমাজের কিছু ব্যক্তি তাদের প্রথম লক্ষ্য হাসিল করে। সেই লক্ষ্য হাসিলে পুরোধা ছিলেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম। ফখরুদ্দীন আহমদের সরকার নিয়ে সেদিন তিনি উল্লাস করেছিলেন। এ সরকার আনার পেছনে নিজের কৃতিত্ব নিয়ে সগর্বে কলাম লিখেছিলেন-‘দুই নেত্রীকে বিদায় নিতে হবে’। ডেইলি স্টার গ্রুপের পত্রিকায় গণতান্ত্রিক সরকারের পরিবর্তে সেনা সমর্থিত অগণতান্ত্রিক, একনায়কতান্ত্রিক স্বৈরশাসনকে স্বাগত জানিয়ে প্রকাশ করা হয়েছিল একটির পর একটি নিবন্ধ। পুরো সময়টা তারা গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থাকে শুধুই গালমন্দ করে মনগড়া নিবন্ধ লিখে গেছেন।’

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, মাইনাস ফর্মুলায় রাজনীতি শূন্য করতে মাহফুজ আনাম মিথ্যা, অসত্য ও ভিত্তিহীন সংবাদ পরিবেশন করে রাজনীতিকদের গ্রেপ্তারের পটভূমি রচনার ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। তৎকালীন অবৈধ সরকার গণমানুষের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে এক বছরের বেশী সময় কারাবন্দী করে রাখে। এদেশের সর্বস্তরের মানুষের প্রাণপ্রিয় নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে হত্যাচেষ্টা করেছে। নির্যাতনের মাধ্যমে তাকে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। আজও তিনি পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি। এর জন্য দায়ী ওয়ান ইলেভেনের কুশীলবরা।

‘মাহফুজ আনামদের চোখে সব দোষ রাজনীতিকদের। রাজনীতিবিদরা সবাই যেন চাঁদাবাজ-চোর। তারাই কেবল অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মনগড়া অভিযোগ এনে ওই পত্রিকায় তালিকাও ছাপা হয়েছিল। আর জেলে ঢোকানো হয় দেড় শতাধিক নেতাকে। রাজনৈতিক নেতাদের স্ত্রী সন্তানদের পর্যন্ত ধরে নিয়ে জেলে ঢোকানো হয়।’

রিজভী বলেন, ওয়ান ইলেভেনের অন্যতম কুশীলব মাহফুজ আনাম মুখে গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলে চিৎকার করলেও তিনি আপন স্বার্থসিদ্ধির জন্য গণতন্ত্র হন্তারকদের নাটের গুরু, ফ্যাসিবাদের তল্পিবাহক। আর পৃথিবীতে বিচিত্র ও বহুরূপী মানুষরা নানা ঘটনার সাথে যে যুক্ত থাকে মাহফুজ আনাম সাহেবরা তার প্রমাণ। মাহফুজ আনামদের সাংবাদিকতা বস্তুনিষ্ঠতার জন্য, নাকি মুখোশ সেটি এখন জনমনে বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।

তিনি বলেন, মাহফুজ আনামের নামে প্রতিটি জেলায় মামলা হয়েছে। জাতীয় সংসদে তার বিচার এবং ডেইলি স্টার বন্ধের দাবি ওঠে। তবে সারাদেশে মামলার পর বদলে গেছেন মাহফুজ সাহেব। মাহফুজ আনামের অপরাধ রাষ্ট্রদ্রোহের সমতুল্য। কারণ তিনি নিজে একটি অসাংবিধানিক সরকারকে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন অথবা গোয়েন্দাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সংবাদ প্রকাশ করে অসাংবিধানিক একটি গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চেয়েছেন অথবা তাদের ইচ্ছেকে সমর্থন যুগিয়েছেন। এক্ষেত্রে সম্পাদক জার্নালিজমের এথিকসের ধার ধারেননি।

‘মাহফুজ আনাম পেপার ট্রায়াল করেছেন। আমরা মাহফুজ আনামের ফরমায়েশি, অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একদেশদর্শী এই প্রবন্ধে ২১ আগস্ট ও বেগম জিয়াকে নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন সেটি ঘৃণ্যভরে প্রত্যাখ্যান করছি।’

আরো পড়ুন